''বিয়ের কথা না হলেও, আমি সুশান্তের সন্তানের মা হতে চেয়েছিলাম'', দাবি রিয়ার
রিয়ার কথায়, সুশান্তই তাঁকে বলেন, ''আমাদের সম্পর্ক ঠিক কী ছিল, আর কী আছে সেটা প্রকাশ্যে আনতে।''
নিজস্ব প্রতিবেদন : সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনায় তিনিই মূল অভিযুক্ত। এক কথায় বলতে গেলে গোটা দেশে এখন তিনিই 'মোস্ট ওয়ান্টেড'। তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ, তবে এতদিন চুপই ছিলেন রিয়া চক্রবর্তী। সম্প্রতি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছেন তিনি।
এর আগে সুশান্তের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে কোনওদিনই কিছু বলেননি রিয়া। এমনকি একসময় সুশান্তের সঙ্গে সম্পর্কের কথা অস্বীকারও করেছিলেন। তবে এবার তিনি মুখ খুলেছেন। এতদিন চুপ থাকার পর কেন কথা বলছেন? এপ্রশ্নের উত্তরে রিয়ার দাবি, সুশান্ত তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন। সুশান্তই তাঁকে বলেছেন, সকলের সামনে সত্যিটা বলতে। রিয়ার কথায়, সুশান্ত তাঁকে বলেন, ''আমাদের সম্পর্ক ঠিক কী ছিল, আর কী আছে সেটা প্রকাশ্যে আনতে।''
রিয়ার কথায়, সুশান্তের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব বহু দিনের। ''২০১৩ সালে যশরাজ স্টুডিওতেই আমাদের আলাপ। সেসময় আমার প্রথম ছবি মুক্তি পেয়ে গিয়েছিল, আর সুশান্তের 'কাই পো চে' মুক্তির কথা চলছিল। সেসময়ও আমাদের একই ম্যানেজার ছিল। তারপর একদিন জিমে দেখা হল। পরে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা হত। আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম, বছরে একবার দেখা হলেও সব কথা বলতাম। কী চলছে, কী সমস্যা সবই শেয়ার করতাম। তখনই আমার ওকে অন্যরকম লেগেছিল, মনে হয়েছিল ওর সঙ্গে একদিন বসে অনেক কথা বলতে হবে। এরপরে ২০১৯-এর ১৩ এপ্রিল সুশান্ত ও আমার দেখা হয়েছিল রোহিনী আইয়ারের পার্টিতে। সেখান থেকেই সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। সুশান্ত তো বলেছিল একদিনেই আমায় ভালোবেসে ফেলেছে। আমি ২-৩ মাস সময় চেয়ে নিয়েছিলাম। I Love You শব্দটা অনেক বড় শব্দ। তখন কী আর জানতাম এত বড় শাস্তি পেতে হবে!''
সুশান্তের সঙ্গে বিয়ের কথা হয়েছিল কিনা এপ্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে রিয়া বলেন, ''সুশান্ত ও আমি কখনও বিয়ের কথা সরাসরি বলিনি। তবে হ্যাঁ, সুশান্তের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকদিন চলেছিল, এখন মনে হচ্ছে পরের জন্মেও চলবে। আমি সুশান্তকে সবসময় বলতাম, আমার একটা ছোট্ট সুশান্ত চাই, ছোট্ট সুশি, একেবারেই ওর মতো দেখতে। এটা আমাদের খুবই ব্যক্তিগত স্তরে এমন মজা চলত। দম্পতির মতোই এধরনের কথা হতো আমাদের।''
সুশান্তের কোন জিনিসটা পছন্দ ছিল প্রশ্ন রিয়া বলেন, ''কোনটা নয়? ওর মতো সৎ মানুষ আমি খুবই কম দেখেছি।'' সাক্ষাৎকারে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলতেও দেখা যায় রিয়াকে। সুশান্ত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে কর্ণটকের কুর্গে গিয়ে চাষাবাদ করতে চেয়েছিলেন, সেখানে সাধারণভাবেই জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন। একথাও জানান রিয়া। এদিন সুশান্তকে ফের একবার 'বাইপোলার ডিসঅর্ডার'-এ আক্রান্ত ছিলেন বলে দাবি করেন রিয়া। তাঁর কথায় সুশান্ত অবসাদে ভুগছিলেন, কখনও ভালো থাকতেন, কখনও খারাপ। লকডাউনে এই সমস্যা বেশিই দেখা যাচ্ছিল। রিয়ার কথায় ৩ জুন আমি কেরসি ছাবরার সঙ্গে কথা বলি, ওনাকে সুশান্তের সঙ্গেও কথা বলতে বলি। ওইদিনই ওনাদের কথা হয়। কেরসি ছাবরা বলেন, সুশান্তের ওষুধ চালু করার প্রয়োজন রয়েছে।
রিয়ার দাবি, ''সুশান্ত আমার সম্পর্কে উদাসীন ব্যবহার করছিল, বারবার বলছিল বাড়ি যাও। কারণ, আমিও অসুস্থ বোধ করছিলাম, মানসিক সমস্যা হচ্ছিল আমারও। হতে পারে সেকারণেই ও আমায় বাড়ি যেতে বলছিল বারবার। ৮ জুন আমার একটা থেরিপি সেশন ছিল মনোবিদের সঙ্গে। আমি চেয়েছিলাম সুশান্তের ওখান থেকেই মনোবিদের সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু সুশান্ত আমায় আগেই চলে যেতে বলল। বলল ওর দিদি আসবে তাই আগেই যেতে হবে। তখন আমি বলেছিলাম, তোমার দিদি মীতু দি (মুম্বইয়ের গোরেগাও তে থাকেন) আসলে তবেই যাবো। সুশান্তের পরিবারের কেউ আমায় পছন্দ করতো না। সেটা এখন আরও ভালো সবাই বুঝতে পারছে। যদিও আমি ৮ তারিখ ওর দিদি যেদিন ওখানে গিয়েছিল, ওই দিনই বের হয়ে আসি।''
রিয়ার কথায়, সুশান্ত তাঁকে চলে যেতে বলেছিলেন, তাই তাঁর খারাপ লেগেছিল। তিনি আর ফিরতে চাননি। আমার মনে হয়েছিল, ''আমি যার পাশে থাকলাম, সে কেন আমার অসুস্থতায় পাশে থাকছে না?'' রিয়ার অভিযোগ, সুশান্ত যখন কুর্গ যেতে চাইছিল, বারবার ও নিজের পরিবারকে ফোন করে বলে আসতে, ওকে হেল্প করতে, অথচ কেউ আসেনি।