খোঁড়া বাদশার নেপথ্য নেটওয়ার্ক

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মন্দিরবাজার, মগরাহাটের মতো বিভিন্ন অঞ্চলে বেআইনি মদের ভাটি পিছু পুলিসকে মাসে পঁচিশ হাজার টাকা দিতে হয়। এভাবেই, ওই এলাকায় চোলাই মদের ব্যবসা চালাচ্ছিল খোঁড়া বাদশা। উপরি পাওনার উত্স যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য চোলাইয়ের কারবার ঠেকাতে পুলিস কোনও উদ্যোগ নেয় না বলে অভিযোগ।

Updated By: Dec 18, 2011, 11:06 PM IST

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মন্দিরবাজার, মগরাহাটের মতো বিভিন্ন অঞ্চলে বেআইনি মদের ভাটি পিছু পুলিসকে মাসে পঁচিশ হাজার টাকা দিতে হয়। এভাবেই, ওই এলাকায় চোলাই মদের ব্যবসা চালাচ্ছিল খোঁড়া বাদশা। উপরি পাওনার উত্স যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য চোলাইয়ের কারবার ঠেকাতে পুলিস কোনও উদ্যোগ নেয় না বলে অভিযোগ।
বিষমদ কাণ্ডে দশজনের নামে এফআইআর  করা হলেও, চোলাই চক্রের মূল পাণ্ডা সেলিমের বিরুদ্ধে পুলিস এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের না করায় প্রশ্ন উঠেছে। পুলিসকে ঘুষ দিয়ে গোচারণ, সংগ্রামপুর সহ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল খোঁড়া বাদশা। চোলাই ব্যবসায় টাকা লাগাত সেলিম। সেলিমের হয়ে ব্যবসা দেখভাল করত সে। বিষমদ কাণ্ডের পর উঠে আসছে এরকমই নানা অভিযোগ। জানা গেছে, গোচারণে ভূতনাথ নস্কর ওরফে বড় ভাই নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে চোলাই মদ কিনত খোঁড়া বাদশা। মগরাহাটে ইসমাইল গায়েন ও সংগ্রামপুরে মহসিন নস্কর ও ইয়াসিন নস্কর নামে দুই ব্যক্তি তাকে বেআইনি মদ সরবরাহ করত। এছাড়াও, সে নিজে প্রায় তিরিশটি বেআইনি মদের ভাটি চালাত। 
ইদানিং, ট্রেনে চোলাই নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় ভাটি থেকে যন্ত্রচালিত ভ্যানে ও পরে ষোলো চাকার লরিতে বেআইনি মদ নিয়ে বিভিন্ন ঠেকে পৌঁছে যেত খোঁড়া বাদশার লোকেরা। এক একটি লরি, প্রায় পনেরো টন চোলাইয়ে ঠাসা থাকত বলে জানা গেছে। অভিযোগ, প্রতি মাসে পুলিসকে পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে নিশ্চিন্তে ব্যবসা চালাত খোঁড়া বাদশা। এই টাকার একটা অংশ যেত স্থানীয় থানায়। অন্য অংশ যেত জিআরপি-র কাছে। গোলাম ও সাজিদ নামে দুই ব্যক্তি তার হয়ে পুলিসের সঙ্গে লেনদেন চালাত বলে খবর। চোলাই কারবারীদের থেকে পাওয়া ঘুষের বখরার লোভে মন্দিরবাজার, মগরাহাট, জয়নগর থানায় পোস্টিং পাওয়ার জন্য পুলিসকর্মীদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে বলে অভিযোগ। লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যের বর্তমান শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে খোঁড়া বাদশা। প্রশাসনের মদতে ক্রমশ রমরমিয়ে ওঠে তাঁর ব্যবসা। বিষমদ কাণ্ডে মৃত্যুর পর বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও এখনও পুলিসের নাগালের বাইরে খোঁড়া বাদশা। ঘটনার দিন ধনপোতা গ্রাম থেকে নিজের শাগরেদ গোলামের মোটরবাইকে চড়ে সে পালিয়ে যায়।
উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ বা দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ঝড়খালি হয়ে খোঁড়া বাদশার বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিস। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে গোলামের জামাইবাবুর মধ্যপ্রদেশের বাড়িতেও। বিষমদ কাণ্ডে দশজনের নামে এফআইআর দায়ের করা হলেও যার টাকায় খোঁড়া বাদশা এই ব্যবসা চালাত, সেই সেলিমের বিরুদ্ধে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পুলিস, স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কেন তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

.