শান্তি দে মা!
আমি ঠিক জানি কি না জানি না, ইংরেজিতে shanty কথাটার মানে, বস্তি। সেইটে ফলো করলে, shanty-র ছেলে মানে কিনা, বস্তির ছেলে। আর এদেশের বস্তির ছানাপোনাদের বিদেশে সব্বাই 'অস্কার-আদরে' ডাকে slumdog... আমি ভাবলাম, অলস বাঙালি জিভ হয়তো অপভ্রংশে 'শান্তি' বলে ফেলে..কিন্তু পরে এক পুরুষবন্ধুর কাছে আসল মানেটা জানার পর নিজেই জিভ কাটি!
আমি ঠিক জানি কি না জানি না, ইংরেজিতে shanty কথাটার মানে, বস্তি। সেইটে ফলো করলে, shanty-র ছেলে মানে কিনা, বস্তির ছেলে। আর এদেশের বস্তির ছানাপোনাদের বিদেশে সব্বাই 'অস্কার-আদরে' ডাকে slumdog...
আমি ভাবলাম, অলস বাঙালি জিভ হয়তো অপভ্রংশে 'শান্তি' বলে ফেলে..কিন্তু পরে এক পুরুষবন্ধুর কাছে আসল মানেটা জানার পর নিজেই জিভ কাটি!
শহর জুড়ে টিজার পোস্টার 'শান্তির ছেলেদের শান্তি দেব না'! দেখে কোন দিকে তাকাব বুঝতে পারি না। যাক গে, বুদ্ধিতে খাটো বলে শাস্ত্রে মেয়েদের একটা বদনাম আছে এবং যখন-তখন আমাদের কনসেন্ট না নিয়েই 'মা' বলে আখ্যা দেওয়ার ফ্যাশনও চিরকালীন। ছেলে বদ হলে সর্বজনবিদিত গালাগালগুলোয় মায়েদের বদনামই আগে হয়। তাই এ নিয়ে বিশেষ চেঁচামেচি, গোলযোগ কিংবা প্রতিবাদ করে কোনও ফল হওয়ার আশা নেই। আমি বরাবর মুখচোরা, শান্তিপ্রিয় স্বভাবের। তাছাড়া আমি যে শান্তিকে চিনি, তার কোনও ছেলে নেই। (থাকলেও তাকে অশান্ত করে তুলতাম না!) কাজেই অন্যের শান্তি বিঘ্নিত না করে, নাবালক-জ্ঞানে ক্ষমা করে দেওয়াই শ্রেয়ঃ। চুপচাপ পপকর্ন খেতে খেতে রাখি সাওয়ন্তের আইটেম দেখা ভাল!
শুধু দেখলে হবে? খরচা আছে পঁয়তাল্লিশ লাখ। কি বললেন? ছবির বাজেট? খেপেছেন? বাংলা ছবির নৌকো কবেই কোটি-তট ছাড়িয়েছে। মুম্বইয়ের চিকনি চামেলি, শীলা মুন্নিদের কলা দেখিয়ে এইবার বঙ্গরঙ্গমঞ্চে পা ফেলেছেন রাখি। আইটেমের সেট+ রাখির পারিশ্রমিক+ রাখির 'রঙিন' বায়নাক্কার খরচা= ৪৫ লক্ষ। শুটিং হয়েছে আড়াই দিন। পরিচালকের দৃঢ বিশ্বাস, দর্শকের আঁখিপাখি রাখিকেই ধাওয়া করবে। রাখিই এ ছবির ছম্মকছল্লো selling point। হলে বসে মনে হল, বিক্রিবাটা ভালই হয়েছে। টায়টায় ভর্তি হলে সিটি-উল্লাস-হাততালির সমবেত ক্যাকোফনিতে গানের লিরিক্সই শুনতে পেলাম না ভাল করে..
উফফ্..ওম শান্তি! হাঁফ ছাড়লাম + ছবির নাম নিলাম। উঁহু, নায়কের নাম ওম আর নায়িকার নাম শান্তি নয়। আর একটু আধুনিকীকরণ হয়েছে। দক্ষিণী ছবির কাঠামো অনুসরণ করেছেন সাংসদ-অভিনেত্রী-পরিচালক। মিথ্যে বলব না, কস্টিউম বেশ ধোপদুরস্ত। গল্পখানা বেশ জমাটি, টানটান। তবে, সংলাপ..এঃ হে, একটু মাটি করল বলে। আর এক সাংসদ এবং এ ছবির প্রোটাগনিস্ট তাপস পালের মুখে কোনও সংলাপই দুর্বল লেখার কল্যাণে এক ছোবলে ছবি হয়ে উঠতে পারল না। অথচ, অল্প পরিসরেই বাণিজ্যিক ছবিতেও তাঁর অভিনয় মনে রাখার মতো। ভাবতে অসুবিধে হয় না, এঁর কাছ থেকেই 'দাদার কীর্তি' শব্দটা পাওয়া গিয়েছিল বলেই বহু স্পোর্টস জার্নালিস্ট আজও কপির হেডলাইন ভাবার টাইম বাঁচিয়ে নেন। প্রাণবন্ত ঋতুপর্ণাও। প্রোমোশনের সময়ে পরিচালকের সঙ্গে যতই খিটিরমিটির হোক, কাজ তিনি বেশ করেছেন। একঝাঁক নতুন ছেলেমেয়েদের দেখে মনে হল, ফাইন টিউনিং করলে এদের মধ্যে থেকেই সেরাটা বেরিয়ে আসবে।
তবে কী, চিত্রনাট্যকার একটু চোখকান খোলা রাখলে বুঝতেন, চুমু খেলে এখন আর বাচ্চাকাচ্চা হচ্ছে না। স্পার্ম ডোনরদের দরকার হচ্ছে। সারোগেট মাদারদের দাপটের টাইম এসে গিয়েছে এদেশের ফিল্মে। শেষ চুমু খেয়ে কনভিনসিংলি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা জুগিয়েছিলেন ঐশ্বর্য রাই। ছবির নাম 'হম দিল দে চুকে সনম'। সিনটা নিশ্চয়ই এখনও সবার মনে গেঁথে আছে। সলমন খানের সঙ্গে সেই অপূর্ব দৃশ্য...কাইন্ডলি অন্যভাবে নেবেন না, এ ছবিতে খড়ের গাদায় দুটি কিশোরকিশোরীর মধ্যে চুমু খেলে বাচ্চা হওয়ার আশংকার দৃশ্য কুছ হজম নেহি হুয়ি। অনেক জায়গায় ক্যামেরা প্লেসমেন্টের ব্যাপারেও তেমন কোনও টেনশন নেননি পরিচালক। অতীব সদয় হয়ে পুরোদস্তুর এনজি শটগুলোকেও আপন করে নিয়েছেন। এডিট করে নিষ্ঠুর হাতে ফেলে দেননি। যেমন তিনি উদারহস্তে তাঁর ছবিতে একজন-দু'জন নয়, ছ'ছ'জন মিউজিক ডিরেক্টরকে জায়গা করে দিয়েছেন। বাপি লাহিড়ি, রূপম ইসলাম, নচিকেতা, রকেট মন্ডল, সমিধ, নীল দত্ত। সবাই এক-একটি করে গান বেঁধে দিয়েছেন। ফল? ছ'জন মিউজিক ডিরেক্টর-যুক্ত বাংলা ছবি এই প্রথম। রেকর্ড ব্রেক করতে হলে কমপক্ষে সাড়ে-ছ'জন মিউজিক ডিরেক্টরকে ক্রেডিট দিতে হবে টাইটেল কার্ডে। কম কৃতিত্ব?
আজকাল সবজির আগুন-বাজারে নাকি রাঙালু-খামালুর সঙ্গে আরও একধরণের আলু পাওয়া যাচ্ছে। 'বাবালু'। সবাই নাকি উ লা 'লাউ'-লা-লা ছেড়ে 'আই লাভ ইউ বাবালু' বলে লাফাচ্ছে? আমি জানতাম না। বাবালু গানের স্রষ্টা বাপি লাহিড়ি নিজেই বললেন।
ওম শান্তি!
ফুলকলি