সুভাষের হাত ধরে বাম রাজনীতি, সে হাতে পদ্ম ধরলেন জ্যোতির্ময়ী

জ্যোতির্ময়ী জননেত্রী নন। জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ। সঙ্গে তাঁর স্বল্প রাজনৈতিক কেরিয়ার। এই পুঁজি নিয়ে পদ্মশিবিরে যোগদান। ২০২১ বিধানসভায় কি টিকিট পেতে চলেছেন জ্যোতির্ময়ী শিকদার?

Reported By: অধীর রায় | Edited By: সোমনাথ মিত্র | Updated By: Jun 9, 2020, 09:24 PM IST
সুভাষের হাত ধরে বাম রাজনীতি, সে হাতে পদ্ম ধরলেন জ্যোতির্ময়ী
ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন: শেষমেশ মঙ্গলবার জল্পনার অবসান। বিজেপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে  যোগ দিলেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ জ্যোতির্ময়ী শিকদার। কয়েকদিন  ধরে এই জল্পনা চলছিল।  কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সবুজ সংকেত আসার পরেই রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতরে গিয়ে কাস্তে-হাতুড়ি-তারার পরিবর্তে পদ্ম তুলে নিলেন প্রাক্তন সাংসদ জ্যোতির্ময়ী শিকদার।

পরিচিতি একজন অ্যাথলিট হিসাবে। সেখান থেকে রাজনীতির আঙিনায়। তাও আবার বাম মনস্ক রাজনীতিতে। দীর্ঘ সময় রাজনীতিতে থাকার পর কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন তিনি। একুশের নির্বাচনের আগে যখন ফিরলেন, তখন মাঝামাঝি নয়, একবারে উল্টো মেরুর রাজনীতিতে। রাজনৈতিক মহলে জোর কৌতূহল হঠাত্ জ্যোতির্ময়ী শিকদার বিজেপিতে কেন?  

তার আগে জেনে নেওয়া যাক জ্যোতির উত্থান:

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে নয়, এখনও জোতির্ময়ী শিকদারের দেশব্যাপী পরিচিত একজন ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে। ভারতীয় ক্রীড়া আঙিনায় সফল ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের তালিকায় অন্যতম জ্যোতির্ময়ী শিকদার। নদিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম দেবগ্রামে জন্মেও বিশ্বের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এই অলিম্পিয়ান। ১৯৯৫ সালে এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৮০০ মিটারে সোনা জেতেন। স্বপ্নের ফর্মে ছিলেন ১৯৯৮ সালে। সেই বছর ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে জোড়া সোনা জেতেন। আর এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছিলেন জোড়া ব্রোঞ্জ পদক।

এছাড়া আটলান্টা অলিম্পিক এবং বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে রাজীব খেলরত্ন, পদ্মশ্রী  এবং  অর্জুন সন্মানে সন্মানিত হন জ্যোতির্ময়ী শিকদারকে।

রাজনীতিতে কীভাবে প্রবেশ:

খেলোয়াড়ি জীবনেই তৎকালীন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন জ্যোতির্ময়ী। তখন থেকেই বাম আদর্শে নিজেকে গড়ে তোলেন তিনি। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড থেকে  অবসর নেওয়ার পর সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন।

রাজনৈতিক কেরিয়ার না থাকা সত্ত্বেও সিপিএম-এ জ্যোতির্ময়ীর যোগদান অন্যমাত্রা পেয়েছিল। তাঁর বাবা গুরুদাশ শিকদার ছিলেন বামপন্থী সমর্থক। কিন্তু সে সময় সিপিএম-এ রাজনৈতিক কেরিয়ার বিহীন তথাকথিত জনপ্রিয় মুখ সাংসদ বা বিধায়ক হয়েছেন, এমন নজির ছিল না। বাংলার আবেগকে কাজে লাগিয়ে  মাটির মেয়ে জ্যোতির্ময়ীকে লোকসভার প্রার্থী করে সিপিএম। তা নিয়ে সিপিএম-এর অন্দরে বিতর্ক তৈরি হয়। ২০০৪  সালে কৃষ্ণনগর থেকে জিতে সাংসদ হন তিনি। একজন সফল অ্যাথলিট হয়ে উঠলেন রাজনীতিবিদ।

সুভাষের ছায়া:

রাজনীতিক হিসাবে জ্যোতির্ময়ী সফল কিনা সময় বলবে। কিন্তু রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশের পর থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন জ্যোতির্ময়ী। একজন সফল ক্রীড়াবিদ হওয়ায় ভাল সম্পর্ক ছিল তত্কালীন দাপুটে সিপিএম নেতা তথা ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে। এমনটা শোনা যায়, প্রায় এক দশক ধরে কৃষ্ণনগর লোকসভায় সাংসদ থাকা সিপিএম প্রার্থী অজয় মুখোপাধ্যায়ের মতো জনপ্রিয় মুখ খুঁজে পাচ্ছিল না সিপিএম। সে সময় জ্যোতির্ময়ীর নাম প্রস্তাব রাখেন সুভাষ চক্রবর্তী। মত ছিল স্বয়ং জ্যোতি বসুর। তাঁকে টিকিট দেওয়া নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্ক তৈরি হলেও সে প্রস্তাব উপেক্ষা করতে পারেনি আলিমুদ্দিন। সম্ভবত প্রথম জ্যোতির্ময়ীকে দিয়ে বাংলার আবেগ কাজ লাগিয়ে বাজিমাত করার চেষ্টা করে সিপিএম। বিজেপির দখলে থাকা আসনটি ছিনিয়ে হতে সক্ষমও হয়েছিলেন জ্যোতির্ময়ী শিকদার।

সিপিএম-এ কোণঠাসা:

২০০৯ সালে সিপিএমের টিকিটে ফের কৃষ্ণনগর থেকে  লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করেন তিনি। কিন্তু সেই নির্বাচনে অভিনেতা তাপস পালের কাছে হেরে যান। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর কয়েক বছর সিপিএম পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও আস্তে আস্তে পার্টির সঙ্গে জ্যোতির্ময়ীর দূরত্ব তৈরি হয়। মূলত সুভাষ চক্রবর্তীর মৃত্যুর পরই পার্টির সঙ্গে দূরত্ব হতে শুরু করে জ্যোতির্ময়ী শিকদারের। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সিপিএম তাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে। তারপর সক্রিয় রাজনীতিতে জ্যোতির্ময়ীকে সেভাবে আর দেখা যায়নি। তবে জ্যোতির্ময়ীর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ আলিমুদ্দিন।

জ্যোতির খেলোয়াড়ি ইমেজ কাজে লাগিয়ে সিপিএম সফল, বিজেপি কি সেই পথে হাঁটছে?

জ্যোতির্ময়ী জননেত্রী নন। জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ। সঙ্গে তাঁর স্বল্প রাজনৈতিক কেরিয়ার। এই পুঁজি নিয়ে পদ্মশিবিরে যোগদান। ২০২১ বিধানসভায় কি টিকিট পেতে চলেছেন জ্যোতির্ময়ী শিকদার? জল্পনা দানা বাঁধলেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাফ বলেন, "কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে বিজেপি-তে জ্যোতির্ময়ীকে নেওয়া হয়নি। এখন রাজ্যের সবাই বিজেপিতে আসতে চাইছে। আর জ্যোতি আমার বাড়ির সামনে থাকে। যোগাযোগ আছে। কাজ করতে চায়।" তবে সূত্রের  খবর জ্যোতির প্রতি নদিয়ার আবেগ আর  জনসংযোগকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। বিজেপিতে যোগদান নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জ্যোতির্ময়ী শিকদারও।

.