শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থানের চক্রান্ত ব্যর্থ

প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি কট্টরপন্থী অংশ। আগাম খবর মেলায় এবার একই ধরনের পরিণতি থেকে রক্ষা পেলেন প্রয়াত বঙ্গবন্ধুর কন্যা হাসিনা ওয়াজেদ।

Updated By: Jan 19, 2012, 07:18 PM IST

প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি কট্টরপন্থী অংশ। আগাম খবর মেলায় এবার একই ধরনের পরিণতি থেকে রক্ষা পেলেন প্রয়াত বঙ্গবন্ধুর কন্যা হাসিনা ওয়াজেদ।
কিছু প্রবাসীর বাংলাদেশির সহযোগিতায় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন ও বর্তমান কিছু সদস্য শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। কিন্তু সময়মতো খবর মেলায় জামাতে ইসলামির মদতপুষ্ট সেনা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সরকার। কোনও সংবাদমাধ্যমের গোপন 'স্কুপ নিউজ' নয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে জানানো হয়েছে এ কথা।
১৯৭১ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাজাকার নেতা গোলাম আযমকে জেলে পাঠানোর পর সেনাবাহিনীর কয়েকজন প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চক্রান্ত নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরেই জল্পনা শুরু হয়েছিল রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের নানা প্রান্তে। বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে সে কথা স্বীকার করেছেন সেনাবাহিনীর পরিচালক (পিএস পরিদপ্তর) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাসুদ রাজ্জাক এবং সংশ্লিষ্ট সেনা আদালতের ভারপ্রাপ্ত জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ সিদ্দিক।

ব্রিগেডিয়ার রাজ্জাক জানিয়েছেন, চক্রান্তের অভিযোগে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এহসান ইউসুফ ও মেজর জাকির-সহ কয়েকজন সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যকে ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২৮ ডিসেম্বর একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং তার কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশের মিডিয়ার একাংশের দাবি, অভ্যুত্থানের চক্রান্তে সেনাবাহিনীর কুমিল্লা ডিভিশনের প্রধান (জিওসি) মেজর জেনারেল কামরুজ্জামানের জড়িত ছিলেন। গত সপ্তাহে তাঁকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। যদিও এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেননি ব্রিগেডিয়ার রাজ্জাক।
সেনাবাহিনীর তরফে আরও জানান হয়, অভ্যুত্থানের চক্রান্তে জড়িত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক নামে এক সেনা অফিসার গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে পলাতক। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে একটি কট্টরপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠীর সাহায্যে সেনাবাহিনীকে উত্তেজিত করে হাসিনা সরকারকে উত্‍খাতের মতলবে ছিল সে। এমনকী অভ্যুত্থানের চক্রান্ত ফাঁস ও কয়েকজন সেনা সদস্যের গ্রেফতারির পর পলাতক অবস্থাতেই গত ২৬ ডিসেম্বর ধৃতদের উপর 'অত্যাচার'-এর মিথ্যা কাহিনি বর্ণনা করে একটি প্ররোচণামূলক ই-মেল পাঠায় মেজর জিয়াউল। পরে তা নিষিদ্ধ সংঘঠন হিজবুত তাহরির সদস্য আবু সাইদের মাধ্যমে ফেসবুক-এর 'সোলজারস ফোরাম' নামে একটি পেজে আপলোড করায় সে।   
বাংলাদেশের ৪০ বছরের ইতিহাসে সেনা অভ্যুত্থানের উদাহরণ ভুরিভুরি। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ভোররাতে ধানমন্ডির বাসভবনে বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নিহত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট মুজিব। ওই বছরের ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতাচ্যূত করেন প্রেসিডেন্ট খোন্দকার মোশতাককে। সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান হন গৃহবন্দি। অবশ্য এর ৪ দিনের মাথাতেই কর্নেল আবু তাহের, মেজর জলিলের নেতৃত্বে 'সিপাহি জনতার বিপ্লব'-এ নিহত হন খালেদ। কিন্তু সেনাপ্রধানের পদ ফিরে পেয়েই মুক্তিদাতা তাহের-জলিলকে বন্দি করেন জিয়া। পরে ফাঁসিতে ঝোলান তাহেরকে।

এর পর ১৯৭৭ সালে সফর 'ক্যু'-এর মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন জিয়াউর রহমান। তাঁর আমলে ২১ বার ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। মারা যান বহু সামরিক-অসামরিক ব্যক্তি। কোর্ট মার্শাল প্রহসনে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় প্রায় দেড় হাজার সেনা ও বায়ুসেনা অফিসার এবং জওয়ানকে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সফরের সময় মেজর জেনারেল এম এ মঞ্জুরের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নিহত হন প্রেসিডেন্ট জিয়া।
এর পর তত্‍কালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেন মহম্মদ এরশাদের নির্দেশে দ্রুত বিদ্রোহ দমন করা হয়। নির্মমভাবে খুন করা হয় মঞ্জুর-সহ কয়েকজন বিদ্রোহী সেনা অফিসারকে। জিয়া হত্যার অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয় ১৩ জন সেনা আধিকারীককে। যদিও পরবর্তীকালে বিভিন্ন মহল থেকে এরশাদকেই জিয়া হত্যার নেপথ্যচক্রী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও তার আগেই ১৯৮২ সালে সেনা অভ্যত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে ঢাকার মসনদে বসেন এরশাদ।
সাম্প্রতিক কালে ২০০৮ সালে পিলখানার বিডিআর সদর দফতর সশস্ত্র বাহিনীর রক্তাক্ত অন্তর্কলহের সাক্ষী হয়েছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এই ঘটনায় জামাতে ইসলামির উসকানিতে বিদ্রোহী বিডিআর জওয়ানদের হাতে নিহত হন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ-সহ ৫৭ জন সেনা অফিসার।

.