৯/১১-র মাস্টারমাইন্ডের মৃত্যু ঘোষণা বাইডেনের! কে এই জাওয়াহিরি? কেন তাকে মারল আমেরিকা?
রবিবার সূর্যোদয়ের সময়, আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তানের কাবুলে একটি বাড়ির বারান্দায় আসেন। বেশ কিছুক্ষন সেখানেই ছিলেন তিনি। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে যে তিনি প্রায়ই এই বারান্দায় আসতেন। মার্কিন আধিকারিকরা জানিয়েছেন রবিবার একটি মার্কিন ড্রোন আল-কায়েদা নেতার দিকে দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। সেই সময় তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। আফগানিস্তানের মাটি থকে মার্কিন সেনা সরে আসার মাত্র ১১ মাসের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে বড় সাফল্য পেল আমেরিকা। সোমবার এই খবর ঘোষণা করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে বড় সাফল্য আমেরিকার। জানা গিয়েছে গত সপ্তাহের শেষে আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা চালায় আমেরিকা। আর সেই আক্রমণেই মৃত্যু হয়েছে আল কায়দার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় আক্রমণ চালান আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন। সেই সময় এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন জাওয়াহিরি। পরবর্তীকালে আল কায়দাকে বাঁচিয়ে রাখা এবং তাঁকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি।
আফগানিস্তানের মাটি থকে মার্কিন সেনা সরে আসার মাত্র ১১ মাসের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে বড় সাফল্য পেল আমেরিকা। সোমবার এই খবর ঘোষণা করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আমেরিকায় হামলা চালানোর পরে প্রায় ২১ বছর তাঁকে ধরার চেষ্টা করলেও প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছে মার্কিন সেনা।
কে এই আয়মান আল-জাওয়াহিরি?
আমেরিকায় আক্রমণের পরে বিন লাদেনের পাশাপাশি আল জাওয়াহিরিকেও চিনে যায় বিশ্ব। জানা যায় এই আক্রমণ চালাতে বিন লাদেনের সাহায্যকারী ছিলেন তিনি। মিশরের রাজধানি কায়রো শহরে জন্মগ্রহণ করেন জাওয়াহিরি। ১৯৫১ সালের ১৯ জুন জন্ম হয় তাঁর। ছোট থেকেই ধর্মের বিষয় আগ্রহ ছিল তাঁর। একই সঙ্গে সবসময় কঠোর ইসলামিক রুলের পক্ষে ছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে সুন্নি ইসলামিক রিভাইভালের সবথেকে হিংস্র বিভাগে যোগ দেন তিনি। এই বিভাগ মিশর এবং অন্যান্য আরব দেশে সরকার বদলের প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
জাওয়াহিরি একজন চোখের শল্য চিকিৎসক হিসেবে নিজের জীবন শুরু করেন। একই সঙ্গে মধ্য-প্রাচ্য এবং মধ্য-এশিয়ায় সফর করেন তিনি। এই সফরের সময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগানদের যুদ্ধের সাক্ষী হন তিনি এবং তাঁর সঙ্গে দেখা হয় সৌদির ওসামা বিন লাদেন এবং অন্যান্য আরব নেতাদের। সেই সময় বিন লাদেন এবং অন্যান্য নেতারা আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে সরানোর যুদ্ধে সাহায্য করছিলেন।
১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতকে ইসলামিক মৌলবাদীরা হত্যা করার পরে মিশরীয় কারাগারে বন্দী হন জাওয়াহিরি। সেখানে নির্যাতনের শিকার শতাধিক জঙ্গিদের একজন ছিলেন তিনি। জীবনীকাররা জানিয়েছেন এই অভিজ্ঞতা তাকে আরও উগ্রপন্থী করেছে। সাত বছর পরে, বিন লাদেন যখন আল-কায়দা প্রতিষ্ঠা করেন তখন আল-জাওয়াহিরি তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
নিজের মিশরিয় সংগঠনকে আল কায়দার সঙ্গে যুক্ত করেন তিনি। তিনি আল-কায়দাকে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা এনে দেন। আল-কায়দাকে অনুসারীদের সংগঠিত করতে এবং বিশ্বজুড়ে হামলা চালানোর সুযোগ করে দেয় এই সাংগঠনিক শক্তি।
কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন জাওয়াহিরি?
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার জন্য আত্মঘাতী হামলাকারী, টাকা এবং পরিকল্পনার জন্য বেশ কিছু বছর সময় লাগে। লোকচক্ষুর আড়ালে এই কাজ করার পরে জাওয়াহিরি নিশ্চিত করেন যে ঘটনার পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে আল কায়দার বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হবে সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে পারবে তাঁরা।
আরও পড়ুন: Joe Biden: মার্কিন ড্রোন হামলায় মৃত ৯/১১-র মাস্টারমাইন্ড, 'ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হল' ঘোষণা বাইডেনের
৯/১১ –র ঘটোনার পরে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে আল কায়দাকে নতুন করে তৈরি করেন জাওয়াহিরি। ইরাক, এশিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলে আয় কায়দার নেতৃত্ব দেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই ৯/১১ পরবর্তী সময় বালি, জাকার্তা, মোম্বাসা, রিয়াধ, ইস্তানবুল, মাদ্রিদ, লন্ডন সহ বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ চালিয়ে যায় আল কায়দা। এর মধ্যে পসচিমি দুনিয়ায় তাদের শেষ আক্রমণের শিকার ছিল লন্ডন। ২০০৫ সালের এই আক্রমণে মৃত্যু হয় ৫২ জনের। এরপরেই আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে আমেরিকা এবং অন্যান্যদের ড্রোন এবং মিসাইল আক্রমণ বিভিন্ন আল কায়দা সন্ত্রাসবাদী এবং নেতাকে হত্যা করার পরে তাদের বিভিন্ন বিভাগ ধ্বংস হয়ে যায়।
কীভাবে মৃত্যু হল জাওয়াহিরির?
রবিবার সূর্যোদয়ের সময়, আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তানের কাবুলে একটি বাড়ির বারান্দায় আসেন। বেশ কিছুক্ষন সেখানেই ছিলেন তিনি। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে যে তিনি প্রায়ই এই বারান্দায় আসতেন। মার্কিন আধিকারিকরা জানিয়েছেন রবিবার একটি মার্কিন ড্রোন আল-কায়েদা নেতার দিকে দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। সেই সময় তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বেশ কিছুদিন ধরেই আফগানিস্তানে তার উপস্থিতির বিষয়ে সন্দেহ করা হচ্ছিল বলে জানানো হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা এই বছর জানতে পারেন জাওয়াহিরির স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে সম্প্রতি কাবুলের একটি নিরাপদ বাড়িতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
মার্কিন কর্তারা জানিয়েছেন বাইডেন সহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ নেতা শেষ কিছু মাস ধরে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করেন এবং তাঁর বারান্দায় দাঁড়ানোর অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করেন। এরপরেই তাঁকে মারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেই জানানো হয়েছে।