ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়!
রচনার শিরোনাম দেখে অনিবার্যভাবে মনে পড়ে যাবে সুকুমার রায়কে। মনে পড়ে যাবে গঙ্গারামকে। কিন্তু আমাদের ছেলেটি কোনওদিন ফেল করেনি। সে বরাবরই ফার্স্ট বয়। সে 'পাঁচ জনের একজন নয়, একেবারে পঞ্চম'। তার সময়ে সে-ই ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। তার ব্যাটিং দেখলে আট বছরের বালকের চোখে রোদ্দুর খেলা করে। সে ক্লান্ত করনিকের সেরা বিনোদন, অশীতিপর বৃদ্ধের বাঁচার অক্সিজেন। আক্ষরিক অর্থেই গত দু'দশক ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের অভিভাকের নাম সচিন তেন্ডুলকর। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত নামও সে।
রচনার শিরোনাম দেখে অনিবার্যভাবে মনে পড়ে যাবে সুকুমার রায়কে। মনে পড়ে যাবে গঙ্গারামকে। কিন্তু আমাদের ছেলেটি কোনওদিন ফেল করেনি। সে বরাবরই ফার্স্ট বয়। সে 'পাঁচ জনের একজন নয়, একেবারে পঞ্চম'। তার সময়ে সে-ই ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। তার ব্যাটিং দেখলে আট বছরের বালকের চোখে রোদ্দুর খেলা করে। সে ক্লান্ত করনিকের সেরা বিনোদন, অশীতিপর বৃদ্ধের বাঁচার অক্সিজেন। আক্ষরিক অর্থেই গত দু'দশক ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের অভিভাকের নাম সচিন তেন্ডুলকর। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত নামও সে।
আমার ক্রিকেট খেলা দেখা ও ক্রিকেট বুঝে নেওয়ার সময় নক্ষত্রের ভিড়। গাভাসকর, রিচার্ডস, ইমরান, হ্যাডলি, বোথাম, লিলি, গ্রেগ চ্যাপেল, জাহির আব্বাস, মিঁয়াদাদ, কপিলদেব এবং আরও অনেকে। সেই সময়ই এরা লেজেন্ড। আর একেবারে গোড়া থেকে দেখলাম সচিন, দ্রাবিড়, লারা, ইনজামাম, ওয়াকার, ওয়াসিম, কালিসদের। দেখলাম শূন্য থেকে শুরু করে লেজেন্ড হওয়ার সংগ্রাম। এরা সকলেই ক্রিকেটের উজ্জ্বল রত্ন। তবে তুলনা টানা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। সেই স্যার ডন যেদিন সচিন সম্পর্কে তার স্ত্রীকে বলেছিলেন, ছেলেটা অনেকটা আমার মতো খেলে, সেদিন থেকেই তুলনায় ঢুকে গেছেন সচিন। আর স্যার ডন ব্র্যাডম্যান যদি অবিসংবাদিতভাবে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হন এবং তিনি যখন সচিন সম্পর্কে এই সার্টিফিকেট দেন এবং নিজের জন্মদিনে আমন্ত্রণ জানান, তখন আর সচিনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। সংশয় থাকেও না, শুধু রয়ে যায় মুষ্টিমেয় একটা শ্রেণির মধ্যে। কীসের জন্য সংশয়?
তাঁদের কথায়, সচিন অনেক রান করে থাকতে পারে, কিন্তু ম্যাচ জেতায় না। উত্তর, ডাঁহা মিথ্যে। তার সেঞ্চুরির সঙ্গে ম্যাচ জেতানোর রেশিও দ্রাবিড়, লারার থেকে কম হতে পারে, কিন্তু নিন্দুকদের বলি, শুধু মাত্র তার একক লড়াইয়ে যে কত ম্যাচ ভারতকে বাঁচিয়েছে সেই পরিসংখ্যানটা দেখে নিতে। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যার রান প্রায় ৩৪ হাজার, সেই রান দেশের কাজে লাগেনি তো কার কাজে লেগেছে! ফলে এই ধরনের সমালোচনা অনেকটা কল্লোল যুগের কবিদের রবীন্দ্রনাথের গায়ে কালি ছেটানোর চেষ্টার মতো! আর কারা এসব বলছে? যারা বাইশ বছর ধরে ওই একটা লোকের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সারাক্ষণ। গাভাসকরের পর বিশ্বক্রিকেটে তার থেকে বেশি চাপ নিয়ে আর কেউ খেলেনি। সচিন যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করে তার ১৪ বছর পর আমার সন্তান হয়। আর এই সেদিন, সচিন যখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করে, তখন আমার পাশে বসে উল্লাসে মেতে ওঠে আট বছরের ছেলে।
বছরের পর বছর যন্ত্রণাবিদ্ধ হতে হতে, ক্ষতবিক্ষত হতে হতেও চালিয়ে গেছে লড়াই। টেনিস এলবোর মতো দুরারোগ্য ব্যধিকেও ফুত্কারে ওড়াতে পারে দাঁতে দাঁত চেপে তার সংগ্রাম। আমরা দেখি তার আলো ঝলমলে জীবনের একটা দিক, দেখি মাঠে একটার পর একটা সেঞ্চুরি, কিন্তু অদেখা থেকে যায় দিনের পর দিন তার অক্লান্ত অনুশীলন। দেখতে পাই না সব কিছু ছেড়ে কীভাবে মাঠেই পড়ে থাকে একটা জীবন। চাপ নিতে নিতে, খেলতে খেলতেই একটার পর একটা শৃঙ্গজয়। এতটাই উঁচুতে তার অবস্থান যে আমাদের দৃষ্টি যায় না। তাই মাঝে মাঝেই তাঁকে টেনে নামানোর চেষ্টা চলে। কিন্তু ভুলে যাই আমাদের সম্মিলিত হাতের নাগালের বাইরে যে তার পরিক্রমা!
ক্রিকেট তাঁকে অনেক দিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ থাকে যাদের জন্য ক্রিকেটও সমৃদ্ধ হয়। যে ছেলেটি বলে, "অধ্যবসায় আর দায়বদ্ধতার দিকে থেকে আমার এটা একশোয় একশো," তাতে গর্বিত হয় ক্রিকেট। সচিনের জন্যই হাজার বছর পরেও ক্রিকেটের গায়ে লেগে থাকবে এক উজ্জ্বল আলো। কোহিনূর।
সোমশুভ্র মুখোপাধ্যায়