বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে শেষ হল পুর নির্বাচন

শেষ হল ৬ জায়গায় পুরভোট গ্রহণ। নির্বাচন কমিশনর সূত্রে পাওয়া শেষ হিসেব অনুযায়ী গড় ভোট দান ৮০ শতাংশ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই ভোট কংগ্রেস-তৃণমূল ও বামফ্রন্ট তিন পক্ষের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে ভোট শেষ হতেই শরিকদল কংগ্রেসের অভিযোগ, সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল।

Updated By: Jun 3, 2012, 04:54 PM IST

শেষ হল ৬ জায়গায় পুরভোট গ্রহণ। নির্বাচন কমিশনর সূত্রে পাওয়া শেষ হিসেব অনুযায়ী গড় ভোট দান ৮০ শতাংশ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই ভোট কংগ্রেস-তৃণমূল ও বামফ্রন্ট তিন পক্ষের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাতে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক দক্ষতারও পরিচয়ও হতে চলেছিল এবারের পুরভোট। তবে ভোট শেষ হতেই শরিকদল কংগ্রেসের অভিযোগ, সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়নি বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে জানান। পুলিসের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
শুধু কংগ্রেস নয়, নির্বাচনে রিগিং-এর অভিযোগ আনল বামেরাও। দূর্গাপুরে বহিরাগতদের দিয়ে ভোট চালিয়েছে তৃণমূল বলে অভিযোগ করলেন বর্ধমানে সিপিআইএম-এর জেলা সম্পাদক অমল হালদার।
বস্তুত, শাসক দল প্রায় প্রতিটি পুরসভাতেই বহিরাগতদের দিয়ে ভোট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছে বামেরা। অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তৃণমূলের বহিরাগত বাহিনী। প্রতিটি পুরসভাতেই এক বা একাধিক বুথে বাম প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে বুথ থেকে বার করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও নিগৃহীত হয়েছেন পোলিং এজেন্টরা। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে নলহাটির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীকে পুলিস গ্রেফতার করায় প্রশাসনিক নিপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সকালেই দুর্গাপুরে সিপিআইএম ক্যাম্প অফিসে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তিন নম্বর ওয়ার্ডের সাত ও আট নম্বর বুথে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় একদল বাইক আরোহী। অভিযোগ তারা সকলেই তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক। ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুরের পাশাপাশি, সিপিআইএম কর্মী-সমর্থকদের নিগ্রহেরও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দু
দুর্গাপুরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৬টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাল বামফ্রন্ট। এই মর্মে মহকুমাশাসকের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ, এই বুথগুলিতে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের পোলিং এজেন্টকে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।
কুপার্স ক্যাম্প পুরসভা থেকেও বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর এসেছে। নদিয়ার কুপার্স ক্যাম্পের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে  এক মহিলা ভোটারকে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, পুলিসের সামনেই তৃণমূল কর্মীরা ওই মহিলাকে বলেন  ভোট দিলে রেশন থেকে কেরোসিন বন্ধ করে দেওয়া হবে। দশ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।  
হলদিয়ার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৭ জন ভোটারের পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আঠারো নম্বর ওয়ার্ডে ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সমর্থিত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে। তার জেরে বামকর্মী সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বচসা শুরু হলে পুলিস লাঠিচার্জ করে। পুলিস বৈধ ভোটারদের মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ সিপিআইএমের। অন্যদিকে, ওই ওয়ার্ডেরই দুটি বুথে বাম প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বারো এবং দুই নম্বর ওয়ার্ডে পুলিসের সামনেই তৃণমূল সমর্থিত বহিরাগতরা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুরভোটে অশান্তির খবর আসছে পাঁশকুড়া থেকেও। চোদ্দ নম্বর ওয়ার্ডের ২৬ নম্বর বুথে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনী বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করেই তৃণমূল সমর্থকরা ভোটের লাইনে গিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ।  তিন, চার, পাঁচ, আট ও সতেরো নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল সমর্থিত বহিরাগতরা ভোট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ বামেদের। সতেরো নম্বর ওয়ার্ডে ভোটারদের বুথে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নিরঞ্জন মণ্ডল নামে এক সিপিআইএম সমর্থককে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
আজ সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর এটাই প্রথম পুরভোট। জোট না-হওয়ায় একে অপরের মুখোমুখি তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস। হারানো জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় সিপিআইএমও। সবমিলিয়ে টানটান উত্তেজনা ছিল পুর নির্বাচনকে ঘিরে।

.