কলকাতাতেই প্রেম, জেনিফারের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন শশী কাপুর

১৯৫৭ সালে সিঙ্গাপুরে শো করতে গিয়ে তাঁরা একে অপরের কাছাকাছি আসেন। যদিও প্রথমে তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিতে চাননি জেনিফারের বাবা জিওফ্রে। পরে অবশ্য শশী কাপুরের বৌদি গীতা বালির (শাশ্মী কাপুরের স্ত্রী) সাহায্যেই ১৯৫৮ সালে বিয়ে করন শশী কাপুর ও জেনিফার কেন্ডাল। 

Updated By: Dec 5, 2017, 05:52 PM IST
কলকাতাতেই প্রেম, জেনিফারের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন শশী কাপুর

নিজস্ব প্রতিবেদন : অভিনয়ই ছিল তাঁর জগত ও জীবন। আর সেই অভিনয়কে ভালোবেসেই কাপুর পরিবারের গ্ল্যামার ছেড়ে দক্ষ অভিনেতা হয়ে উঠেছিলেন শশী কাপুর। পৃথ্বীরাজ কাপুরের কনিষ্ঠ সন্তান এবং রাজ কাপুর, শাশ্মী কাপুরের ভাই তিনি।  যদিও শশী নয়, তাঁর আসল নাম বলবীর রাজ কাপুর, তবে শশী নামেই তাঁর পরিচিতি। ৭ এর দশকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা তিনি। তবে বলিউডের চিরাচরিত রোম্যান্টিক হিরো নয়, অন্যধারার অভিনয়ের জন্যই বরাবর আলোচনায় উঠে এসেছেন শশী।  'বোম্বে টকিজ', 'শেক্সপীয়রওয়ালা', 'জুনুন', 'আওয়ারা'-র মতো সিনেমায় নজর কেড়েছিলেন। ফিল্মে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন থিয়েটারের সঙ্গেও। যে থিয়েটারই তাঁর জীবনে প্রেম এনে দিয়েছিল। ব্রিটিশ অভিনেত্রী জেনিফার কেন্ডালকে বিয়ে করেন তিনি। শশী কাপুরের প্রয়াণে নতুন করে উঠে আসছে জেনিফার কেন্ডালের সঙ্গে তাঁর প্রেম। 

জেনিফার কেন্ডাল বা জেনিফার কাপুর। সালটা ১৯৫৬। পাঁচের দশকে অভিনয়ের উৎস সন্ধানে থিয়েটারে যোগ দিতে চলে আসেন কলকাতায়। জিওফ্রে কেন্ডাল তখন শেক্সপিয়ারিয়ানা দল নিয়ে কলকাতায়। সেই দলের প্রধান অভিনেত্রী ছিলেন জিওফ্রে মেয়ে জেনিফার। শশী কাপুরও কাজ শুরু করেন শেক্সপীয়ারিয়ানা দলের সঙ্গে। আর সেই থিয়েটারের দলে কাজ করতে করতে একে অপরের প্রেমে পড়েন জেনিফার ও শশী। এরপর ১৯৫৭ সালে সিঙ্গাপুরে শো করতে গিয়ে তাঁরা একে অপরের কাছাকাছি আসেন। যদিও প্রথমে তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিতে চাননি জেনিফারের বাবা জিওফ্রে। পরে অবশ্য শশী কাপুরের বৌদি গীতা বালির (শাশ্মী কাপুরের স্ত্রী) সাহায্যেই ১৯৫৮ সালে বিয়ে করন শশী কাপুর ও জেনিফার কেন্ডাল। 

প্রবীণ অভিনেতার মৃত্যুর পর, মিড-ডেকে কাপুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়র সাক্ষাৎকারে শশী কাপুরের পারিবারিক জীবন। তিনি জানিয়েছেন, অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও পরিবারকেও আলাদা করে সময় দিতেন শশী। রবিবার দিনটা থাকত শুধুই পরিবারের জন্য। রবিবার থাকত বিশেষ খাবারের মেনু। আর শশী কাপুরের এই শৃঙ্খলাপরান জীবন অবশ্য জেনিফারের জন্যই গড়ে উঠেছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রত্যেকদিন সকাল সাতটার ব্রেকফাস্টে শশীকে ১ কাপ কফি ও দুটো বাটার ছাড়া পাঁউরুটি খেতেই অনুমতি দিতেন জেনিফার। আর এসসবই তাঁর স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই। 

তবে জেনিফার ও শশী কাপুরের সুখের দাম্পত্যজীবনে আঘাত আসে ১৯৮৪ সালে ক্যান্সার আক্রান্ত জেনিফারের মৃত্যুতে। কাপুর পরিবারের আত্মীয় রিঙ্কি রায় ভট্টাচার্য মিড-ডেকে জানিয়েছেন জেনিফারের মৃত্যুতে ভীষণ ভেঙে পরেছিলেন শশী কাপুর। কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। এমকী জেনিফারের চলে যাওয়ার কিছুদিন পরেই তাঁদের মেয়ে সঞ্জনার বিয়ের ঠিক হয়। সেদিন নাকি জেনিফারকে ভীষণ ভাবে মনে পড়ছিল শশী কাপুরের। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর সঞ্জনা ও তাঁর হবু স্বামী আদিত্যকে ডেকে অভিনেতা জানান, মাত্র ১০০ জনের বেশি যেন কাউকে আমন্ত্রণ জানানো না হয়। সেকথা শুনে তিনি ভীষণই অবাক হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন মিসেস রিঙ্গি রায় ভট্টাচার্য। 

জেনিফারের সহায়তাতেই ১৯৭৮ সালে মুম্বইয়ে পৃথ্বী থিয়েটারের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শশী কাপুর।  তাঁর সঙ্গে বেশকিছু ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন জেনিফার। যে শশী কাপুরের জীবনে অভিনয়ই সব ছিল, জেনিফারের মৃত্যুর পর সেই তিনিই অভিনয় থেকে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন। অভিনয় জগতে  ক্রমশ অনিয়মিত হয়ে পড়েন। দীর্ঘ ২০ বছর আর 'দাদাসাহেব ফালকে' পুরস্কার জয়ী অভিনেতাকে। 

আরও পড়ুন- শেষ যাত্রায় শশী কাপুর, শ্রদ্ধা জানাতে হাজির বলিউড

.