Aindrila Sharma:বাঁধবে নতুন বাহু-ডোরে, আসব যাব চিরদিনের সেই আমি....
‘এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা তাঁকে ছাড়া’....
অনসূয়া বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ণ এই বাটে....আমি বাইবো না’-কিন্তু সত্যিই কী বাইছে না। আমাদের সকলের মধ্যে বাইছে, বয়ে চলেছে ঐন্দ্রিলা। আজ সারাদিন তাঁর কথাই সকলের মনে পড়ছে। তাঁর হাসি, তাঁর মিষ্টি কথা। হ্যাঁ আজ ঐন্দ্রিলার (Aindrila Sharma) জন্মদিন। প্রথমেই জানাই ওকে ‘শুভ জন্মদিন’। না আজও কেউ বিশ্বাস করতে রাজি নয় ও নেই, তাই ওকেই জানালাম। কারণ ও কোথাও যেতে পারেই না। ঠিক যেভাবে ওঁর মায়ের কাছে আছে, যেভাবে দিদির কাছে বোনু রয়েছে, যেভাবে সব্যর কাছে তাঁর ঐন্দ্রিলা রয়েছে, যেভাবে সব বন্ধুদের কাছে মিষ্টি রয়েছে, ঠিক সেইভাবেই সব সাংবাদিকদের কাছেও ও রয়েছে। জ্বলজ্বল করছে বহু অভিনেতা, মেকআপ আর্টিস্ট, স্টাইলিস্টের হোয়াটস অ্যাপ স্টেটাসে, আসলে তো সকলের হৃদয়ে।
ফুলের মতো ফুটফুটে মেয়ে, দেখতে তেমনই। তবে ভিতরটা ততটাই শক্ত। যাঁর জীবনবোধ দেখলে ভরে যায় মন-প্রাণ। ক্যান্সারের মত কঠিন রোগও যাকে কাবু করতে পারে নি সেই মেয়ে। না ওকে অতীত করতে মন চায় না। এই ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িয়ে রয়েছেন যাঁরা কেউই চান না ভাবতে যে ঐন্দ্রিলা আর নেই। তাই বারবার লিখছি ও আছে, ওর সৃষ্টিতে, ওর কাজে ও আছে। শেষ বার যখন শুনেছিলাম ও অসুস্থ, জানতাম ও ঠিক কামব্যাক করবে। ও তো ফাইটার। জীবন যুদ্ধে ও জিতে গিয়েছে বারবার, এই বারও জিতেই গেল, হারিয়ে গেল আমাদের। যাঁরা ওঁকে চিনতাম সেই সকলকে। ও রয়েছে আমাদের সকলের মধ্যে, সকলের মনে, স্মৃতিতে, উদাহরণে আবার বাস্তবেও। ওঁর জীবনবোধ বেঁচে থাকার প্রেরণা দিয়েছে কত না ক্যান্সার রোগীকে, ওঁর সাক্ষাতকার ছিল সকলের জন্য শিক্ষণীয়। না না কোনও জ্ঞান দিত না, অবলীলায় কয়েকটা কথা বলত। জীবনের কঠিন সত্য হলেও যা বলতে ভয় পায় অনেকেই, কিংবা বলেনা।
আরও পড়ুন: Akshay Kumar,Salman Khan: বলিউডের অক্কি-ভাইজানের যুগলবন্দী, চোখ সরাতে পারলেন না ফ্যানেরা
যেভাবে প্রথম দিন থেকে কখনও কারোর সিম্প্যাথিকে প্রশ্রয় দেয় নি, ঠিক সেইভাবেই নিজের জীবনশক্তি দিয়ে সকলকে মুগ্ধ করে রেখেছিল ঐন্দ্রিলা (Aindrila Sharma)। ওর সব্যর প্রোফাইলে চোখ রাখলেই মন ভাল হয়ে যেত। ঠিক যতটা কেয়ারিং সব্যসাচী তাঁর ঐন্দ্রিলার জন্য, ও ততটাই স্বাভাবিক। কারণ আর পাঁচটা মেয়ের মত ও সাধারণ জীবন বাঁচতে চেয়েছে। ভুলে যেতে চেয়েছে সব যন্ত্রণার কথা। নিজের মত করে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চেয়েছে বারবারৎ কারো ‘আহা-উহু’ নয়, বরং সকলের মুখে একগাল হাসি দেখতে চেয়েছে। বাবা চিকিত্সক, দিদিও চিকিত্সক, অনেকেই জিজ্ঞেস করত কী করছে ঐন্দ্রিলা। তাঁর উত্তর ছিল আমি আমার কেত নিয়েই আছি। সত্যিই তাই। ওই যে ওঁর ইচ্ছাশক্তি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই আজ ওঁর পুরোনো ভিডিয়ো আসছে, কখনও ঐন্দ্রিলা তাঁর রাজ দা -শুভশ্রী দির পাঠানো কেক কাটছে, কখনও বা অঙ্কুশ দা-ঐন্দ্রিলা দির পাঠানো কেক, আবার কখনও বোজো-তোজোর মা হয়ে কেক খাওয়াচ্ছে, কখনও ভিডিয়ো করার সময় সব্যকে ডেকে আদর করে কেক খাইয়ে দিচ্ছে। ঘুমোনোর পোশাকেই নাচছে সব্যর (Sabyasachi Chowdhury) অনুরোধে। ভিডিওতে কোথাও বোঝার উপায় নেই ওর শরীরে কতটা কষ্ট। হাসপাতালের বেডে বসেও মনের সুখে নেচেছে। দুঃখ উদ্যাপন একেবারেই পছন্দ করত না সকলের প্রিয় মিষ্টি। তাই আনন্দে সকলে মিলে বাঁচার ইচ্ছে ছিল ওঁর। স্বমহিমায় ও বেঁচেছে, নিজের কাজও করেছে চুটিয়ে, অন্ধকার যখনই ঘনিয়েছে জীবনে নিজেই আলোর শিখা খুঁজে নিয়েছে। এগিয়ে গিয়েছে মা, বাবা আর দিদির আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়ে আর তাঁর প্রাণ ভোমরা সব্যসাচীর হাত ধরে। নাচতে ভালবাসত তাই মাঠের মাঝে দিদির সঙ্গে টাপাটিনি গানে টেক্কা দিয়ে নেচেছে, আবার এক রিয়্যালিটির শোয়ের মঞ্চে সৌরভ গাঙ্গুলির সামনে পারফর্ম করেছে প্রিয় গানে, তাঁর উপস্থিতিই প্রাণশক্তিতে ভরা ছিল। ছিল বলছি কারণ আজ আর তাঁকে চাইলেও ছোঁয়া যায় না কারণ ‘এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা তাঁকে ছাড়া’।
আজ সে অনেক দূরে, তবুও দিদি, মা, বাবার কাতর আর্তি তাঁর কাছে পৌঁছেছে, জলছবিতে সে নিশ্চই এঁকেছে তাঁর সব্যর ইতস্তত। তাঁর মায়ের চোখের শিতলপাটি বিছিয়ে শুতে চেয়েছে হয়ত, একটু জন্মদিনের পায়েস খেতে চেয়েছে হয়ত বা কিংবা গেয়ে উঠেছে...‘ভরে থাকুক আমার মুঠো, দুই চোখে থাকুক ধারা এল সময় রাজার মতো, হল কাজের হিসেব সারা’..........