Rohingya Refugee Camp Exclusive: ভাসান চরে প্ল্যানড গ্রাম! রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ

কেমন সেই রোহিঙ্গা গ্রাম? রোহিঙ্গাদের (Rohingya) প্রত্যাবর্তনে ভারতের সহযোগিতা কেন এত প্রয়োজন বাংলাদেশের? আর কেনই বা ভারত সহযোগিতা করবে বাংলাদেশেকে? কী যুক্তি বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্কের কর্তাদের?

Edited By: সুদেষ্ণা পাল | Updated By: Jun 30, 2022, 12:45 PM IST
Rohingya Refugee Camp Exclusive: ভাসান চরে প্ল্যানড গ্রাম! রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ
ভাসান চরে প্ল্যান্ড গ্রাম

মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য: রোহিঙ্গাদের (Rohingya Crisis) প্রত্যাবর্তনে ভারতকে (India) পাশে চায় বাংলাদেশ (Bangladesh)। সেপ্টেম্বরে হাসিনা সফরে উঠতে পারে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ। চিনকে পাশে রেখে জারি মায়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও। জি ২৪ ঘণ্টাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন বাংলাদেশ সরকারের বিদেশ সচিব মাসুদ বিন মোমেন। 

সত্তদের দশক থেকেই বাংলাদেশে আসছেন রোহিঙ্গারা। তবে আরাকান প্রদেশ থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় ঢেউটা বাংলাদেশকে ধাক্কা দেয় ২০১৭ সালের অগস্ট মাস থেকে। বাংলাদেশের সরকারি হিসেব বলছে, তখন থেকে ৭ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা দু’দেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের উখিয়া উপজেলার সংরক্ষিত অরণ্য অঞ্চলে এসে ওঠে। লাখ লাখ শরণার্থীকে জায়গা দিতে ২৫টি ক্যাম্পে ভাগ হয়ে গড়ে ওঠে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবির কুতুপালং। আগামী অগস্টে পাঁচ বছর পূর্ণ হবে পৃথিবীর বৃহত্তম রিফিউজি ক্যাম্প কুতুপালংয়ের (Rohingya Refugee Camp)। যে রোহিঙ্গা রিফিউজি যে ক্যাম্পের বাসিন্দারা এখন বড়সড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় কুতুপালং রিফিউজি ক্যাম্পের মোট এলাকা ৬.৫ একর। ২৫টি ক্যাম্পে বসবাসকারী প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে নথিভুক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ২৫ হাজার প্রায়। নথিভুক্তহীন আরও কয়েক লক্ষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মোট সংখ্যাটা ১৪ লক্ষের আশেপাশে। এখন এই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারকে কী কী সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে? বাংলাদেশ সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জটাই বা কোথায়?

১) রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আশঙ্কা বাংলাদেশ প্রশাসনের।

২) বাড়ছে মাদক পাচার, নারী পাচার, ক্যাম্পের মধ্যে ছোট-বড় হিংসার ঘটনা।

৩) কোভিড বিপর্যয় আর তারপর রুশ-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে বিদেশি ফান্ডিং কমেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে নজর ঘুরিয়েছে “ফান্ডিং এজেন্সি”রা। ফলে কমতে শুরু করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আন্তর্জাতিক বরাদ্দ। চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের বরাদ্দের মাত্র ৩৪ শতাংশই মিলেছে। যার অর্থ প্রতি রোহিঙ্গা পিছু বরাদ্দ আদতে ৯৯ সেন্ট।

৪) বিশ্বের বরাদ্দ কমায় রোহিঙ্গাদের প্রতিদিনের খরচ সামাল দিতে গিয়ে চাপ পড়ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বাড়ছে মূদ্রাস্ফীতি। বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে হাসিনা সরকারকে। ক্ষুব্ধ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

৫) দ্রুত গতিতে সংখ্যায় বাড়ছে রোহিঙ্গারা। প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিবছর অন্তত ৩৫ হাজার শিশু জন্মাচ্ছে এই ক্যাম্পগুলিতে।

৬) রোহিঙ্গারা নিজেদের কাঁটাতারের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে স্বল্প টাকায় শ্রম দান করছেন স্থানীয় এলাকায়। ফলে কাজ হারাচ্ছেন এলাকার সাবেক বাসিন্দারা। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন তাঁরা।

৭) ২০২৩-এ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে তা আগামী ভোটে সমস্যায় ফেলতে পারে হাসিনা সরকারকে। 

এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব মায়ানমারে ফেরানো-ই এখন লক্ষ্য বাংলাদেশ সরকারের। আর সে কাজে এশিয়ার দেশগুলি, বিশেষত ভারতের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। আগামী সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনার ভারত সফরেও এ কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে ফের তুলতে পারেন বলেই ইঙ্গিত সেদেশের বিদেশমন্ত্রক সূত্রে। কিন্তু, প্রশ্ন হল রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে ভারতের সহযোগিতা কেন এত প্রয়োজন বাংলাদেশের? আর কেনই বা ভারত সহযোগিতা করবে বাংলাদেশেকে? কী যুক্তি বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্কের কর্তাদের? এপ্রসঙ্গে সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিসের ফাউন্ডিং চেয়ারম্যান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা ও প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে দীর্ঘ মেয়াদি সমাধান সূত্র বের করতেই ভারতের সহযোগিতা কাম্য। কারণ, তাঁর কথায়, রাখাইন প্রদেশে অস্থিরতা তৈরি হলে, তা ভারতের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে। 

ঘটনা হল, বেশ কিছুবছর চুপচাপ থাকার পর ফের মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য পথে নেমেছেন রোহিঙ্গারাও। কিন্তু, বর্তমান মায়ানমারের পরিস্থিতিতে এখনও রাখাইন প্রদেশের একটা বড় অংশ দখল করে রেখেছে বলে দাবি করেছে আরাকান সেনা। পাশাপাশি বর্তমানে মায়ানমার সেনা এবং আরাকান সেনার মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি চলছে বটে, কিন্তু ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। পূর্বের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার জেরে অনেকটাই সতর্ক রোহিঙ্গারাও। ফলে মায়ানমারে ফেরার আগে বেশ কিছু দাবিদাওয়া তুলছেন তাঁরাও। তবে কক্সবাজারের সাধারণ মানুষ চাইছেন, তাঁদের জমি ছেড়ে ফিরে যাক রোহিঙ্গারা।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত ছাড়া পড়শি দেশগুলির সঙ্গে ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে বাংলদেশ সরকার। কী কী?

১) ইতিমধ্যেই চিনের সহযোগিতায় বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ এবং মায়ানমার সরকার। গত মাসেই হওয়া এমন এক বৈঠকে ধাপে ধাপে রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে সদর্থক আলোচনা হয়েছে বলে খবর।

২) রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি অসামাজিক কাজের উপর লাগাম পরাতে ভাসান চর এলাকায় প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করেছে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যেই ভাসান চরে তৈরি হয়েছে প্ল্যানড গ্রাম।

বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রে খবর, ৩০ হাজারের কাছাকাছি রোহিঙ্গাদের ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম থেকে জলপথে ২ ঘণ্টার দূরত্বে থাকা এই ব-দ্বীপে সরানো হয়ে গিয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী দিনে ধীরে ধীরে আরও রোহিঙ্গাদের সরানো হবে ভাসান চরে। জমির অপ্রতুলতা না থাকায় প্রয়োজনে আরও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গাকেও সেখানে সরানো হতে পারে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

আরও পড়ুন, Rohingya Refugee Camp Exclusive: 'প্রাইভেটে নাইনে, লার্নিং সেন্টারে টুয়ে,' রোহিঙ্গা শিশু ফাঁস করল বেহাল শিক্ষাব্যবস্থা

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)      

.