নিজের বাড়ির নামের ফলকে 'মানসিক হাসপাতাল' লিখে রেখেছিলেন কিশোর কুমার!

আজ ৪ অগস্ট ৯০তম জন্মবার্ষিকীতেও সকলের মনে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। 

Updated By: Aug 4, 2019, 05:29 PM IST
নিজের বাড়ির নামের ফলকে 'মানসিক হাসপাতাল' লিখে রেখেছিলেন কিশোর কুমার!

নিজস্ব প্রতিবেদন: 'হয়তো আমাকে কারও মনে নেই, আমি যে ছিলাম এই গ্রামেতেই'। নাহ, মানুষ কিন্তু তাঁকে মনে রেখেছে, ভুলতে পারেনি। তিনি যে কিশোর কুমার। বাঙালি তথা সারা দেশের গর্ব। আজ ৪ অগস্ট ৯০তম জন্মবার্ষিকীতেও সকলের মনে তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। শুধু গানই নয়, অভিনয়েও নিজের ছাপ রেখে গিয়েছেন তিনি। প্রযোজক, পরিচালকের ভূমিকায়ও তাঁর অবদান রয়েছে। তবে এই কিংবদন্তি গায়কের সম্পর্কে এমন অনেক তথ্য রয়েছে, যা হয়ত অনেকেরই অজানা।

সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছিলেন কিশোর কুমার। এমনকি তিনি সত্যজিৎ রায়ের 'চারুলতা' ছবিতে গানও গেয়েছিলেন বিনা পারিশ্রমিকে। জানা যায়, 'চারুলতা' তৈরির সময় হাতে বিশেষ পুঁজি ছিল না মিস্টার রায়ের। আর কিশোর কুমার সেকথা জানতেন। তবে পরিচালকের মনে হয়েছিল কিশোর কুমার ছাড়া অন্য কোনও গায়কের গলাতেই ঠিক খাপ খাবে না তাঁর ছবির গান। তাই বাধ্য হয়েই কিশোরকে দিয়েই গান গাওয়ালেন সত্যজিৎ। গানের রেকর্ডিংয়ের পরে কিশোরকে ডেকে পাঠালেন পরিচালক। জিজ্ঞেস করলেন কত পারিশ্রমিক চান? সত্যজিৎ তো ভাবছেন নির্ঘাত একটা বড় অঙ্ক চেয়ে বসবেন গায়ক। কিশোর কুমার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। সত্যজিতের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে জানালেন তাঁর কোনও পারিশ্রমিক লাগবেনা।

আরও পড়ুন-'থ্রি ইডিয়টস'-এর কথাই মনে করাচ্ছে ছিছোড়ে'র ট্রেলার

সালটা ১৯৫৫। তৈরি হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী ছবি 'পথের পাঁচালি'। এদিকে টাকা বাড়ন্ত। কীভাবে শেষ করবেন ছবির কাজ? এগিয়ে এসেছিলেন সেই কিশোর কুমার। তখনকার সময়ে ৫০০০ টাকা দিয়ে উদ্ধার করলেন পরিচালককে। তারপরের গল্প সবারই জানা। সেই ছবির হাত ধরেই ১৯৯২ সালে অস্কার এসেছিল দেশে। 

কিশোরের অন্যতম জনপ্রিয় গান, 'পাঁচ রুপাইয়া বারা আনা'। কীভাবে এসেছিল এই গানের ভাবনা? আসলে গায়কের নিজের জীবনের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে এই গান। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর ইনদওর ক্রিশ্চিয়ান কলেজে ভর্তি হলেন কিশোর। কলেজ জীবনে তামাশা-কৌতুকে পারদর্শী ছিলেন তিনি। কলেজ ক্যান্টিনে ধার করা পাঁচ টাকা বারো পয়সা এখনও ধার হিসাবেই রয়ে গিয়েছে তাঁর। সেই থেকেই নাকি তিনি এই গান বানিয়ে ফেলেন তিনি।

আরো পড়ুন-উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর জন্য 'বাটলা হাউস' ছবির বিশেষ প্রদর্শন জন আব্রাহামের

ক্লাসে বসে বেঞ্চে তবলা বাজানো ছিল কিশোর কুমারের অত্যন্ত পছন্দের একটি বিষয়। শিক্ষকরা বিরক্ত হলে গায়ক নাকি হাসিমুখে উত্তর দিতেন, গানের মাধ্যমেই সারা জীবন অর্থ উপার্জন করতে চান তিনি। তাই এখন থেকেই অনুশীলন!

এত বড় একজন প্রতিভা। যাঁর গলায় আপনা থেকেই সুর আসে, তবে সেই তিনিই নাকি মঞ্চে গাইতে ভয় পেতেন বলে জানা যায়। একবার প্লেব্যাক সিঙ্গার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ঠিক হল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহ করা হবে। সব গায়কদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। কিশোর কুমারের 'মঞ্চপ্রীতি'র কথা জানতেন সকলেই। তাই গায়ক তালাত মেহমুদের উপর ভার দেওয়া হল কিশোরকে নিয়ে আসার। তো মেহমুদ ঠিক সময়ে হাজির হয়ে গিয়েছেন কিশোরের বাড়ির সামনে। গিয়ে দেখেন দরজা তালাবন্ধ, কিশোর গায়েব! শেষপর্যন্ত গায়কের এই ভয় দূর করলেন কে জানেন? অভিনেতা সুনীল দত্ত।

'খামখেয়ালী' বলেই পরিচিত ছিলেন কিশোর কুমার! যতক্ষণ না প্রযোজক পুরো টাকাটা দিতেন ততক্ষণ নিজের চুল ও গোঁফ ছাঁটতে থাকতেন তিনি। শোনা যায়, তিনি নাকি নিজের বাড়ির দরজায় সামনে একবার 'মানসিক হাসপাতাল' লিখে রেখেছিলেন।

আরও পড়ুন-মধুচন্দ্রিমার একান্ত মুহূর্তে নুসরত-নিখিল

কিশোর কুমার-অমিতাভ বচ্চন চিরস্মরণীয় জুটি। গান গাইতে গাইতে চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতেন কিশোর। 'খাইকে পান বানা রসওয়ালা' গাওয়ার সময় আস্ত একটা পানই মুখে পুরেই নাকি গান গেয়েছিলেন তিনি। স্থান-কাল ভুলে স্টুডিয়োর মধ্যেই পিক ফেলে সে এক কাণ্ড বাঁধিয়েছিলেন গায়ক!

জানা যায়, কিশোর কুমার ও তাঁর প্রথম স্ত্রী রুমা গুহ ঠাকুরতার সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই 'অভিমান' ছবিটি বানিয়েছিলেন পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কে এল সায়গল ও হলিউডের গায়ক তথা অভিনেতা ড্যানি ক্যায়ে-এর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন কিশোর। তাঁর গৌরীকুঞ্জের বাড়িতে এই তিনজনের ছবি টাঙানো থাকত। শোনা যায় প্রতিদিন নিয়ম করে তাঁদের প্রণাম করতেন কিশোর কুমার। প্রকৃতি ভালবাসতেন তিনি। কিশোর কুমার নাকি তাঁর বাগানের প্রত্যেকটি গাছের আলাদা নামকরণও করেছিলেন।  

আরও পড়ুন-শ্রেয়া ও লেডি গাগা ছাড়া কারও সঙ্গে গাইব না, মোনালিও না: নোবেল

.