'মাসিক' শব্দে মায়ের অস্বস্তি, ট্যাবু ভাঙতেই বড় সিদ্ধান্ত সোহমের
কবীর সিংয়ের পর ব্রহ্মা জানেন-এও দেখা যাবে সোহম মজুমদারকে
শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায়
সোহম মজুমদার। কলকাতার ছেলে। শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে তাঁর দ্বিতীয় বাংলা ছবি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’। তাঁর ‘ক্লেম টু ফেম’ অবশ্য বলিউডে। সন্দীপ সিং বাঙ্গার বিতর্কিত হিন্দি ছবি ‘কবীর সিং’য়ে তিনি শাহিদ কাপুরের বেস্ট ফ্রেন্ড।
প্রতিবেদক - পরপর সচেতনতামূলক ছবিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ছবি তো পরিচালকের। অভিনেতা তাঁর মত অনুয়ায়ী চলতে বাধ্য।কীভাবে চিত্রনাট্য বেছে নেন?
সোহম – ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’র চিত্রনাট্য হাতে পাওয়ার পর, আমি বাড়ির সকলকে নিয়ে এটা পড়তে বসি। আমার এটাই অভ্যেস। যখন কোনও চিত্রনাট্য পাই, তখন আগে বাড়ির সকলকে সেটা পড়ে শোনাই। ফার্স্ট হ্যান্ড রিয়্যাকশনটা ওখান থেকেই পাই। ‘ব্রহ্মা যাবেন গোপন কম্মটি’ যখন বাড়িতে পড়ে শোনাচ্ছি, তখন ‘মাসিক’ শব্দটি যতবার উচ্চারণ হয়েছে, দেখি আমার মা বারবার ঘর থেকে উঠে বেরিয়ে যাচ্ছেন। মায়ের এই অস্বস্তিটাই আমাকে এই ছবিটা করতে এগিয়ে দেয়। আমাদের দেশের মেয়েদের কাছে এটা এখনও এত বড় ট্যাবু, স্বাস্থ্যসচেতনতার বোধের পাশাপাশি কিছু ভুল ধারণা ভাঙাটা খুব জরুরি।
প্রতিবেদক – কিন্তু এই ধরণের ছবি করতে গিয়ে তো মুশকিলেও পড়তে পারেন। বিশেষত, ‘কবীর সিং’য়ের পর। ভালবাসার প্রকাশ থাপ্পড় হতে পারে কিনা, তাই নিয়ে তো বিশাল বিতর্ক দেশজুড়ে। আপনি চান বা না চান, আপনি নিজেও তো সেই বিতর্ক থেকে বাদ যেতে পারেন নি!
সোহম – দেখুন, যে কোনও ছবিই পরিচালকের। আমরা কেবন অভিনেতা হিসাবেই তাঁর ছবির অংশ। এমন নয় য়ে, ছবির সব ডিটেল সব অভিনেতার কাছে থাকে। আমরা কেবল আমাদের দৃশ্যগুলোই সংলাপ আকারে পেয়ে থাকি। এক্ষেত্রে যদিও ছবির গল্প আমি জানতাম। তবে 'কবীর সিং' মুক্তি পাওয়ার পর পরিচালক যা বলেছেন, আমি তাঁর সঙ্গে একেবারেই একমত নই।
প্রতিবেদক – কিন্তু ভালবাসার প্রকাশ থাপ্পড় হতে পারে, এ বিষয়ে পরিচালকের মত নিয়ে আপনি কী বলবেন?
সোহম – আমি একেবারেই সহমত নই। সন্দীপ তাঁর নিজের মত জানিয়েছিলেন। আমি তার তীব্র বিরোধিতা করি। কোনওভাবেই কোনও ভালবাসার সম্পর্কের ভিত হিংসার মাধ্যমে হতে পারে না। কোনও সম্পর্কেই মারধর হওয়া উচিত নয়, ভালবাসায় তো কখনই নয়। ভালবাসার সম্পর্কে দুজন দুজনের পাশে দাঁড়াবেন, সেটাই স্বাভাবিক। ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’র কথাই যদি বলেন, সেখানে মনের নানা সংকীর্ণতাকে দূর করে স্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোটাই আমার চরিত্র। সেখানেই চরিত্রের উত্তরণ, তাই আমার ধারণা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছবি হতে চলেছে এটি।
প্রতিবেদক – পরিচালক নন্দিতা রায়- শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
সোহম – নন্দিতাদি-শিবুদার ‘ইচ্ছে’ যখন রিলিজ করে, আমি তখন স্কুলে পড়ি। সেই ছবি দেখে এত অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম যে, আমার বয়ঃসন্ধির সময়টাই বদলে গিয়েছিল। তাই এই অফারটা পেয়ে দ্বিতীয়বার ভাবিনি। মহিলারা সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারবেন না, মেয়েদের বাবা-মা ইচ্ছে না থাকলেও সমাজের চাপে কন্যা-সম্প্রদান করতে বাধ্য হন, মেয়েদের পিরিয়ডস নিয়ে সামাজিক বাধা-নিষেধ এমন অনেকগুলো বিষয় জড়িয়ে আছে ছবিটার সঙ্গে। এমন প্রজেক্টের অংশ হতে পারাটাই বড় সুযোগ। তারপর কেমন কাজ করেছি, তা দর্শক বলবেন ৬ মার্চ ছবি দেখে।