"পদ্মা-মেঘনা-যমুনা/ শহবাগের মোহনা", নতুন বছরেও জারি থাক...
সৌরভ পাল
ব্লগ। সাইবার (ইন্টারনেট) স্পেসে নিজের মতামত বিশেষ। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের যে কোনও মানুষ, যে কোনও বিষয়ে নিজস্ব মতামত লেখেন নিজেদের ব্লগে। আর যারা ব্লগ লেখেন তাঁদের বলা হয় ব্লগার। নাগরিকের বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, কম বেশি পৃথিবীর সমস্ত দেশেই স্বীকৃতি পেয়েছে। এমনকি ইউনেসকো তাঁদের আন্তর্জাতিক সন্মেলনে নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই স্বাধীন অধিকারের অধিকারী হয়েও ২০১৫ সালে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন স্বাধীনচেতা ব্লগার। ইসলামের গোড়ামি ও জেহাদের বিরুদ্ধে লিখেই প্রাণ হারান অভিজিৎ রায়, ওয়াসিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নিলয় নীল, ফয়সাল আর্মিন দীপন।
ডঃ অভিজিৎ রায়
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ খুন হন ডঃ অভিজিৎ রায়। প্রবাসী বাঙালি অভিজিৎ স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন একুশে বই মেলা দেখতে। মার্কিন মুলুকে থাকাকালীনই হুমকি পেয়েছিলেন। তোয়াক্কা না করেই কলমে সোচ্চার হয়েছিলেন। পরিণতি নির্মম মৃত্যু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তাঁকে কুপিয়ে খুন করে বাংলাদেশের ইসলাম রক্ষণশীল জঙ্গী গোষ্ঠী। বিস্তারিত দেখুন
ওয়াসিকুর রহমান
৩০ মার্চ, ২০১৫ ঢাকার রাজপথে অভিজিতের মতই খুন হতে হয় ব্লগার ওয়াসিকুর রহমানকে। মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহক ইসলামের জেহাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন। এটাই ছিল 'অপরাধ'। 'টার্গেট সেট, খুন ব্লগার' ওয়াসিকুর রহমান।
অনন্ত বিজয় দাস
মে ১২, ২০১৫। সিলেটের রাস্তায় খুন মুক্তমনার লেখক অনন্ত বিজয় দাস। বিজ্ঞান-বিবর্তন ও বিপ্লব, নিজের বইতে যে, ভাব ধারাকে তুলে ধরেছিলেন মুক্তমনাতেও সেই একই বিষয়ে লিখতেন বিজয়। নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করতেন ম্যাগাজিন, 'মুক্তি'।
নিলয় নীল
নিলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়। ৭ অগাস্ট, ২০১৫ অনসুরাল্লাহ্-আল-ইসলামের (আলকায়দা গোষ্ঠী) সদস্যদের হাতে খুন হন ব্লগার নিলয়।
ফয়সাল আর্মিন দীপন
৩১ অক্টোবর, ২০১৫ নির্মম হত্যার শিকার হন ৪৩ বছর বয়সী ব্লগার ফয়সাল আর্মিন দীপন।
স্মরণ করতেই হচ্ছে তাঁদের কথা, অভিজিৎ-নিলয়-বিজয়রা যাঁদের রক্তবীজে বেড়ে উঠেছিলেন। বুলেটে বুক পেতেছেন অথচ কখনও তাঁদের হাতে কেঁপে ওঠেনি মুক্ত চিন্তার কলম। আসিফ মহিউদ্দিন, আহমেদ রাজীব হায়দার, সান্নিয়ার রহমান ও সফিয়ুল ইসলাম। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি মুক্তমনাদের, সেলাম জানাচ্ছি আসিফ, সফিয়ুল, রাজীবদের, যাঁদের রক্তে ধুয়েছে মৃত্যু মৃত্যু খেলার রক্ত ঔরস। লাল গোলাপের পাহাড় ওদের কবরে, ওঁরা ছিল বলেই, ওঁরা লিখেছিলেন বলেই "শহবাগ" হয়েছিল, আর আকাশে গর্জন উঠেছিল "পদ্মা-মেঘনা-যমুনা/ শহবাগের মোহনা"।