ফুটবল মাঠের দাঙ্গাবাজদের মৃত্যুদণ্ড ঘিরে উত্তাল মিশর
বসন্ত বিপ্লবের সূচনার দিনে নতুন করে বিদ্রোহের সঙ্কল্প নিল মিশর। ঘটনাস্থল সেই তাহরির স্কোয়্যার। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ফুটবল ম্যাচকে ঘিরে ভয়াবহ দাঙ্গায় প্রাণ হারান ৭৪ জন। সেই দাঙ্গার মামলায় কায়রোর একটি আদালত শুক্রবার অভিযুক্ত ২১জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। ঘটনাচক্রে আদেশপ্রাপ্ত প্রত্যেকেই আল মাসরি নামক একটি ফুটবল দলের সমর্থক। মৃত্যুদণ্ডের খবর পাওয়া মাত্রই আল মাসরি দলের সমর্থকরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
বসন্ত বিপ্লবের সূচনার দিনে নতুন করে বিদ্রোহের সঙ্কল্প নিল মিশর। ঘটনাস্থল সেই তাহরির স্কোয়্যার। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ফুটবল ম্যাচকে ঘিরে ভয়াবহ দাঙ্গায় প্রাণ হারান ৭৪ জন। সেই দাঙ্গার মামলায় কায়রোর একটি আদালত শুক্রবার অভিযুক্ত ২১জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। ঘটনাচক্রে আদেশপ্রাপ্ত প্রত্যেকেই আল মাসরি নামক একটি ফুটবল দলের সমর্থক। মৃত্যুদণ্ডের খবর পাওয়া মাত্রই আল মাসরি দলের সমর্থকরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
পুলিসের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে তাঁদের। এই বিক্ষোভই হঠাৎ করে মুর্সি বিরোধিতার রূপ নেয়। পথে নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। শুরু হয় রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ। শনিবার রীতিমত রাষ্ট্র বিরোধী আন্দোলনের রূপ নিল এই সংঘর্ষ। শেষ খবর পাওয়া অবধি এখনও পর্যন্ত এই সংঘর্ষে মারা গিয়েছেন ২১ জন। আহত প্রায় ৫০০।
ক্ষোভটা জমছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই। মুর্সির বিরোধীতায় বিক্ষিপ্ত কিছু আন্দোলন তৈরি হলেও তা বিশাল রূপ নিচ্ছিল না। কিন্তু ফুটবল দাঙ্গার রায়কে কেন্দ্র করে হঠাৎ করেই জমে থাকা ক্ষোভ ব্যাপক রূপ নিল কায়রোর রাজপথে। যেখান থেকে হোসনি মুবারকের একনায়কতন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলতে, এক সময় এখান থেকেই শুরু হয়েছিল বিপ্লবের যাত্রা সেখান থেকেই মহম্মদ মুর্সির মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করার শপথ নিলেন মিশরের সাধারণ মানুষ। মুর্সি সরকারের বিরুদ্ধে আনলেন বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ।
২৫ জানুয়ারি, ২০১১। প্রতিবেশী দেশ তিউনিশিয়া থেকে বিপ্লবের ঝোড়ো হাওয়া নাড়া দিয়েছে মিশরকে। দেশ থেকে একনায়কতন্ত্রকে উত্খাত করতে ফারাওয়ের দেশে পথে নামেন অসংখ্য মানুষ। সকলেরই গন্তব্য তাহরির স্কোয়্যার। এর ঠিক দু`বছর পর ২৫ জানুয়ারি, ২০১৩। হওয়ার কথা ছিল বসন্ত বিপ্লবের দ্বিতীয় বার্ষিকী উদযাপন। কিন্তু তাহরির স্কোয়্যারের আকাশ ঢেকে গেল কাঁদানে গ্যাস আর পেট্রোল বোমার কালো ধোঁয়ায়। পাথর ছোড়া, আগুন লাগানো, নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, তার সঙ্গে তীব্র সরকার বিরোধী স্লোগান। পরিবর্তনের মিশরে এ যেন বিদ্রোহের রিপিট টেলিকাস্ট।
প্রেসিডেন্ট মুর্সির অনুগামীদের বাধা নিষেধ অগ্রাহ্য করেই শুক্রবার তাহরির স্কোয়্যারে জড়ো হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। ইসলামপন্থী মুসলিম ব্রাদারহুড তাঁদের বিদ্রোহকে চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। বিশ্বাসঘাতকতা করে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে গণতন্ত্রের স্বপ্ন। এই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি অশান্তি হয়েছে কায়রো এবং আলেকজান্দ্রিয়ায়। পাশাপাশি সুয়েজ, ইসমাইলিয়া এবং পোর্ট থেকেও গণ্ডগোলের খবর মিলেছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, তাঁরা উদার মনোভাবাপন্ন এবং উন্নত মিশরের স্বার্থে আন্দোলন করেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, মুসলিম ব্রাদরহুডের ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে উন্নয়নের সেই স্বপ্ন এখন কোমায় চলে গিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মুর্সি সংবিধানকে ধর্মের ছত্রছায়ায় নিয়ে আসায় সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ছ`মাস হল মিশরে ক্ষমতায় রয়েছেন মুর্সি। কিন্তু এর মধ্যেই দুর্নীতি আর আর্থিক সঙ্কটের সাঁড়াশি চাপে জেরবার দেশ। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র ধর্মীয় গোঁড়ামিকে অবলম্বন করে তাই বিরোধী দলনেতা হামদিন সব্বাহি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। বিপ্লবের স্মৃতিচারণের দিনে নতুন করে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন তিনি।