বিমানবন্দর বিক্রি করতে চাইছে শ্রীলঙ্কা, ভারত কিনলে লাভ কী?
পূর্বসূরী মহিন্দা রাজাপক্ষের সরকারের সমালোচনা করে এদিন রনিল জানান, হামবানটোটা বন্দর ছিল ‘সাদা হাতি’। এর ভরণপোষণ করতে প্রচুর ব্যায় হত অথচ ২০১১ সাল পর্যন্ত ওই বন্দরে সরকারের মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩০ কোটি মার্কিন ডলার
নিজস্ব প্রতিবেদন: ঋণের চোরাবালি থেকে বাঁচতে এখন একটাই পথ। মাতালা রাজাপক্ষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ভারতের কাছে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার সংসদে এমনটাই জানান সে দেশের প্রধানমন্ত্রী রনিল উইকরেমেসিঙ্গে। উল্লেখ্য, অতীতে শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর বিক্রি করা হয়েছে চিনকে।
আরও পড়ুন- গুহায় শিশুদের আটকে পড়ার দায় নিয়ে আবেগঘন চিঠি কোচের, উত্তর দিলেন পরিজনরাও
পূর্বসূরী মহিন্দা রাজাপক্ষের সরকারের সমালোচনা করে এদিন রনিল জানান, হামবানটোটা বন্দর ছিল ‘সাদা হাতি’। এর ভরণপোষণ করতে প্রচুর ব্যায় হত অথচ ২০১১ সাল পর্যন্ত ওই বন্দরে সরকারের মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩০ কোটি মার্কিন ডলার। ফলে সেটিকে চিনের কাছে বিক্রি করে বড় 'সাফল্য' মিলেছে। রনিলের আরও বক্তব্য, মাতালা বিমানবন্দর বিক্রির জন্য প্রথমে চিনের সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে তাদের তরফে সাড়া না পাওয়া ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তাঁর আশা, খুব দ্রুত এই বিষয়টির নিস্পত্তি হবে। বিমানবন্দর অধিগ্রহণে ভারতের যে সম্মতি রয়েছে, তা নিশ্চিত করেছে শ্রীলঙ্কার পরিবহণ মন্ত্রক।
চিনে অধীনে রয়েছে শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর
শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাজাপক্ষ বিমানবন্দরের ৭০ শতাংশ মালিকানা স্বত্ব থাকবে ভারতের। আর ৩০ শতাংশ শ্রীলঙ্কার। যদিও ভারতের তরফে এ বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র বিমানবন্দর পরিকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হবে। উড়ানের পরিচালনার ভার থাকবে শ্রীলঙ্কার হাতেই। যেমনটা চিনা মার্চেন্টস গ্রুপ সংস্থাকে ১১০ কোটি ডলারের বিক্রি করে দেওয়া হামবানটোটা বন্দরের ক্ষেত্রেও করা হয়েছে। এই বন্দরে জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও অবশ্য শ্রীলঙ্কার হাতেই রয়েছে।
আরও পড়ুন- থাইল্যান্ডের গুহা থেকে বার করা হল ৬ শিশুকে, এখনো বাকি ৭
শ্রীলঙ্কার এই বিমানবন্দরের অধিগ্রহণ নিয়ে ক্রমশ জল্পনা বাড়ছে বিশেষজ্ঞ মহলে। তাঁদের মতে, ভারতের বিমানবন্দরগুলিই আর্থিকভাবে অলাভজনক, সেক্ষেত্রে ভিন দেশের বিমানবন্দরে অধিগ্রহণ করে ভারত কতটা লাভবান হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাজাপক্ষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ইতিমধ্যে ক্ষতিতে চলছে। ফলে, লাখ টাকা দিয়ে ‘মরা হাতি’ কিনে লাভ কী?
জানা যাচ্ছে, মহিন্দা রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত হয় তাদের। চিনের থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েই রাজাপক্ষের কেন্দ্রে তৈরি হয় হামবানটোটা বন্দর। ২০১৫ সালে রাজাপক্ষে ক্ষমতা থেকে সরে গেলে আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা সরকার। তবে, দ্বীপরাষ্ট্রের উপর চিনের আধিপত্য যে ভীষণভাবে সক্রিয়, তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে ভারত। চিনা প্রেসিডেন্ট জিনপিং-এর ৫ হাজার কোটি ডলারের এই স্বপ্নের ‘ওবর’ প্রকল্পের মাধ্যমে হামবানটোটা বন্দরকে জুড়ে বঙ্গোপসাগর-সহ দক্ষিণ ভারতের উপর নজরদারি রাখতে চায় বেজিং। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হামবানটোটা বন্দর থেকে রাজাপক্ষ বিমানবন্দরটি দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। তাই, এই বিমানবন্দরটি ভারত অধিগ্রহণ করলে শ্রীলঙ্কার মাটিতে বসেই চিনের চোখে চোখ রেখেই পালটা নজরদারি চালাতে পারবে ভারতও।
আরও পড়ুন- আশঙ্কা কাটেনি, খুদে ফুটবলারদের উদ্ধারে পাশে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, জাপান-ও