যে বিমান বন্দর রাষ্ট্রপ্রধান থেকে বিজনেস টাইকুনদের মনের বয়স বাড়তে দিচ্ছে না!
স্বরূপ দত্ত
আজকের দিনে বিমানযাত্রা আর মোটেই তেমন কোনও বিষয় নয়। আজ থেকে বছর ৩০ আগেও একটা পাড়ার ক'জনই বা বিমান সফর করতেন? কারও কারও বাড়ির লোক বিমানে করে কোথায় গেলে বা ফিরলে, সেই বাড়ির লোক পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনদের 'ফ্লাইট জার্নির' কথা বলে বলে বিরক্ত করে মারতো। সেই দিন গিয়েছে।এখন প্রথম চাকরিতেই মাসে হাতে পাওয়া যায় নিদেন পক্ষে হাজার তিরিশ-পঁয়তিরিশ টাকা। তার উপর কমে গিয়েছে বিমানযাত্রার খরচও। আকাশে ওড়াটা আর মোটেই স্বপ্ন নেই। বরং, এসে গিয়েছে মধ্যবিত্তের দখলে। হয়েছে ভালোই। উড়তে কারই বা ভালো লাগে না? তাই ওড়ার খরচ কম মানে তো, হাতে এক টুকরো মেঘবালিকাকেই হাতের মুঠোয় পাওয়া। তাই না? ইদানিং যাঁরা আমাদের দিল্লি বিমান বন্দরের নতুন টার্মিনালে গিয়েছেন, তাঁদের চোখ কপালে উঠে গিয়েছে প্রথমবার। হ্যাঁ, দিল্লি বিমান বন্দরের নতুন টার্মিনালটার ভেতর দেখতে এতটাই সুন্দর। সেটা বানানো নিয়ে নেতাদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অনেক। সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু জিনিসটা ভারতীয়দরে গর্বিত করার মতোই বানানো হয়েছে। দিল্লি আমাদের দেশের রাজধানী বলে কথা। সবসময় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা আসেন। সেখানে দেশের একটা ইজ্জত আছে তো! ইদানিং, ওয়েলিংটন এয়ারপোর্ট বারবার চলে আসছে খবরে। নিউজিল্যান্ড এমনিতেই ছবির মতো দেশ। সেখানে সবকিছুই ঝাঁ চকচকে। তকতকে। কিন্তু ওয়েলিংটন বিমান বন্দর ছাপিয়ে গিয়েছে অন্য বিষয়ে। আরও বেশি করে পর্যটকদের মানসিক আনন্দ দিতে নতুন করে গড়া ওয়েছে টার্মিনাল। আর সেটায় একবার পা দেওয়ার পর, কেউ বেরোতেই চান না টার্মিনাল থেকে! হ্যাঁ, এমনই চোখ এবং মন জুড়ানো ইন্টিরিয়র ডেকরেশন করেছে তাঁরা। একে একে ছবিগুলো দেখে নিন। কবে যেতে পারবেন, তার তো ঠিক নেই। এখন ছবিতে দেখে রাখুন। চোখে স্বপ্ন দেখতে থাকুন। নিশ্চয়ই আপনিও একদিন পা দেবেন ওয়েলিংটন এয়ারপোর্টে!
ইদানিং বিশ্বের সবথেকে ভালো এয়ারপোর্টের কথা বলতে গেলেই আপনাকে শুনতে হবে, দোহা, হিথরো, মাদ্রিদ, জুরিখ, টোকিও, হংকং, মিউনিখ এয়ারপোর্টের কথা। এগুলো সবদিক থেকেই ভালো। বিরাট বড়। দুর্দান্ত সব সুযোগ সুবিধা। পাশাপাশি, এই বিমান বন্দরগুলো ব্যস্তও। তাই এরা সবসময়ই সেরার তালিকায় উপরেই থাকে। কিন্তু এখন দিন পাল্টেছে। মানুষ আগে বাইরের সৌন্দর্য্যের দিকে বেশি নজর দিতো। কিন্তু বদলে গিয়েছে মানুষের পছন্দ। এখন লোকে ভিতরের সৌন্দর্যও উপভোগ করতে চান। আর এখানেই বাজিমাত করেছে ওয়েলিংটন এয়ারপোর্ট।
হ্যাঁ, এয়ারপোর্টের টার্মিনালের মধ্যে রয়েছে গোলাম। যা কিনা প্রায় ১৩ মিটার লম্বা এবং তিন মিটারেরও বেশি উঁচু। শুধু গোলাম একাই তো নয়। সঙ্গে রয়েছে পেল্লাই সাইজের চার চারটে সুন্দর দেখতে মাছ। ওই মাছগুলোও চার মিটারের থেকে বেশি বড় লম্বায়। রয়েছে ৯ টি ইয়া বড় বড় বাবলও! যেগুলো মাঝে মাঝেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢুকে যায় গোলামের মুখের মধ্যে। এই যে স্কাল্পচারগুলো বসানো রয়েছে, এর একটার ওজন প্রায় দেড় টন করে! তাহলেই বুঝুন কত বড় কর্মকাণ্ড! আর এগুলো টার্মিনালের মধ্যে বসানোর পর পরিবেশ, পরিস্থিতি, আবহটাই বদলে গিয়েছে ওয়েলিংটন এয়ারপোর্টের।
বিশ্বের বিভিন্ন পর্যটক এই কারণেই, খানিকটা অকারণেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন, ওয়েলিংটন এয়ারপোর্টের টার্মিনালের ভিতরে। যে মানুষগুলোর ব্যস্ততা থাকে চূড়ান্ত, তাঁরাও কোনও কিছুতে দেরি হলে বিরক্ত হচ্ছেন না! দিব্যি বসে রয়েছেন হাসি মুখে। কোনও নির্দিষ্ট ফ্লাইট হয়তো বাতিল হয়েছে, কিন্তু যাত্রীদের মধ্যে বিরক্তিভাবে তুলনায় কমে গিয়েছে অনেক! ওই ইন্টেরিয়র ডেকরেশনের জন্যই! আমাদের দেশের অনেক তারকাকেই মাঝে-মাঝে সমস্যায় পড়তে হয় আমেরিকার এয়ারপোর্টগুলোতে গেলে। শাহরুখ খানের মতো তারকাও ছাড়া পান না। এই তো মাত্র ক'দিন আগেই কিং খানকে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয় আমেরিকার এক এয়ারপোর্টে। মার্কিনরা ৯/১১-র পর থেকে এমনই অসিহষ্ণু। অন্যের অসহিষ্ণুতা যে প্রভাবিত করে সামনের সমস্যায় পড়া মানুষকেও। সেদিন বিরক্তই হয়েছিলেন শাহরুখ খান। এয়ারপোর্ট থেকেই তিনি টুইট করেছিলেন যে, ঘণ্টা দুয়েক বসে থাকতে থাকতে তিনি নাকি বেশ কয়েকটা পোকেমনও ধরে ফেলেছেন! এই ঘটনার উল্লখ করলাম এই কারণে যে, মানুষ যত বড়ই হয়ে যান বয়সে কিংবা সামাজিক মর্যাদায়, সবার মধ্যেই থাকে একটা ছোট্ট মানুষ। আমাদের সেই ছেলেবেলার ভালোলাগাগুলো বুকে নিয়েই ঘুরি আমরা। কিন্তু সেই পরিবেশ, পরিস্থিতি, পটভূমি, আবহ তৈরি না হলে, ভেতরের ছেলেমানুষিটা বেরোয় না। ওয়েলিংটন এয়ারপোর্ট সেই আবেগের জায়গাটাকেই ধরেছে। তাই তো অনেক বড় রাষ্ট্রেনতারও বিন্দুমাত্র বিরক্ত লাগছে না, অপেক্ষা করতে। আমেরিকার এয়ারপোর্টগুলো যদি ওয়েলিংটন এয়ারপোর্টের মতো হত, তাহলে শাহরুখ খানদের মতো অনেককে হয়তো একটু কম বিরক্ত লাগতো, হেনস্থা হওয়ার পরও।
আসলে ওয়েলিংটন এয়ারপোর্ট বিশ্বের সবথেকে বড়, সবথেকে সেরা, সবথেকে ব্যস্ত, কিছুই হয়ে যায়নি। যেটা হয়েছে, তা হলো- এই এয়ারপোর্টে বিমানযাত্রীদের মনের বয়সটাই কমিয়ে দিচ্ছে যেন। বিমান বন্দর মানেই তো রাষ্ট্রপ্রধান থেকে বিজেনস টাইকুনদের চলাফেরা সবসময়। রাষ্ট্রপ্রধান অথবা বিজনেস টাইকুনদের আর নিজেদের ছেলেবলার জিনে ফিরে যাওয়ার সূযোগ কোথায়? ওয়েলিংটন এয়ারপোর্ট সেই সুয়োগই করে দিয়েছে মানুষকে। বড্ড বড় কাজ তাই না? - শুধু আবহসঙ্গীত হিসেবে এয়ারপোর্টে যদি বাংলায় বাজতো - 'মনের বয়স বাড়তে দিও না!'
আরও পড়ুন আমাদের চোখ, কিডনি, রক্ত, চামড়ার খোলা বাজারে দাম জানুন