সাত দেশে মোট সাত বার সাত পাকে বাঁধা পড়ল মার্কিন দম্পতি
সাত সাগর আর তেরো নদীর পারে 'স্বপ্নে দেখা রাজকন্যে আর রাজপুত্তুরে'র গল্পই বটে। তবে গল্প এবার হয়ে গেল সত্যি! আমেরিকার আটলান্টার বাসিন্দা মনোবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরের ছাত্র টিমোথি পিরকো টমলিন এবং পশু চিকিত্সক গ্যাব্রিলা স্যান্ডারবার্গ ঠিক করেছেন পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হবেন, কিন্তু এতে আর খবরের উপাদান কী আছে? আছে, আছে, কারণ, টিমোথি আর গ্যাব্রিলার ইচ্ছা, তাঁরা সাত দেশ ঘুরে সেইসব দেশের প্রথা অনুসারেই বিয়ে করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ, বেরিয়ে পড়লেন তাঁরা বিবাহ সফরে...হাতে মাত্র চল্লিশটা দিন... বিয়ে করতে হবে সাতবার...। চলুন ওদের সফরের রুট ম্যাপ ধরে আমরাও বেড়িয়ে পরি, ঘুরতে ঘুতেই জেনে নেওয়া যাবে গোটা গল্পটা-
ওয়েব ডেস্ক: সাত সাগর আর তেরো নদীর পারে 'স্বপ্নে দেখা রাজকন্যে আর রাজপুত্তুরে'র গল্পই বটে। তবে গল্প এবার হয়ে গেল সত্যি! আমেরিকার আটলান্টার বাসিন্দা মনোবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরের ছাত্র টিমোথি পিরকো টমলিন এবং পশু চিকিত্সক গ্যাব্রিলা স্যান্ডারবার্গ ঠিক করেছেন পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হবেন, কিন্তু এতে আর খবরের উপাদান কী আছে? আছে, আছে, কারণ, টিমোথি আর গ্যাব্রিলার ইচ্ছা, তাঁরা সাত দেশ ঘুরে সেইসব দেশের প্রথা অনুসারেই বিয়ে করবেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ, বেরিয়ে পড়লেন তাঁরা বিবাহ সফরে...হাতে মাত্র চল্লিশটা দিন... বিয়ে করতে হবে সাতবার...। চলুন ওদের সফরের রুট ম্যাপ ধরে আমরাও বেড়িয়ে পরি, ঘুরতে ঘুতেই জেনে নেওয়া যাবে গোটা গল্পটা-
প্রথম বিবাহ বাসর বসল ১৮ই মে জাপানের টোকিয়োতে। সাবেকি জাপানি কিমোনোস পোশাকে শিন্তো প্রথা মেনে চার হাত এক হল টিমোথি ও গ্যাব্রিলার। কনের কথায়, "জাপানি বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল সংক্ষিপ্ত। সম্পূর্ণটা মিটতে সময় লেগেছিল আধ ঘন্টা মতো। আমার কাকিমা ও তুতো ভাই-বোনেরা উপস্থিত ছিল এই বিয়েতে"।
জাপান থেকে এবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে উড়ে গেল এই মার্কিন দম্পতির স্বপ্ন সফর। ৩০শে মে বসল দ্বিতীয় বিয়ের আসর। একেবারে ঘরোয়া আবহে পশ্চিমী কায়দায় ধান ক্ষেতের মধ্যে তৈরি হল বিবাহ মঞ্চ। টিমোথি-গ্যাব্রিলা ছাড়া সেই বিয়ের একমাত্র সাক্ষী ও অতিথি হলেন মার্কিন মুলুক থেকে উড়ে আসা তাঁদেরই এক বন্ধু।
বিবাহ নাম্বার তিন। এবার ডেস্টিনেশন নেপালের পাটান। আগে থেকেই এক বৌদ্ধ সন্যাসীর সঙ্গে যোগাযোগ সেরে রেখেছিল দম্পতি। সেই অনুযায়ী, দোসরা জুন স্বর্ণ মন্দিরের নিকটে নিজেদের তৃতীয়বারের জন্য বেঁধে নিলেন টিমোথি-গ্যাব্রিলা।
এবার ভারত! হ্যাঁ, চতুর্থ বিয়ের জন্য মহামানবের সাগর তীরকেই বেছে নিয়েছিলেন 'রাজকন্যে ও রাজপুত্তুর'। ৭ই জুন চেন্নাই শহরে গ্যাব্রিলার অধ্যাপক মোহন কুমারের বাড়িতেই আয়োজন হল ছাত্রীর চার নম্বর বিয়ের। পূজারির উপস্থিতিতে একেবারে অগ্নিসাক্ষী করে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হল বিবাহ অনুষ্ঠান। তবে ভারতে এসে সত্যিই বিস্মিত হয়ে গেল এই বিস্ময় দম্পতি! এর আগের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে যেখানে নিজের পরিজন বা বন্ধুকে টেনে নিয়ে যেতে হয়েছিল সাক্ষী বা অতিথি করার জন্য, সেখানে চেন্নাইয়ে বিয়ের সময় না ডাকতেই জনা দশ পঁনেরো এসে হাজির নব দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাতে। এই না হলে ভারত! নববধূ বলছেন, "ভারতের মহান সংস্কৃতির ছোঁয়া পেয়ে আমরা সত্যিই ধন্য"।
ভারত থেকে তাঁদের পরের গন্তব্য কেনিয়া। সেখানে মাসাইমারাতে বর্তমান সপ্তাহেই মাসাই পরম্পরায় আদিবাসী পোশাক পরে পঞ্চম বিবাহ সেরেছেন মনোবিজ্ঞানের ছাত্র এবং পশু চিকিত্সক। কিন্তু ষষ্ঠ ডেস্টিনেশনটা জানলে তো আপনি অক্কা পাবেন! কারণ, ছয় নম্বর বিয়েটা এই দম্পতি সারবেন আকাশে। প্রাগে 'হট এয়ার বেলুনে'র মধ্যে ষষ্ঠ বিবাহ সুসম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়েছেন টিমোথি-গ্যাব্রিলা। তবে শুধু তারাই নয়, এই বিয়েতে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে উভয়ের মা-বাবা ও গ্যাব্রিয়েলের ভাইয়েরও। আর শেষ বিয়ে কোথায়?
শেষ তথা চূড়ান্ত বিয়েটি হবে আমস্টারডামে ক্যাথলিক নিয়মে। উপস্থিত থাকবেন বহু আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবরা।
কিন্তু হঠাত্ এমন অদ্ভুত শখ জাগলো কেন টিমোথি ও গ্যাব্রিলার? সাত বছর ধরে প্রেম করা এই জুটি বলছে, তাঁরা নাকি তিন বছর ধরে শুধু পরিকল্পনাই করেছেন কীভাবে সারবেন এই বিবাহ সফর। ওঁদের কথায়, "আমরা আমেরিকান কায়দায় বিয়ে করে নিতেই পারতাম। কিন্তু তাতে খুব একটা উপভোগ করতাম না। বিয়ের বিষয়টাকে আমরা প্রথম থেকেই ইন্টারেস্টিং করতে চেয়েছিলাম। আর তখনই ভেবেছিলাম, কেন আমরা বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে বিয়ে করব না?"
সত্যিই ধন্য প্রেম ও পরিকল্পনা বটে এই দম্পতির। তবে জানি, আপনি হয়ত জানতে চাইছেন এই মোক্ষম বিয়ের খরচের বহরটা ঠিক কত। সেটা অবশ্য জানাননি টিমোথি-গ্যাব্রিলা। বোধ হয় ঠিকই করেছেন, যারা টাকার হিসাব করেন তারা বোধ হয় এই কাণ্ডটি করে দেখাতে পারেন না। কত মানুষেরই তো আর্থিক সঙ্গতি থাকে, কিন্তু এমন ভাবনা কেবল এঁদেরই আছে। বিশেষ করে, বর্তমানের এই প্রেমহীন সময়ে বিশেষ করে যখন বিয়ে নামক বন্ধনটির উপর ক্রমশ ভরসা হারাচ্ছে যুব সমাজ, তখন টিমোথি-গ্যাব্রিলার এই অসাধারণ বিবাহ সফর সত্যিই অন্য বার্তা দেয়। ভাল থাকুন নবদম্পতি।