Aindrila Sharma : ফের হার্ট অ্যার্টাক ঐন্দ্রিলার, জল্পনা বাড়িয়ে সব পোস্ট মুছলেন সব্যসাচী
ফের হৃদরোগে আক্রান্ত ঐন্দ্রিলা শর্মা। তবে সেটি মাইল্ড হার্ট অ্যার্টাক বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অভিনেত্রী ভেন্টিলেশনে থাকায় তাঁর বড় কোনও ক্ষতি হয়নি বলেই হাসপাতাল সূত্রে খবর। তবে এরই মাঝে ঐন্দ্রিলার প্রেমিক, অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী তাঁর ফেসবুকের দেওয়াল থেকে ঐন্দ্রিলা সংক্রান্ত সমস্ত পোস্ট ডিলিট করে দেওয়ার পর উদ্বিগ্ন অনুরাগীরা। অনেকেরই প্রশ্ন তবে কি ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থা আরও গুরুতর?
Aindrila Sharma, মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য : ফের হৃদরোগে আক্রান্ত ঐন্দ্রিলা শর্মা। তবে সেটি মাইল্ড হার্ট অ্যার্টাক বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অভিনেত্রী ভেন্টিলেশনে থাকায় তাঁর বড় কোনও ক্ষতি হয়নি বলেই হাসপাতাল সূত্রে খবর। তবে এরই মাঝে ঐন্দ্রিলার প্রেমিক, অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী তাঁর ফেসবুকের দেওয়াল থেকে ঐন্দ্রিলা সংক্রান্ত সমস্ত পোস্ট ডিলিট করে দেওয়ার পর উদ্বিগ্ন অনুরাগীরা। অনেকেরই প্রশ্ন তবে কি ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থা আরও গুরুতর?
যদিও শনিবার সকালে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছিল, ঐন্দ্রিলা এখনও ১০০% ভেন্টিলেশনেই রয়েছেন। ওষুধ দিয়ে তাঁর রক্তচাপ বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। তবে ওষুধের মাধ্যমে তাঁর রক্তচাপ এখনও স্থিতিশীল রাখা হয়েছে। তাঁর জিসিএস কোমাস্কোর এখনও ৫, অর্থাৎ গভীর কোমায় রয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই কলকাতা নিউরো সাইন্স এবং SSKM-এর স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন ঐন্দ্রিলাকে। যদিও শুক্রবার রাতে অনুরাগীদের আশার আলো দেখিয়েছিলেন সব্যসাচী চৌধুরী।
লম্বা পোস্টে সব্যসাচী লিখেছিলেন, ''কয়েক হাজার মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জন্য এতখানি লেখা প্রয়োজন ছিল। একটু কষ্ট করে পড়ে নিও। পরশুদিন সকালে ঐন্দ্রিলার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, চোখের সামনে দেখলাম ওর হার্টরেট ড্রপ করে চল্লিশের নিচে নেমে তলিয়ে গেলো, মনিটরে ব্ল্যাঙ্ক লাইন, কান্নার আওয়াজ, তার মাঝে ডাক্তাররা দৌড়াদৌড়ি করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে হৃদস্পন্দন ফের ফিরে এলো বিভিন্ন সাপোর্টে, হার্টবিট ১২০। তারপরই কে যেন একটা অদৃশ্য বালিঘড়ি উল্টো করে ঝুলিয়ে দিলো, ঝুরো বালির মতন সময় ঝরে পড়ছে, সাথে স্থিরভাবে একটা একটা করে হার্টবিট কমছে, কমছে রক্তচাপ, কমছে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস। ডাক্তাররা জবাব দিয়েছেন, হসপিটালের নিচে পুলিশ পোস্টিং, বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষ এসে সমবেদনা জানাচ্ছেন, কিছু উত্তেজিত ইউটিউবার এবং মিডিয়ার লোকজন নিচে ঘোরাঘুরি করছেন। শেষ চেষ্টার জন্য অন্য হাসপাতালের এক নামকরা নিউরোসার্জনকে ডেকে আনা হলো, তিনি খানিক নাড়াচাড়া করে জানালেন যে “ও চলে গেছে অনেক আগেই, শুধুশুধু এইভাবে আটকে রাখছেন কেন? এমনিতেও কালকের মধ্যে সব থেমেই যাবে। লেট্ হার গো পিসফুলি”। রাত বাড়লো, দাঁতে দাঁত চিপে একটা ছোট্ট অসাড় হাত ধরে বসে আছি, চোখদুটো অনেক আগেই ডাইলেটেড হয়ে গেছে, একটা করে বিট কমছে আর অসহায়তা বাড়ছে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আগেই দেখা করে গেছে। লোকজন মাঝেমধ্যেই ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে যে আজ রাতেই হবে? নাকি সকালে আসবো?''
আরও পড়ুন-স্মৃতির ফুলবাগান ফেলে রেখেই চলে গেলেন তবস্সুম গোভিল
আরও পড়ুন-পাশে অরিজিৎ! সব্যসাচী আশার কথা শোনালেও ঐন্দ্রিলা এখনও ভেন্টিলেশনে...
সব্যসাচী আরও লেখেন, ইতিমধ্যে ফেসবুকের কল্যাণে কারা যেন মাঝরাতে ছড়িয়ে দিয়েছে যে ঐন্দ্রিলা আর নেই। বানের জলের মতন হুহু করে ফোন ঢুকতে শুরু করলো, সৌরভ শুটিংয়ে বাইরে গেছে, দিব্য একা সামলাতে পারছে না। অগত্যা ঠেকা দেওয়ার জন্য আমি পোস্ট করতে বাধ্য হলাম, মিনিট কুড়ির মধ্যে আবার সব শান্ত। সকাল থেকে রক্তচাপ কমতে শুরু করলো, ওর বাবা-মা কে ডাকলাম, বাকিদের খবর দিলাম। গতকাল আর বাধা দিইনি কাউকে, সারাদিন ধরে কাছের মানুষরা এসেছে, ওকে ছুঁয়েছে, ডুকরে কেঁদেছে। কত স্মৃতিচারণ, কত গল্প। বিকেলের পর দেখলাম হাত, পা, মুখ ফুলছে ঐন্দ্রিলার, শরীর ঠান্ডা। হার্ট রেট কমতে কমতে ৪৬, বিপি ৬০/৩০। আগের দিনের ডাক্তারের কথাটা কেবলই আমার মাথায় ঘুরছিলো, ওর শরীরটাকে এভাবে আটকে রাখার জন্য নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে, থাকতে না পেরে ওর মাকে বললামও যে এত কষ্ট আর দেখতে পারছি না, কি দরকার ছিল এত কিছু করার, শান্তিতে যেত। মুখে বলছি বটে, কিন্তু ছাড়তে কি আর পারি, মায়ার টান বড় কঠিন। ঠিক রাত আটটায় যখন আমি বিমর্ষমুখে নিচে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ হাত নড়ে ওঠে ঐন্দ্রিলার। খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি হার্টরেট এক লাফে ৯১, রক্তচাপ বেড়ে ১৩০/৮০, শরীর ক্রমশ গরম হচ্ছে। কে বলে মিরাকেল হয় না? কে বলে ও চলে গেছে? এক প্রকার অনন্ত শূন্য থেকে এক ধাক্কায় ছিটকে ফিরে এলো মেয়েটা। গেছে বললেই ও যাবে না কি, যেতে দিলে তো যাবে। এই মুহূর্তে ঐন্দ্রিলা একপ্রকার সাপোর্ট ছাড়াই আছে, এমন কি ভেন্টিলেশন থেকেও বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আগে ক্লিনিক্যালি সুস্থ হোক, নিউরোর কথা পরে ভাববো।''
এখানেই শেষ নয়, নাম না করে ঋত্বিক চক্রবর্তীর পোস্টের জবাবে সব্যসাচী লিখেছিলেন, 'ঈশ্বর ফেসবুক করেন না, আমি জানি, তাই লিখেছিলাম মন থেকে প্রার্থনা করুন, ‘ফোন’ থেকে করুন লিখিনি। চিকিৎসাশাস্ত্রে যে বিজ্ঞানই শেষ কথা, আমি সে কথাও জানি। তবে পর পর তিনজন নিউরোসার্জন যদি বলেন ‘ঈশ্বরকে ডাকুন’, তাহলে আর না ডেকে উপায় কি? ওনাদের তুলনায় আমি নিতান্তই অশিক্ষিত। তবে কেবল আমি একা নই, মুর্শিদাবাদের প্রতিটা মন্দির, প্রতিটা মসজিদে মানুষ ওর জন্য প্রার্থনা করেছে। বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন প্রসাদ এবং অজস্র আশীর্বাদী হাসপাতালে এসেছে নিয়মিত। তোমাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি ছোট করতে পারবো না। অনেকে অবশ্য হেসেছে বা অপমান করেছে, তাতেও আমি বিন্দুমাত্র কিছু মনে করিনি। এই ক্ষুদ্র জীবনে বহুবার কাদায় পড়েছি তো, তাই গায়ের চামড়া বেশ মোটা হয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ, কিছু কথা বলা প্রয়োজন। প্রথমত, এ কথা ঠিক যে ঐন্দ্রিলার প্রথম থেকে যা যা হয়েছে তা যথেষ্টই অপ্রাকৃত। কিন্তু তা বলে সেটা নিয়ে এত মাতামাতি করলে তা বাকি পেশেন্টদের একপ্রকার অপমান করা হয় বলে আমি মনে করি।'
ঐন্দ্রিলার চিকিৎসা খরচ নিয়ে যে গুজব ছড়ায় সে প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, 'দ্বিতীয়ত, চিকিৎসার খরচ নিয়ে লেখালিখি বন্ধ করা উচিত, পরিবারের সামর্থ্য অনুযায়ীই চিকিৎসা হবে, এখনো অবধি কারোর কাছে এক পয়সাও অর্থসাহায্য চাওয়া হয়নি অথবা কারোর থেকে এক পয়সাও গ্রহণ করা হয়নি। তাই এটা নিয়ে লেখা মানে ঐন্দ্রিলাকে অপমান করা এবং তার পরিবারকে ছোট করা। নিজের অপমান গায়ে মাখি না ঠিকই কিন্তু ওর অপমানে আমার গায়ে ফোস্কা পড়ে। তৃতীয়ত, একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ চেষ্টা করে তার কাছের মানুষের পাশে থাকতে, বিপদে পড়লে খড়কুটো অবধি আঁকড়ে ধরতে। সেটাই তো এতদিন স্বাভাবিক বলে জেনে এসেছি। আমার মা অসুস্থ হলে, বাবা যেমন দৌড়াদৌড়ি করেন, গত দুই বছর ধরে আমিও সেটাই করেছি। তাই কিছু পুরোনো ছবি আর ভিডিও সাজিয়ে, গান বাজিয়ে সেটাকে গ্লোরিফাই করা বন্ধ করা উচিত। এমন কি একটা লকডাউনের সময়কার তারাপীঠের ভিডিও পর্যন্ত ঐন্দ্রিলার নাম করে ঘুরপাক খাচ্ছে দেখলাম। আমি ঠিক জানি না, এগুলো করে বোধহয় তোমাদের চ্যানেল বা পেজ পয়সা পায় কিন্তু বিষয়টা আমার চোখে খুবই দৃষ্টিকটু লাগে। ইহ জীবনে কয়েক শত জুটিকে দেখেছি এসএসকেএম’এর বাইরের ফুটপাথে রাত কাটাতে, ভালোবাসে বলেই তারা থাকে। তবু পরিচিত মুখ বলে আমরা চর্চিত হই, তারা নয়। আসলে কি জানো, সে খবর বিক্রি হয় না। সর্বশেষে বলি, মানুষের গায়ে আজকাল বড়ই শকুন শকুন গন্ধ পাই। গত দুইদিন ধরে হাসপাতালের নিচে বেশ ভিড় জমেছিলো, ওর অবস্থার উন্নতি ঘটাতে কাল রাত থেকে একেবারে খাঁ খাঁ করছে। তবে গত দুদিনের এত নেগেটিভিটির মাঝে একটামাত্র মানুষ আমায় কিছু তথ্য দিয়ে প্রথম আলোর দিশা দেখায়, যার সাথে সারাদিন নির্দ্বিধায় চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করি, তিনি অরিজিৎ সিং। ঐন্দ্রিলা আছে। ঐন্দ্রিলা থাকবে। রাখে বড়মা, তো মারে কোন..'।
এদিকে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য ট্রোলিংয়েরও শিকার হতে হয়েছে সব্যসাচী চৌধুরীকে। কোনও কোনও নেট নাগরিক এমন প্রশ্নও তুলেছেন, 'যদি কারোর কাছের মানুষ অসুস্থ হন, তাহলে তিনি ফেসবুকে কে কী বলছেন, সে খবর রাখেন কীভাবে?' এমনকি সব্যসাচী তাঁর নিজের কেরিয়ারের জন্যই এমনটা করছেন বলেও দাবি করেছেন অনেকে।
তবে নিজের লেখা এই পোস্ট ইতিমধ্যেই ফেসবুক থেকে ডিলিট করেছেন সব্যসাচী চৌধুরী। শুধু তাই নয়, ঐন্দ্রিলা সংক্রান্ত নিজের পুরনো পোস্টগুলিও ডিলিট করেছেন অভিনেতা। আর এতেই ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে আরও চিন্তা বেড়েছে অনুরাগীদের।