কোন দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে
২০১১ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সমীক্ষা অনুযায়ী সারা বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য সেরা ও নিকৃষ্টতম দেশ একনজরে -
ওয়েব ডেস্ক: ২০১১ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সমীক্ষা অনুযায়ী সারা বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য সেরা ও নিকৃষ্টতম দেশ একনজরে -
সংসদীয় রাজনীতিতে মহিলাদের যোগদানের ক্ষেত্রে সেরা: রোয়ান্ডা। রোয়ান্ডার সংসদে ৮০টি আসনের মধ্যে ৪৫টি মহিলাদের দখলে। এটিই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সংসদে মহিলারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অন্যদিকে ওমান, কাতার, সৌদি আরব, বেলিজের সংসদে একজনও মহিলা সদস্য নেই।
শিশু কন্যা জন্মানোর সেরা স্থান গ্রিস। এ বিষয়ে নিকৃষ্টতম দক্ষিণ সুদান।
পৃথিবীতে মহিলাদের সর্বাধিক গড় আয়ু জাপানে, ৮৭ বছর। মহিলাদের গড় আয়ু সর্বনিম্ন লেসোথোতে, মাত্র ৪৫ বছর।
আমেরিকা পৃথিবীতে সর্বাধিক মহিলা অ্যাথলিট তৈরি করে। আরবের দেশগুলি এবিষয়ে সব থেকে নীচে অবস্থান করছে। সেখানে মেয়েদের এখনও খেলাধুলোয় অংশগ্রহণের অধিকার নেই।
জামাইকাতে উচ্চ আয়ের ৬০% চাকরি মেয়েদের দখলে। সেখানে ইয়েমেনে উচ্চ আয়ের মাত্র ২% চাকরি মেয়েরা করেন।
লেসোথোতে নারী শিক্ষার হার পৃথিবীতে সর্বাধিক। সেদেশে ৯৫% মহিলারাই স্বাক্ষর। ইথিওপিয়াতে প্রতি ১০০ জনে মাত্র ১৮ জন শিক্ষার আলো দেখতে পায়।
রাজনীতিতে যোগদান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সহ বিভিন্ন বিষয়ে সামগ্রিকভাবে আইসল্যান্ড মহিলাদের পক্ষে বসবাসের সেরা স্থান দখল করে।
পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র আমাদের দেশে প্রতি ১০০০ জন পুরুষ প্রতি নারীর সংখ্যা বর্তমানে ৯৪০। মাত্র ৬৫% মহিলারা স্বাক্ষর। মনে রাখতে হবে স্বাক্ষর আর শিক্ষিত (অন্তত ক্লাস এইট পাস) এই শব্দ দুটির মধ্যে পার্থক্যটা কিন্তু কয়েক যোজনের। একশ পাঁচ বছর বয়সের নারী দিবসের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে এদেশে সামগ্রিক ভাবে মেয়েদের অবস্থার দিকে একবার চেয়ে দেখলে শিউড়ে উঠতে হয়। গণধর্ষণের প্রতিবাদে যে দেশ উত্তাল হয়, সেই দেশেই সোনি সোরির যৌনাঙ্গে নুড়ি গোঁজে পুলিস। আফস্পার লাগাতার ধর্ষণের শিকার হন কাশ্মীর, মণিপুরের মহিলারা। ১৯৮৪ সালের শিখ হত্যা হোক বা গুজরাত দাঙ্গা, সবকিছুই মেয়েদের উপর শারীরিক নিগ্রহের বিষয়ে কোথাও যেন একবিন্দুতে মিশে যায়। সলওয়া জুরুমের নামে আদিবাসী মেয়েদের উপর চলে যৌন নির্যাতন। শ্বশুর ইমরানাকে ধর্ষণ করলে সমাজপতিরা সেই ধর্ষককেই ইমরানার স্বামী বলে ঘোষণা করে। হেতাল পারেখ, অনিতা দেওয়ান, জেসিকা লাল, প্রিয়দর্শিনী মাট্টু, নয়না সাহানি বা গুয়াহাটির সেই মেয়েটির মত গুটিকয়েক নাম হয়ত সংবাদমাধ্যমের সৌজন্য লাভ করে। কিন্তু বাকিরা?
এদেশে পণপ্রথায় ঠিক কত জন মেয়ে বলি হয়েছে তার হিসাব কি কারও কাছে আছে? ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মেয়ে হওয়ার অপরাধে জন্মের পরেই নুনের পুঁটলি মুখে ঠেসে খুন করা হয় অগুনতি শিশুকে। কারও কারও তো আবার পৃথিবীর মুক্ত বাতাসের স্বাদ নেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগটুকুও হয় না। ভ্রূণেই শেষ করে দেওয়া হয় তাদের। বাড়িতে ছোট ভাইয়ের শিক্ষার সুযোগ করে দিতে কত শত মেয়েকে যে নিজের ন্যূনতম শিক্ষার অধিকার বিসর্জন দিতে হয় তারই বা হিসাব রাখে কে। এদেশে এখনও বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে গণ্য করাই হয় না। নাবালিকা বিয়ে তো আকছার ঘটে। বউ পেটানোতো এদেশের ট্র্যাডিশন। লিঙ্গ বৈষম্যের থাবা অপুষ্টিকেও ছাড়ে না। না খেতে পেয়ে অপুষ্টিতে এদেশে পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি মেয়েরা প্রাণ হারায়। আসলে এদেশের অধিকাংশ মেয়েরাই জানে না প্রতিনিয়ত কী বিপুল নিগ্রহের শিকার হতে হয় তাদের। `ঐতিহ্য`, `পরম্পরার` মত ভারী শব্দের নীচে জোর করে চেপে রাখার চেষ্টা চলে এদেশের মেয়েদের কণ্ঠস্বর। কখনও আত্মত্যাগের মত মহান শব্দের আড়ালে মুড়ে রাখার চেষ্টা হয় নিগ্রহকে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এদেশের মেয়েদের জন্মের পর থেকেই যা হচ্ছে, যেটা হচ্ছে সেটাই নিয়ম, সেটাই স্বাভাবিক বলে শেখানো হয়।
তাদের ভাবতে শেখানো হয় পুরুষরা উন্নততর। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বেড়ে ওঠা এদেশের বেশির ভাগ মহিলাদের নিজেদের সামগ্রিক অধিকার সম্পর্কে কোনও ধারণাই তৈরি হয় না। নাৎসি আক্রমণ হোক বা `৭১-এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। দুই দেশ, দুটি জাতি, দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে যে কোনও রকম হানাহানির শেষটুকু হয়েছে মেয়েদের উপর শারীরিক নিগ্রহের মধ্য দিয়েই। এখনও গৃহযুদ্ধে অশান্ত মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের খাতিরে ধর্ষণ করা হয় মেয়েদের। মহিলাদের ভোটাধিকার নেই আরবের বিভিন্ন দেশে। সমশ্রমে সমবেতনের অধিকার নেই দক্ষিণ কোরিয়ার মত দেশের মেয়েদের। সমকামি হওয়ার অপরাধে খুন হতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বহু মেয়েকে। ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত কোটি কোটি মহিলা। থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডের রাস্তায় বাজারি বস্তুর মত ভোগ্য সামগ্রী হিসাবে বিক্রি হয় নারী শরীর। এমনকী, উন্নত ও উন্নয়নশীল পশ্চিমি দেশগুলোতেও সামগ্রিক ভাবে মেয়েদের অবস্থানটা মোটেও অসাধারণ কিছু নয়। এখনও মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রে ধর্ষণের সংখ্যা ভারতের থেকে অনেক বেশি।
এত সব কিছুর মাঝেই আজ ১০৬তম নারী দিবস। অর্ধেক আকাশের অধিকারের দাবিতে আরও একবার শপথ গ্রহণের দিন।