ডায়েরির পাতার অংশ

ডায়েরির পাতার অংশ

ডায়েরির পাতার অংশসাম্যব্রত জোয়ারদার

ডায়েরির শুরুতেই একটা মোমবাতি আঁকা। মাথায় আগুন নিয়ে একা, নিশব্দে পুড়ে যাচ্ছে। ফুরিয়ে যাচ্ছে। তবু আলো করে যাচ্ছে।
পরের পাতায় এক রহস্যময় নারীর মুখের অবয়ব। তাঁকে স্পষ্ট বোঝা যায় না। কেননা ছবি আঁকার পর কালি ঢেলে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তাঁর মুখশ্রী। বোধহয় লেখক, তাঁর মানসপ্রতিমাকে ডায়েরির পাতাতেও আড়াল করতে চেয়েছেন। লুকিয়ে রাখতে চেয়েছেন। তার মধ্যেও বোঝা যায় ওই রহস্যময় নারীর দীর্ঘ রাজহংসী গ্রীবা। এবং তাঁর খোলা চুল কাঁধ ছাড়িয়ে নীচে নেমে গেছে...

২৪ সেপ্টেম্বর
সেদিন সন্ধে থেকেই শাওন গগণে গোর ঘনঘটা। সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস। স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোর কুন্ডলী পাকানো বৃষ্টিধোঁয়াজাল। এতোল বেতোল বারিষ। শহরের সব পথ, সব রাস্তায় জল আর জল। কিছুক্ষণ পরেই লোডশেডিং। নিম্নচাপের সেইদিন, হাওয়ার দাপটে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল দেওয়াল। ভাইব্রেট করল সেলফোন। ইনবক্সে লেখা-বৃষ্টি নেমেছ। সঙ্গে একটা হাসিখুশি স্মাইলি।
সারারাত অবিশ্রান্ত বৃষ্টির শব্দের ভেতর কথাবার্তা শুরু হয় সেই রহস্যময় নারীর সঙ্গে...

২ নভেম্বর
যতবার মনে তার মুখ, মেঘে মেঘে খুলে যাচ্ছে চুল। সেই চুল মুখে জড়িয়েই তলিয়ে যাওয়ার শুরু। মৃত্যুরও শুরু হয়তবা।

মাঝের বেশ কিছু পাতায় হিজিবিজি কাটা। কোনও কিছু লিখে তা আবার সযত্নে কেটে মুছে দেওয়া। যেমন সেই রহস্যময় নারীর অবয়ব কালি ঢেলে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। একটা পাতায় সমুদ্রবসবুজ রঙের টিপ। বাসের টিকিট। নারীর দীর্ঘতম চুল সযত্নে রক্ষিত।

১৪ ফেব্রুয়ারি
গম্বুজঘরের মাথায় অজস্র ফড়িং উড়ছে। আজ বৃষ্টি হবে বোধহয়। সামনেই বাস স্ট্যান্ড। মানুষের ভিড়। সন্ধে নামছে। শহর আর শহরতলির বিভিন্ন রুটের বাস ছড়িয়ে পড়েছে শহরের পেট চিরে হাজারো গন্তব্যের দিকে। এই মীনাবাজারের আলোকিত নিওনসম্ভারের মধ্যে দাঁড়িয়ে ক্রমশ নির্জন হতে থাকে সে। একই শহর একই আকাশের নীচে রয়েছে সেই রহস্যময় নারী। অথচ সেই দূরত্ব চির অলঙ্ঘনীয় মনে হতে থাকে। দংশনের ব্যথায় নীল রঙের কালির দোয়াত উল্টে যায় সন্ধের আকাশে...

First Published: Thursday, February 14, 2013, 17:47


comments powered by Disqus