Boycott Trend: এখন তো সত্যজিৎ ‘গণশত্রু’ বানাতেও বেগ পেতেন! বহিরাগত বয়কটে সরব টলিউড
Boycott Trend: বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ছবি তৈরি করেছেন বাংলার প্রখ্যাত পরিচালকেরা। সমাজের ধর্মীয় কুসংংস্কারের বিরুদ্ধেও বিশ্বখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় তৈরি করেছেন ‘গণশত্রু’, ‘অশনি সংকেত’-এর মতো ছবি। সেই ছবি সাদরে গ্রহণ করেছে বাঙালি দর্শক। তাহলে বর্তমানে কীভাবে এত বদলে গেলেন বাঙালি দর্শকেরা? তাহলে কী এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘গণশত্রু’র মতো ছবি বানাতেও বেগ পেতেন সত্যজিৎ রায়?
Boycott Trend, সৌমিতা মুখোপাধ্যায় ও রণিতা গোস্বামী: বলিউডের পর এবার ধর্মের নামে কলুষিত হচ্ছে টলিউড। শুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে একের পর এক বাংলা ছবি বয়কটের ডাক দিচ্ছে নেটপাড়ার একাংশ। প্রথম থেকেই এই বয়কট ‘রাজনীতি’র শিকার হয়েছিল রাজ চক্রবর্তীর ‘ধর্মযুদ্ধ’, এরপরই কোপে পড়ে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের ছবি ‘বিসমিল্লাহ’। এই বয়কটের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন রাজ ও বিসমিল্লাহ ছবির মুখ্য অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। বয়কট করার আগে রাজ সবাইকে ছবি দেখার আবেদনও করেছেন। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ছবি তৈরি করেছেন বাংলার প্রখ্যাত পরিচালকেরা। সমাজের ধর্মীয় কুসংংস্কারের বিরুদ্ধেও বিশ্বখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় তৈরি করেছেন ‘গণশত্রু’, ‘অশনি সংকেত’-এর মতো ছবি। সেই ছবি সাদরে গ্রহণ করেছে বাঙালি দর্শক। তাহলে বর্তমানে কীভাবে এত বদলে গেলেন বাঙালি দর্শকেরা? তাহলে কী এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘গণশত্রু’র মতো ছবি বানাতেও বেগ পেতেন সত্যজিৎ রায়?
আরও পড়ুন: KK Birth Anniversary: ‘তোমাকে ভীষণ মিস করি’, কেকে-র জন্মদিনে আবেগঘন পোস্ট স্ত্রী জ্যোতির
জীতু কমল: এই সময় রিলিজ হলে সত্যজিৎ রায়ের গণশত্রু কেন, অশনি সংকেত চালাতেও হয়তো বেগ পেতে হত। আমি এই বয়কট ট্রেন্ড থেকে বিমুখ হয়ে আছি। আমি একদমই পছন্দ করি না। কোনও ছবিই বয়কটের পক্ষে আমি নই। সেন্সর বলে তো একটা বস্তু আছে। একটা ছবি যখন সেন্সর থেকে ছাড়পত্র পাচ্ছে, সেটা সেন্ট্রালের সরকারের গঠন করা একটা বোর্ড, সেখানে সব রাজ্যের প্রতিনিধিরা থাকেন যাঁরা সিনেমাবোদ্ধা। সেই সেম্সর অমান্য করার শিক্ষা কোথা থেকে আসছে। এটার দায় শিক্ষাব্যবস্থার। ভটভটি হল পায় না, অপরাজিত নন্দনে জায়গা পায় না, এগুলো হবে কেন? বয়কট প্রসঙ্গ উঠবে কেন? তাহলে তুমি সেন্সর থেকে ছাড়ছ কেন? সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে গেছে ক্ষোভ উগরানোর জায়গা। ছবিটা দেখো, তারপর মতামত দাও। তোমার ভালো না লাগলে দেখো না, কিন্তু অন্যকে কেন দেখতে বারণ করবে? আমাদের সব স্বাধীনতাই খর্ব হয়েছে। আমি কী করছি, কী খাচ্ছি, অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, কোথায় যাচ্ছি সব নজরাধীন। চোর ধরার নাম করে সঠিক মানুষদের ধরা হয়। চোররা রাস্তায় ঘুরছে। বিজেপি আইটি সেল হোক বা তৃণমূল, কেউ মানুষের জন্য কাজ করে না। মানুষ হিসাবে অসহায় লাগছে।
আরও পড়ুন: Dharmajuddha: ‘ধর্মযুদ্ধ’ বয়কটের ডাক, নন্দনে বিজেপি বিধায়কদের জন্য বিশেষ শোয়ের আয়োজন রাজের
রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়: বয়কট জিনিসটা খুবই অগণতান্ত্রিক ও বোকা বোকা লাগছে। এভাবে কিছু হয় না, হবেও না। বাংলায় এই বয়কট ট্রেন্ড খুব একটা দেখছি না। যদি কোনও সিনেমা চলার হয় তাহলে ঠিকই চলবে।
শ্রীলেখা মিত্র: আমি কখনই এই বয়কট কালচারকে সাপোর্ট করি না। এই যে সবাই এত হুজুগে চলে। কেউ একজন ঠিক করে দিল আর সেই হাওয়ায় সবাই চলছে। একজন শিল্পী তাঁর মতো করে তৈরি করতে পারে। সেটা ধর্ম নিরপেক্ষ কিনা সেটা দেখে বিচার করুক। কাশ্মীর ফাইলস দেখে লোকে বিচার করেছে। সব ছবি যে বিশেষ বার্তা দেবে তা নয়। কিন্তু এই যে কেউ বয়কটের ডাক দিলো আর তার অপছন্দের লোকেরা সেই স্রোতে গা ভাসাল এটা ঠিক নয়। ইন্ডাস্ট্রির অনেককেই আমার অপছন্দ কিন্তু তার সঙ্গে তাঁদের আর্টফর্মের যোগ নেই। কাউকে পছন্দ না হলে তাঁর ছবি দেখব না, এটা সমর্থনযোগ্য। আমরা গোটা রাজ্যে সবাই অস্থির। আমরা কেউ এখন শান্ত নই। কোনও ছবিকে কনস্ট্রাকটিভভাবে সমালোচনা করা হয় না। ছবি না ভালো লাগলেও বেরিয়ে বলে ভালো লেগেছে। এটা একটা সার্বিক অবক্ষয়।
রাজ চক্রবর্তী: প্রথমত সব জায়গায় রাজনীতি ঢুকিয়ে দেওয়া উচিত নয়। রাজনীতি রাজনীতির থাকলেই ভালো। বিজেপির আইটি সেল এই ট্রেন্ড তৈরি করার চেষ্টা করছে। এদের আমি এক কথায় বলি এরা ফ্যাতারু। আসলে বিজেপি আইটি সেলে এদের পয়সা দেওয়া হয়, পোস্ট প্রতি এরা পয়সা পায়। এরা সিনেমা দেখে না, গান শোনে না। আমি এদের ‘ধর্মযুদ্ধ’ দেখতে বলেছিলাম, কিন্তু এরা কোনও সিনেমা দেখায় ইন্টারেস্টেড নয় যে সিনেমাটার ভেতরে কী আছে? এদের এত গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। এরা যেটা করছে সেটা খুব খারাপ। ওরা এই সেক্টরটাকে কন্ট্রোল করতে চাইছে। সকলের মাথায় বসিয়ে দিতে চাইছে যে এরপর যদি কোনও সাধারণ মানুষ ছবি বানাতে চায় তাহলে সে ভাববে যে কোন বিষয়ে ছবি বানাবো তা আবার বয়কট করা হবে না তো? এরা এই বিষয়টা কন্ট্রোল করতে চায়। ধর্মের নামে দেশ ভাগ হতে পারে, কিন্তু গান বা সিনেমা ভাগ হতে পারে না।