সাদ্দামের মা
সাদ্দামের মা এখন কোথায় আছেন কে জানে? মাস খানেক আগে শেষবার দেখেছিলাম। হেমন্তের দুপুরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে প্রতিদিনের মত বসে একই ভঙ্গিমায় ভিক্ষে চাইছেন। মুখে কোনও সাড়া শব্দ নেই। আওয়াজ নেই। শরীর স্থির। পাথরের মত। তেলচিটে শতচ্ছিন্ন বোরখা। মুখের সামনে জাল ঘেরা একটা পর্দা। তার ভেতর আড়াল করা আছে সাদ্দামের মায়ের চোখ। সেই চোখের দৃষ্টি কোন পথ বা পথিকের দিকে, তা বোঝা যায় না। ফুটপাথে রাখা এনামেলের বাটি। কিছু রেজগি পড়ে। সাদ্দামের মায়ের শীর্ণ, শিরা বের করা, দড়ির মত পাকিয়ে যাওয়া হাত, হাতের তালু আকাশের নীচে পেতে রাখা। সেই করতলে ছুটে চলেছে গঙ্গা, যমুনা, ঝিলম, কৃষ্ণা, কাবেরী, গোদাবরী। দু-পাশের তীরবর্তী রেখায় কত সভ্যতা, কত নগর, কত গাঁও-গেরস্থালি। বণিকের তরণিসম্ভার। ধোবিঘাটের রোদ্দুরে পেতে রাখা অনন্ত ধবল পোশাক।
সাদ্দামের মা এখন কোথায় আছেন কে জানে? মাস খানেক আগে শেষবার দেখেছিলাম। হেমন্তের দুপুরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে প্রতিদিনের মত বসে একই ভঙ্গিমায় ভিক্ষে চাইছেন। মুখে কোনও সাড়া শব্দ নেই। আওয়াজ নেই। শরীর স্থির। পাথরের মত। তেলচিটে শতচ্ছিন্ন বোরখা। মুখের সামনে জাল ঘেরা একটা পর্দা। তার ভেতর আড়াল করা আছে সাদ্দামের মায়ের চোখ। সেই চোখের দৃষ্টি কোন পথ বা পথিকের দিকে, তা বোঝা যায় না। ফুটপাথে রাখা এনামেলের বাটি। কিছু রেজগি পড়ে। সাদ্দামের মায়ের শীর্ণ, শিরা বের করা, দড়ির মত পাকিয়ে যাওয়া হাত, হাতের তালু আকাশের নীচে পেতে রাখা। সেই করতলে ছুটে চলেছে গঙ্গা, যমুনা, ঝিলম, কৃষ্ণা, কাবেরী, গোদাবরী। দু-পাশের তীরবর্তী রেখায় কত সভ্যতা, কত নগর, কত গাঁও-গেরস্থালি। বণিকের তরণীসম্ভার। ধোবিঘাটের রোদ্দুরে পেতে রাখা অনন্ত ধবল পোশাক।
সাদ্দামের মা বসে আছেন। হেমন্তের ফুটপাথে। স্থির চিত্রার্পিত মূর্তি। পাথরের মত স্থবির। মোটরের ভোঁ, সেবাযানের সাইরেন, সান্ত্রীর হুটার, ঝাঁকা মুটের কোলাহল, গড়ের মাঠের কুচকাওয়াজ, মেহবুব ব্যান্ডের গোরোকি না কালোকি...বেঁকে যাওয়া অতিকায় মিছিলের খণ্ড ত - কিছুই তাঁকে টলাতে পারছে না। আকাশের নীচে পেতে রাখা তাঁর করতল।
"বাবা বুড়ো শিব' - এরকম একটা সাইনবোর্ড। পাশে "প্রণামী বাক্সে ফেলুন'। আর একটা - "ভাতের হোটেল গলির ভেতর'। কিছু রঙচটা দেব ও দেবীর মূর্তি। রেললাইন। ডাঁই করা মড়ার খাটিয়া। ফুলমালা, বিষ্ঠার আবর্জনাবাহিত মজা ক্যানাল। ধারাজলপ্রণালী। তার পাশেই সাদ্দামদের বসতি। সারসার প্লাস্টিক ছাউনির অস্থায়ী শিবির।
অস্থায়ীকে স্থায়ী করে দেওয়ার কথা বলে ভোটবাবুরা। সাদ্দামের মত কাগজ কুড়ুনির বাচ্চারা সারাদিন ধরে শহরের গলিতস্যগলিপ্রান্তউপত্যকা এতল্লাটে ওতল্লাটে ঘুড়ির মত লাট খেয়ে বেড়ায়। লোহার আঁকশি দিয়ে হৈ-হৈ টায়ার চালায়। চাকার তলায় চাপা পড়ে। পাত্তা খেলতে শেখে। পেনসিলার বনে যায়। একদিন সকালে পুলিস আসে। চোঙা ফুঁকে এলাকা খালি করে দিতে বলে। আর আসে বুলডোজার। ছিঁড়ে, উপড়ে, দুরমুশ করে, ছড়িয়ে, ছিটিয়ে, আগুনে, পেট্রোলে বুড়ির ঘর খাক করে রেখে দিয়ে যায়। পোড়া আলুর মত পুতুলের চুলওঠা সেদ্ধ নেড়া মাথা পড়ে থাকে। পড়ে থাকে ভাঙাচোরা তক্তাপোষ। ফটোফ্রেম। গলে যাওয়া চিরুনি। সাদ্দামের মায়ের দীর্ঘতম চিত্কার। আর্তি। সাদ্দামকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
Illigal settlers set ablaze scores of their shanties at Beliaghata in East Kolkata on Tuesday after failing stall their evition by the police and civil personnel.
পুলিস সূত্রে জানা যাচ্ছে, খালের দু-পাড়ের কমপক্ষে একশো অস্থায়ী ছাউনি আগুনে ভষ্মীভূত হয়ে গেছে। হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। দমকলের ২৭টি ইঞ্জিন সঙ্গে প্রায় দেড়শো জন কর্মী ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় নারকেলডাঙা-বেলেঘাটা এলাকার খালপাড়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য উচ্ছেদ অভিযানে কোনওরকম বাধা দেননি।
সাম্যব্রত জোয়ারদার