তিন অস্ত্র, তিন নেতায় মঞ্জুকে ধরে রেখে মুকুলকে মোকাবিলা তৃণমূলের

মঞ্জুকে তৃণমূলেই রেখে দেওয়ার জন্য মাঠে নামানো হয়েছিল তিন নেতাকে। এরা হলেন- উত্তর চব্বিশ পরগনা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ, অভিষেক ঘনিষ্ঠ পার্থ ভৌমিক এবং রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা ওই জেলার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

Updated By: Jan 8, 2018, 09:18 PM IST
তিন অস্ত্র, তিন নেতায় মঞ্জুকে ধরে রেখে মুকুলকে মোকাবিলা তৃণমূলের

কমলিকা সেনগুপ্ত: আবেগ-রাজনীতি-চাপ। নোয়াপাড়ার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মঞ্জু বসুকে দলে ধরে রাখতে এই তিন অস্ত্রই কাজে লাগিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। আর এই তিন অস্ত্রের সফল প্রয়োগেই ধরাশায়ী করা গেছে সিঁধ কাটতে চাওয়া মুকুল রায়কে।

প্রয়াত তৃণমূল নেতা বিকাশ বসুর স্ত্রী মঞ্জু দেবীকে নিয়ে রবিবার ঘাসফুল ও পদ্ম শিবিরের নজিরবিহীন টানাটানির সাক্ষী থেকেছে রাজ্য রাজনীতি। বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তর থেকে মুকুলের পছন্দের মঞ্জু বসুর নাম নোয়াপাড়া কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পরই মঞ্জু জানালেন, তাঁর সম্মতি নিয়ে এই প্রার্থীপদ ঘোষিত হয়নি। তিনি আরও বলেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর আস্থা অটল। কিন্তু কীভাবে এমনটা হল? মঞ্জু বসু তো নিজেই এর আগে সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূলের ব্যবহারে অসম্মানিত হওয়ার কথা বলেছিলেন। তাহলে হঠাত্ এমন ভোল বদল!

তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, মঞ্জুকে তৃণমূলেই রেখে দেওয়ার জন্য মাঠে নামানো হয়েছিল তিন নেতাকে। এরা হলেন- উত্তর চব্বিশ পরগনা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক নির্মল ঘোষ, অভিষেক ঘনিষ্ঠ পার্থ ভৌমিক এবং রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা ওই জেলার তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কিন্তু কী করে মঞ্জুকে ধরে রাখলেন এই তিন নেতা?

জানা যাচ্ছে, উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষিত না হওয়ায় অভিমান হয়েছিল মঞ্জু বসুর। আর সেই অভিমান থেকেই সুব্রত বক্সীর ডাকা সভাতেও অনুপস্থিত ছিলেন মঞ্জু। এরপরই স্থানীয় নেতৃত্ব মঞ্জুকে দলের সঙ্গে দূরত্ব না বাড়ানোর বিষয়ে বোঝায়। এর মধ্যেই বসু পরিবারের 'দীর্ঘ দিনের পারিবারিক বন্ধু' মুকুলের সঙ্গে কথা হয়। কুশলী রাজনীতিক মুকুল সে সময়েই বিজেপির টিকিটে লড়ার টোপ দেন মঞ্জুকে। অন্যদিকে ওই সভার পর দিন স্বয়ং সুব্রত বক্সিই ফোন করে বসেন মঞ্জু বসুকে। তাঁদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হয়। এই ঘটনা প্রবাহের মধ্যেই বাংলায় বিজেপির দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সঙ্গেও বৈঠক করেন মঞ্জু বসু।

আরও পড়ুন- ‘গিমিক করে কিছু করতে পারবেন না কাছড়াপাড়াবাবু’, মঞ্জু-ইস্যুতে মুকুলকে কটাক্ষ পার্থর

ঘটনা এত দূর গড়াতেই মাঠে নামানো হয় তিন নেতাকে। পারিবারিকভাবে মঞ্জুর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নির্মল ঘোষ মঞ্জুকে জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের মায়ের মতো। তিনি সকলকেই স্নেহ করেন। দল এবার তাঁর (মঞ্জুর) কথা না ভাবলেও ভবিষ্যতে নিশ্চই ভেবে দেখবে, এমনটাই খবর। এরপরই মঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন পার্থ। অভিষেক ঘনিষ্ঠ এই নেতা অনেকটা আবদারের ঢঙে জানিয়ে দেন, আপনাকে আমরা ছাড়ব না। সব শেষে ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনিও জানিয়ে দেন, তৃণমূলের সঙ্গে দীর্ঘ কালের যোগ মঞ্জুর। তাই দল তাঁকে হারাতে চায় না। সব মিলিয়ে মঞ্জুর উপর ক্রমশ বাড়তে থাকে চাপ। তাই রবিবার বেশ দীর্ঘ সময় মঞ্জুর মোবাইল বন্ধ থাকে। এই মোবাইল বন্ধ থাকা থেকেই বোঝা যাচ্ছে তিনি 'চাপে ছিলেন', বলে মনে করছে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। আর এরপরই মঞ্জু জানিয়ে দেন, তিনি তৃণমূলেই ছিলেন এবং আছেন। নেত্রীর প্রতি তাঁর আস্থা অটুট।

কিন্তু মঞ্জুকে ধরে রাখতে হঠাত্ এতটা মরিয়া হল কেন তৃণমূল? বিজেপির অন্দরে মঞ্জু ছিলেন মুকুল রায় ক্যাম্পের প্রার্থী। তাই মঞ্জুকে ধরে রেখে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মুকুলকে চরম অপদস্থ করতেই বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দেয় ঘাসফুল নেতৃত্ব, এমনটাই জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি, বিজেপির 'কেন্দ্রীয় নেতা' মুকুলের মোকাবিলায় তৃণমূলের জেলা স্তরের নেতারাই যে যথেষ্ট সেই বার্তাও দেওয়া গেল।

.