লভ-আজ কাল পরশু: স্বাদে-গন্ধে নতুন

 ‘লভ-আজ কাল পরশু’তে অর্জুন টলিউডে নায়ক চরিত্রে তাঁর আসন পাকা করলেন, সেটা বলাই যায়

Updated By: Feb 15, 2020, 04:30 PM IST
লভ-আজ কাল পরশু: স্বাদে-গন্ধে নতুন

শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায় 

পরিচালনাপ্রতীম ডি. গুপ্তা

অভিনয়েঅর্জুন চক্রবর্তী, মধুমিতা সরকার, পাওলি দাম, অনিন্দিতা বোস, অভিজিত গুহ, অনির্বাণ চক্রবর্তী

সঙ্গীত পরিচালনাঅরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

প্রায় একই নামের দুটো ছবি মুক্তি পেল একইদিনে। বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর মহান কর্তব্য নিয়ে প্রথমেই এই প্রতিবেদক গেলেন পরিচালক প্রতীম ডি.গুপ্তার ছবি ‘লভ-আজ কাল পরশু’ দেখতে। এবং ভাগ্যিস।প্রেমের ছবির স্টিরিওটাইপ ভেঙে একটা নতুন গল্প এঁকেছেন পরিচালক, যার স্বাদ আর গন্ধটাই নতুন। আর সেখানেই রোহিত শর্মা স্টাইলে বড় ছয় মেরেছেন পরিচালক।

‘লভ-আজ কাল পরশু’, বলা ভাল উলট প্রেমের গল্প। নায়ক-নায়িকা প্রেমে থাকবেন কিনা, তা ঠিক করবে রিয়্যালিটি শো। আর যেহেতু টিআরপি অতি বিষম বস্তু, তাই কালকি মৈত্র-র চালে তিনটে ভিন্ন চরিত্রে প্রেম চালিয়েই যেতে হয় নায়ক-নায়িকাকে। ছবিতে কালকির চরিত্রে পাওলি বেশ কিছু সিনে এমন হাড়হিম অভিনয় করেন যে, ভালবাসাও খানিক পিছুই হটে। ছবি দেখতে দেখতে দর্শকদের এও মনে হতে পারে, আসলে ‘ভালবাসার ভিতর একটা মিথ্যে আছে’।

অভিনয়ে অর্জুন চক্রবর্তী অনবদ্য। এমন কিছু ছোট ছোট ইমোশন তিনি এঁকেছেন, যা সিনেম্যাটিক অ্যকটিংকে কিছু নতুন দিল। ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’, ’ব্যোমকেশ গোত্র’, ’গুপ্তধনের সন্ধানে’ থেকে তাঁর অভিনয় নতুন করে দর্শকের প্রশংসা পাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু ‘লভ-আজ কাল পরশু’তে অর্জুন টলিউডে নায়ক চরিত্রে তাঁর আসন পাকা করলেন, সেটা বলাই যায়। তাঁর পাশে মধুমিতাকে বেশ খানিকটা দুর্বলই লেগেছে। একটা তরতাজা স্ক্রিন প্রেজেন্স এনেছেন বটে, কিন্তু বাংলায় অভিনেত্রীদের সঙ্গে টক্কর নিতে হলে, তাঁকে অনেক জোরদার হয়ে ফিরতে হবে। এ ছবির দুই উপভোগ্য অভিনয় এসেছে অভিজিত গুহ ও একেনবাবু খ্যাত অনির্বাণ চক্রবর্তীর কাছ থেকে। দুজনের টাইমিংই দৃশ্যগুলোকে উপভোগ্য করে তুলেছে।

ছবির গান ভাল। সঙ্গীত পরিচালক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় সুনামের সঙ্গেই কাজ করেছেন। এ ছবিতে ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে’ গেয়েছেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়।এই গান ছবির বাড়তি প্রাপ্তি। ছবির সবথেকে বড় কাণ্ডারী সিনেম্যাটোগ্রাফার শুভঙ্কর ভড়। প্রেমের গল্পে প্রায় প্রতিটি ফ্রেমেরই প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছেন শুভঙ্কর। সবথেকে বড় কথা নিজেকেই চ্যালেঞ্জ করছেন বারবার।কমফর্ট জোনে আটকে না পড়ে আলাদা আলাদা ছবিকে তার গল্প অনুযায়ী ডিজাইন করছেন, শুভঙ্করের সবথেকে বড় সাফল্য বোধকরি সেখানেই। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরে অভিজিত কুণ্ডুও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।

এবার আসা যাক পরিচালকের কথায়। সম্ভবত এই প্রথম প্রতীম সরলরেখায় গল্প বলেন নি। নতুন গল্পের পাশাপাশি একটা নতুন আঙ্গিকেও গল্পটা পেশ করেছেন তিনি। চিত্রনাট্যের ওই ‘টুইস্ট অ্যান্ড টার্ন’-এর জন্যই ‘লভ-আজ কাল পরশু’ বেশি উপভোগ্য। আজকের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে টেলিভিশনের রিয়্যালিটি শো, মুখ-মুখোশের খেলা, সত্যি-মিথ্যের দ্বন্দ্ব, বাস্তব-পরাবাস্তবের পরিমিত ইনপুটে বাংলা ছবির পলিমাটিতে জোর আঁচড় কেটেছেন প্রতীম। সবশেষে,বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যখন বাণিজ্যিক বাংলা ছবি বনাম কনটেন্টধর্মী ছবির দ্বন্দ্বে ভুগছে, ঠিক তখন প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফের এই ছবি প্রযোজনার সিদ্ধান্ত, বাংলা ছবির ক্ষেত্রে এক সাহসী পদক্ষেপ তো বটেই।

.