পথ আটকে মার্কিন রণতরী, মালাক্কায় চাপে পড়েই কি লাদাখে আস্ফালন চিনের?

আমেরিকার মহড়া নিতে নিজের নৌশক্তি বাড়িয়েছে বেজিং।

Updated By: Jul 4, 2020, 11:54 PM IST
পথ আটকে মার্কিন রণতরী, মালাক্কায় চাপে পড়েই কি লাদাখে আস্ফালন চিনের?

নিজস্ব প্রতিবেদন: সাগরে বেকায়দায়। তাই কি পাহাড়ে আস্ফালন? লাদাখে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ওদিকে ভারত মহাসাগরে ড্রাগনের দমবন্ধ। পথ আটকে মার্কিন রণতরী। তেল আসবে কোন পথে? এটাই চিনের মালাক্কা অনিশ্চয়তা (Malacca Dilemma)। 

ভারত ও চিন। হিমালয়ের দুই পাশে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন দুই সভ্যতা। একদিকে আর্যজাতি। অন্যদিকে আগ্রাসী হুনজাতি। দুর্লঙ্ঘনীয় পাঁচিল হয়ে এতদিন আর্যাবর্তকে রক্ষা করেছে হিমালয়। সেই হিমালয় আক্রান্ত হল ১৯৬২ সালে। চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রমাণ করল, হিমালয়ও হতে পারে যুদ্ধক্ষেত্র। ১৯৬২-র পর থেকে লাগাতার লাদাখ দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চিন। পণ্ডিত নেহরুর কাছে যা ছিল নীরস ভূখণ্ড, চিন সেখানেই দেখেছে সামরিক সম্ভাবনা। গালওয়ানে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ চিনের সেই মানসিকতারই পরিচয়। কিন্তু, লাদাখ দখলে কেন এত মরিয়া চিন? এই উত্তর লুকিয়ে রয়েছে দক্ষিণে- দক্ষিণ চিন সাগরে (South China Sea)।  

ভারতের পশ্চিম দিক দেখে শ্রীলঙ্কার নীচ দিয়ে, আন্দামান নিকোবর পেরিয়ে মালয়েশিয়া আর ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ চিন সাগর হয়ে উত্তর পূর্ব দিকে সাংহাই। এই হচ্ছে আরব থেকে চিনে পেট্রো পরিবহণের মূল পথ। চিনের ৮০% পেট্রো আমদানি এই রাস্তা ধরেই। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সরু প্রণালীটিই মাল্লাকা (Malacca)। এহেন মালাক্কা নিয়েই চিনের মাথাদের রাতের ঘুম উড়ে গেছে। কারণ মালাক্কা প্রণালীর ঠিক মুখে সিঙ্গাপুরে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি। মাল্লাকা সংশয়ের কথা প্রথম ২০০৩ সালে বলেছিলেন চিনের তত্‍কালীন প্রেসিডেন্ট হু জিন তাও। তার ওপর আন্দামানে ভারতীয় নৌবাহিনীর উপস্থিতিও চিনের পেট্রোপথে কাঁটা। বাধা কাটাতে বিকল্প পেট্রোরুটের পথ খুঁজছে চিন (China)। মায়ানমারের মধ্য দিয়ে সরাসরি চিনে পাইপলাইন তৈরির চেষ্টা করছে বেজিং (Beijing)। মালাক্কাকে পাস কাটাতে থাইল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে ট্যাঙ্কার চলার খাল কাটা হচ্ছে। চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডরও বিকল্প রুট। যা শেষ হয়েছে বালুচিস্তানের গদর বন্দরে।মালাক্কা প্রণালীর আরও দক্ষিণ পূর্ব দিকে সুন্দা প্রণালী বা লাম্বাক প্রণালীও বিকল্প রুট করার চেষ্টা করে দেখেছে বেজিং। 

কোনও বিকল্পই বেজিংয়ের মূল পেট্রোরুটের বিকল্প হতে পারেনি। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে সাগরের জায়গাগুলি চিনের মূল ভূখণ্ড থেকে বহুদূরে। মহাসাগরের মাঝখানে। তাই পেট্রোরুটের সব দেশকে দলে টানার চেষ্টা করেছে বেজিং। 

ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রগুলির সঙ্গে লাঠি ও গাজর নীতি নিয়ে কূটনীতি করে বেজিং। যে দেশকে ঘুষ দেওয়া সম্ভব, তাকে ঘুষ দেয়, যাকে হুমকি দেওয়া সম্ভব তাকে হুমকি দেয়।চিনের পেট্রোরুটে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জও পড়ে। ভারতকে হুমকি বা ঘুষ, কোনওটাই দেওয়া সম্ভব নয়। তাই লাদাখে আক্রমণ। তাই পাকিস্তানকে মদত জুগিয়ে ভারতকে উত্তরে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা। কিন্তু, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় চিনের প্রতিযোগী শুধু ভারত নয়। প্রশান্ত মহাসাগরের জাপান, হাওয়াই, গুয়াম এবং ফিলিপিন্সে নৌঘাঁটি রয়েছে আমেরিকার
প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে মার্কিন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার স্টেশনড রয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও চিনের সম্পর্ক ভাল নয়। নিজের পেট্রোরুট নিরাপদ করতে অগুনতি নকল দ্বীপ, নৌঘাঁটি তৈরি করেছে চিন। তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে জাপান, ভিয়েতনাম-সহ অধিকাংশ দেশ। 

আমেরিকার মহড়া নিতে নিজের নৌশক্তি বাড়িয়েছে বেজিং। মার্কিন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার ধ্বংস করতে বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে চিন। পরমাণু এবং ডিজেল শক্তিচালিত প্রায় ৭০ টি ডুবোজাহাজ চিন জলে ভাসিয়েছে। মার্কিন নৌবহরের জন্যই তৈরি করা হয়েছে পরমাণু অস্ত্রবহণে সক্ষম ডুবোজাহাজ। অসংখ্য যুদ্ধজাহাজ জলে ভাসিয়ে সমুদ্রযুদ্ধে দাপট দেখাতে চায় চিনের লালফৌজ। পেট্রোরুটের একাধিক বন্দরে নৌঘাঁটি তৈরি করে কাঁটা সরানোর চেষ্টায় আছে চিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ার তৈরির চেষ্টাও বেজিং চালাচ্ছে জোরকদমে।

চিন নিজেও জানে, ভৌগলিক দিক দিয়ে যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে তারা রয়েছে, তা কোনওদিন তারা কাটাতে পারবে না। সেই জন্যই হয়তো লাদাখ দখল করে ভূগোলটাকেই বদলে জিতে চায় তারা। কিন্তু, দক্ষিণ চিন সাগরের ধাঁধার উত্তর কখনই উত্তরের লাদাখে পাবে না বেজিং। 

আরও পডুন- ভিডিয়ো: নমোর সফরের পর 'হাই জোশ' IAF-র, লাদাখে চক্কর যুদ্ধবিমান, অ্যাপাচে কপ্টারের

.