Afghanistan: ফিরছে সেই অন্ধকার যুগ! স্বাধীনতা হারিয়ে গৃহবন্দি আফগান মেয়েরা
১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তালিবানি শাসনে মহিলাদের শিক্ষা ও কাজের অধিকার ছিল না। মধ্যযুগের সেই শাসনই ফিরতে চলেছে বলে আশঙ্কিত আফগান মহিলা অধিকার কর্মীরা।
নিজস্ব প্রতিবেদন: বাড়ির বাইরে একা যেতে পারবেন না মহিলারা। পুরুষদের রাখতে হবে লম্বা দাঁড়ি। দু'দশক আগের তালিবানি ফতোয়ার সেই অন্ধকার দিনগুলি ফিরে আসার আশঙ্কায় ত্রস্ত আফগানরা নারীরা। সেই দিন ফিরে আসলে ডকে উঠবে পড়াশুনো, কাজকর্ম। নারী স্বাধীনতা তো বলাই বাহুল্য!
আফগান মেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে আজীবন লড়াই করে গিয়েছেন সর্দার-ই-কাবুলি গার্লস হাইস্কুলের অধ্যক্ষা নাসরিন সুলতানি। তালিবানি হুমকির মুখেও পড়েছেন। এখন আকুল পাথারে। নাসরিনের কথায়,'এত বছর ধরে মেয়েদের পড়াশুনো করতে উৎসাহ জুগিয়ে এসেছি। তাদের দিকে তাকাতে পারছি না। দুশ্চিন্তা হচ্ছে। চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে মেয়েদের বের করতে পারিনি।'
শির খান বন্দর দখলের পর ফতোয়া দিয়েছে তালিবান। বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছেন না মেয়েরা। স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন সাজেদা। তালিবানি ফতোয়ায় তিনি গৃহবন্দি। তাঁর কথায়,'বহু মহিলা সেলাই ও জুতো তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। এখন তাঁরা সন্ত্রস্ত।'
ইমামদের কাছে ১৫-র ঊর্ধ্বে তরুণী ও ৪৫ বছরের কম বয়সী বিধবাদের তালিকা চেয়েছে তালিবান। সেই সব মেয়েদের বিয়ে করবে তালিবানি জঙ্গিরা। তাজিকিস্তানের সীমান্তের কাছে ইবান জেলায় তালিবানিরা স্থানীয়দের মসজিদে জড়ো করে। নির্দেশ দেওয়া হয়, লাল ও সবুজ পোশাক পরা যাবে না। দাঁড়ি কামানো যাবে না। পাগড়ি পরা বাধ্যতামূলক। ষষ্ঠ শ্রেণির পর মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না।
গত মাসেই কান্দাহারের আজিজি ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়ে তালিবানি জঙ্গিরা। সেখানে কর্মরত ৯ জন মহিলা কর্মীকে ভয় দেখিয়ে বাড়ি পাঠায়। হুমকি দেওয়া হয়, কাজে আসা চলবে না। ঘরেই থাকতে হবে। হেরাট শহরের মিল্লি ব্যাঙ্কেও একই ঘটনা ঘটেছে। আজিজি ব্যাঙ্কের কর্মী নুর খতেরা বলেন,'কষ্ট করে ইংরেজি ও কম্পিউটার চালানো শিখেছিলাম।'
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারকে মহিলাদের সঙ্গে 'বিশ্বাসঘাতকতা' বলে মনে করছে মহিলা অধিকারকর্মী ফায়িজা কুফি। তাঁর কথায়,'আফগানিস্তানের মহিলাদের শিয়রে এখন বিপদ। গত ২০ বছরে মেয়েরা অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। যে শহরগুলি তালিবান দখল করেছে সেখানে মহিলারা কার্যত বন্দি হয়ে পড়েছেন।' জেহাদিদের সঙ্গে মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন কুফি।
মহিলাদের নিয়ে এবার অনেকখানি নরম অবস্থান নিয়েছেন তালিবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। তিনি বলেন,'মহিলাদের ব্যাঙ্কে কাজ করতে দেওয়া হবে কিনা এনিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ইসলামিক আইন প্রণয়নের পর চূড়ান্ত হবে।' যদিও তালিবান নেতার মুখের কথায় ভরসা নেই। ১৯৯৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তালিবানি শাসনে মহিলাদের শিক্ষা ও কাজের অধিকার ছিল না। মধ্যযুগের সেই শাসনই ফিরতে চলেছে বলে আশঙ্কিত আফগান মহিলা অধিকার রক্ষা কর্মীরা।
আরও পড়ুন- শিয়রে তালিবান, নথি ও কম্পিউটার ধ্বংস করে কাবুলের দূতাবাস ছাড়লেন মার্কিন কর্মীরা