ভারতের রং, পাকিস্তানের জান, রঙ্গমঞ্চে সলমন

Updated By: Jul 21, 2015, 04:12 PM IST
ভারতের রং, পাকিস্তানের জান, রঙ্গমঞ্চে সলমন

শর্মিলা মাইতি

ছবির নাম-বজরঙ্গী ভাইজান

রেটিং- ****1/2

 
উপর-আল্লা বোধহয় ঠিক করেই ফেলেছিলেন, এবারও ঈদ হবে “সলমন মুবারক”! কাজেই বজরঙ্গি ভাইজান নিয়ে আবেগ উত্কণ্ঠা, বিতর্ক এবং অপেক্ষা, কোনওটারই কমতি ছিল না। এবং রিলিজের পরে, অবধারিত লিমকা বুক অফ রেকর্ডস। সলমন তো রেকর্ড গড়েন, শুধুই ভাঙার জন্য। কাজেই দিন মাস সময় বছরের সব হিসেব পাটকাঠির মতো মুটমুট করে ভেঙে পড়ল। তফাত্টা শুধু এটাই, এবার ঈদে সলমন খান কিন্তু চেনা ছকের বাইরে এলেন। দাবাং-এর পুলিশ অফিসার নন, নন এক থা টাইগার-এর র এজেন্টও। বজরঙ্গি ভাইজান এক্কেবারে আমজনতার প্রতিনিধি। কম আইকিউ-এর নিতান্ত সাধারণ ছেলে।

গল্পটিও সাদাসিধে, একেবারে পথের ধারে পড়ে থাকা কাহিনি। কিন্তু ছোট্ট গল্পটাই তিরের ফলার মতো চিরে দেখিয়ে দিল যে, ভারত ও পাকিস্তান, এই দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্কটা কতটা ভিত্তিহীন, আর আবেগের সম্পর্ক কতটা তীব্র। খুশির ঈদের সেরা মেসেজ!

ছবির প্রথম থেকেই চমক। ছ-বছরের বোবা মেয়ের চরিত্রে শিশু অভিনেতা হর্ষালি মালহোত্র। মায়ের সঙ্গে ট্রেনে চড়ে দিল্লি আসার পথেই ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। ট্রেন ছেড়ে চলে যায় বর্ডার পেরিয়ে পাকিস্তানে। অসম্ভব একটি নাটকীয় মুহূর্ত, শুধু অভিনয়ের গুণেই নয়, বেশ কয়েকটি মনে রাখার মতো ক্যামেরার শটও তৈরি করে দিল ছবির অনবদ্য প্রিলু্ড। তার পরেই, ভারতের বর্ডার পেরিয়ে গেরুয়া রঙবাহারে ইন্ট্রোডাকশন ছবির নায়ক সলমন খানের। নাম পবন কুমার চতুর্বেদী। পথ হারানো এই বোবা মেয়েটিকে আবার দেশকাল সীমানা পেরিয়ে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া অবধি, যে-সব পারিবারিক, সামাজিক, ও রাজনৈতিক ব্যারিকেড পেরিয়ে একটা প্রায় অসম্ভব কাজকে সম্ভব করতে হয়, সেটাই দেখালেন বজরঙ্গী ভাইজান।

দর্শকের সঙ্গে কানেক্ট করবে শুরু থেকেই। কারণ, গল্প বাস্তবসম্মত গতিতেই এগিয়েছে। হারিয়ে যাওয়া দুই দেশের ঐক্য আর বৈষম্য, দুটির উপাদানই যথেষ্ট পরিমাণে আছে। ছবির শুরু পাকিস্তানের প্রত্যন্ত গ্রামের এক পরিবারের ক্রিকেট ম্যাচ দেখার দৃশ্য দিয়ে। ক্রিকেটের অনুষঙ্গ বার বার ফিরে আসে ছবির বিভিন্ন টার্নিং পয়েন্টে। কিন্তু খুবই সূক্ষ্ম তার উপস্থিতি, চড়া দাগ কাটেনি কোথাও। ছবিতে আইডেনটিটি ক্রাইসিসের জায়গাগুলোয় ব্যবহার করা হয়েছে। দর্শক দেখলেই বুঝতে পারবেন।

অভিনেত্রী করিনাকে স্ক্রিনে দেখতে পাবেন কম, কিন্তু চরিত্রের ইমপ্যাক্টটা পাবেন সারা ছবি জুড়েই। বজরঙ্গী-র ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে কাজ করে এই চরিত্র। নাচ-গানের দৃশ্যগুলোর সিকোয়েন্স হঠাত্ উড়ে এসে জুড়ে বসে না। কাহিনির প্রয়োজনেই আসে। অন্য দুই জন, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি ও রাজেশ শর্মা। প্রথমজন পাকিস্তানি সাংবাদিক, দ্বিতীয়জন পাক পুলিশ অফিসার। কাহিনিতে মোচড় আনতে এঁদের ভূমিকা অনবদ্য। এই চরিত্র দুটোই অবশেষে মিশন সাকসেসফুল করছে। কীভাবে, সেটা নাহয় না-ই বলা হল, কিন্তু যেটা বলার, সলমন-ব্রিগেডের সঙ্গে নওয়াজউদ্দিনের সম্পর্কটা বেশ জলের মতো সহজ হয়ে গেছে। স্ক্রিনে পড়ছে তারই প্রতিফলন।

সলমন খান এবার প্রমাণ করলেন, লার্জার দ্যান লাইফ বাউন্ডারির বাইরে গিয়েও তিনি দিল জিততে পারেন। আবার একেবারে সাধারণ, ধর্মভিরু মানুষের চরিত্রেও বজায় রাখতে পারেন নিজের ম্যানারিজম। শিশু অভিনেত্রী হর্ষালির সঙ্গে যেমন স্নেহের কেমিস্ট্রিও জমিয়েছেন, তেমনি রাফ-অ্যান্ড-টাফ ইমেজটাও প্রয়োজনমাফিক বের করে আনতে পেরেছেন।

কিন্তু ওভারবাউন্ডারিটা হাঁকিয়েছেন পরিচালক কবীর খান। সুদূরবিস্তৃত মরু-বালিয়াড়িতে উট আরোহীরা আর ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে যাচ্ছে যাত্রীবাহী বাস, এই সিগনেচার শটটা এখানে আরও সুন্দর, তীব্র হয়েছে। কাঁটাতারের বর্ডার আর নোম্যান্স ল্যান্ডে যেভাবে ম্যান-ম্যানেজমেন্টের নজির দেখিয়েছেন তিনি, তা থেকে অনেক ফিল্ম ছাত্রই কিছু না কিছু শিখতে পারবেই।

একটা ছোট্ট গল্পের মাধ্যমে বিরাট ও জটিল একটা সমস্যার ছবি তুলে ধরা, এটাতেই সফল বজরঙ্গী ভাইজান। নিঃসন্দেহে, সলমন খানের জীবনের সেরা ছবির তালিকায় উপরের দিকে থাকবে। কেউ বা বলছেন, সেরাটাই দিয়েছেন। যাঁরা বিভিন্ন কারণে বার বার ছবিটা দেখেছেন, বিচারের ভার তাদের উপরেই ন্যস্ত হল।

 

.