এবার উপসর্গহীন করোনা রোগীদের মৃত্যুর হার কমাতে উদ্যোগী স্বাস্থ্য দফতর
এরপর আমাদের প্রশ্ন ছিল বেড়ে চলা করোনা সংক্রমন ঠেকাতে নতুন কি স্ট্র্যাটেজি আসছে?
নিজস্ব প্রতিবেদন: উত্তরবঙ্গে ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত কো মর্বিডিটি রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর হার কমাতে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। এবার উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর হার কমাতে উদ্যোগী হোল স্বাস্থ্য দফতর। সেই ক্ষেত্রে ইতালিকে রোল মডেল করে এগোতে চাইছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মহল।
উপসর্গহীন করোনা রোগী কারা?
কোভিট ১৯ এর মূল উপসর্গ হোল তীব্র জ্বর সঙ্গে শুকনো কাশি। কিন্তু বর্তমানে উত্তরবঙ্গে যে সমস্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগের দেহে এই দুই উপসর্গ কম পাওয়া যাচ্ছে। বদলে পাওয়া যাচ্ছে কেউ গন্ধ পাচ্ছে না, কারও পেট খারাপ, কারও মৃদু জ্বর ইত্যাদি নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু তাদেরও লালা রস পরীক্ষা করলে কিছু সংখ্যক মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। এরাই উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগী।
সেই সমস্ত উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগীদের বর্তমানে সেফ হোম কিংবা হোম আইসোলেশন রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাঁদের প্রায় সম্পূর্ন অংশ আবার সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে।
গত ২৯ শে জুলাই পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে মোট ৭৩৪৩৯ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
১) এদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ৮১৮৩ জন।
২) সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৬১১৫ জন।
৩) এখোনও অ্যাক্টিভ রয়েছে ২০১৭ জন।
৪) মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের। যাঁদের মধ্যে ৫% উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগী ছিলেন।
(অর্থাৎ ৩ জন মৃত রোগী উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ ছিলেন)
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের করোনা পজিটিভ রোগীদের ডেথ রিভিউ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন রোগী উপসর্গহীন ভাবে করোনা আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু মৃত্যু হয়েছে। যা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেই ক্ষেত্রে এই ধরনের রোগীদের মধ্যেও যদি মৃত্যু হার আরও বাড়তে থাকে তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে মুশকিল হবে।
তাই এই মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে নতুন স্ট্র্যাটেজি হিসেবে ইতালির C T VALUE থিওরিকে কাজে লাগাতে চাইছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকমহল।
C T VALUE আসলে কি?
C T VALUE পুরো নাম CYCLE THRESHOLD VALUE। এই পদ্ধতিতে মানবদেহ থেকে লালা রসের নমুনা সংগ্রহর পর এই মেশিনের মাধ্যমে একজন মানুষের দেখে কত পরিমাণ ভাইরাস লোড আছে তা দেখা হয়। এবং সেই পরিমাণ ভাইরাসের উপস্থিতি ওই মানুষের দেহের পক্ষে কতটা বিপদজনক তা নির্ণয় করে তাকে চিকিৎসা দেবার কাজ শুরু করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
ঘটনায় করোনা মোকাবিলায় উত্তরবঙ্গের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি ডাক্তার সুশান্ত রায় জানান, প্রথম দিকে করোনায় আক্রান্ত হলেই তাকে কোভিড হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছিিল। এরপর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় স্ট্র্যাটেজি বদলে উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগীদের সেফ হোমে বা হোম আইসোলেশন রেখে চিকিৎসা এবং উপসর্গ যুক্ত করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করা হতে থাকে।
কিন্তু এবারে ডেথ রিভিউ করতে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন উপসর্গহীন করোনা পজিটিভ রোগী মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরও জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেস স্টাডি করে দেখা গিয়েছে একটি দেশে বেড়ে চলা করোনা রোগীদের মৃত্যুর হার কমাতে C T VALUE এর উপর জোর দিয়ে ভালো ফল পেয়েছে। আসলে আগে আমরা সি টি ভ্যালু একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের কম থাকলে এবং তার করোনা উপসর্গ থাকলে তাকেই কোভিড হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হত। কিন্তু এখন সেই স্ট্যাটেজি বদল করার ভাবনা চিন্তা চলছে। C T VALUE নির্দিষ্ট পরিমাণের কম কিন্তু উপসর্গহীন তাদেরকেও এবার হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেবার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এরপর আমাদের প্রশ্ন ছিল বেড়ে চলা করোনা সংক্রমন ঠেকাতে নতুন কি স্ট্র্যাটেজি আসছে?
উত্তরে তিনি জানান এই ক্ষেত্রে দিল্লিকে মডেল হিসেবে ধরে এগনো হচ্ছে। দিল্লিতে সবজি বিক্রেতা, ভ্যানচালক-সহ অন্যান্য নিম্নবর্গের আয়ের মানুষ যাঁদের সান্নিধ্যে প্রতিদিন অনেক মানুষ বিভিন্ন পরিষেবা নিতে আসছে এবার তাঁদের লালারস পরীক্ষা করা হবে। সেই ক্ষেত্রে পৌরসভা, পঞ্চায়েত-সহ বিভিন্ন দফতরের সহায়তা করা হচ্ছে।