SSC Scam: গোপাল দলপতির হেঁড়িয়ার বাড়িতে তল্লাশি সিবিআইয়ের, ছেলের সম্পর্কে কী বললেন মা
SSC Scam: টাকার বিনিময়ে অযোগ্য চাকরি প্রার্থীদের প্রাথমিক চাকরির দেওয়ার পর গোপাল তাপস ও কুন্তলকে ক্লাস ৯,১০,১১,১২ শিক্ষক পদে ইচ্ছুকদের তালিকা চায়। চার্জশিট অনুযায়ী, তাপস ৩৫ জনের তালিকা দেন। এই পদ গুলো তে চাকরির জন্য মাথা পিছু ২০ লক্ষ টাকা করে দাবি করে গোপাল
পিয়ালি মিত্র ও অয়ন ঘোষাল: নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে একদিকে যেমন গোপাল দলপতির প্রাক্তন স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই তেমনি গোপালের হেঁড়িয়ার বাড়িতেও যায় কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। শনিবার সাড়ে এগারোটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরের হেঁড়িয়ার ভূপতিনগরে গোপাল দলপতির বাড়িতে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা। তল্লাশিতে কী পাওয়া গেল তা অবশ্য বলেননি সিবিআই অফিসাররা।
সিবিআই টিম বেরিয়ে যাওয়ার পর গোপাল দলপতির মা লক্ষ্মী দলপতি বলেন, বাড়িটি গোপালের কিনা, তার কোনও ডক্যুমেন্ট আছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করা হয়। ট্যাঙ্ক, স্যুটকেস খুলে সব দেখিয়ে দিয়েছি। কিছুই পায়নি। থাকলে তো পাবে! ও তো গরিব ঘরের ছেলে। ওকে ফাঁসানোর জন্য তো এসব হচ্ছে। এখন ফেঁসে গিয়ে ও এদিক ওদিক ছুটছে। বাড়ি আসেনি। মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলে।
নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার কুন্তল ঘোষের মুখে শোনা গিয়েছিল গোপাল দলপতি ও তার প্রাক্তন স্ত্রী হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। ওয়েবসাইটে কারচুপি থেকে অনুউত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে চাকরি দিয়ে কোটি কোটি টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে গোপালের বিরুদ্ধে।
শনিবার বাংলা বছরের শুরুতে সিবিআইয়ের যে তৎপরতা দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় যে অভিযান চলে তার মধ্যে অন্যতম গোপাল দলপতির মেদিনীপুরে বাডি, হরিদেবপুরে হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে যায় সিবিআই।
পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা গোপাল। একসময় শিক্ষকতা করতেন। কলকাতায় এসে একটা বড় সময় প্রথমে লেকটাউনে ভাড়া থাকতেন। দ্বিতীয় বিয়ে করেন মডেল তথা অভিনেত্রী হৈমন্তীকে। সিআইডির হাতে আগে একবার গ্রেফতারও হন গোপাল। সম্প্রতি ইডির জমা দেওয়া চার্জশিটে কুন্তলের বয়ানে নিয়োগ দুর্নীতিতে গোপালের বিস্ফোরক ভূমিকার কথা উঠে এসেছে।
চার্জশিটে কুন্তলের বয়ানে ইডির দাবি, ২০১৭ সালে তাপস মন্ডলের মাধ্যমে গোপালের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। তাপস মন্ডল কুন্তলকে জানান, গোপাল পার্থ চট্টাপাধ্যায়ের ওসডির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এব মানিক ভট্টাচার্যও ঘনিষ্ঠ।
ওয়েবসাইটে কারচুপি
কুন্তলের বয়ান অনুযায়ী, গোপাল তাঁকে জানান, ওয়েবসাইট ম্যানুপুলেট করে ফেল করা চাকরীপ্রার্থীদের পাশ করিয়ে দিতে পারবেন। বিশ্বাস অর্জন করতে খোদ কুন্তল ঘোষ, কুন্তল ঘোষের বোন সহ কয়েকজন অ্যাডমিড কার্ডে চান। এবং কয়েকদিন পর কুন্তল নিজের অ্যাডমিট সহ যে কজনের অ্যাডমিটে যে তালিকা গোপালকে দিযেছেলিনে ওয়েবসাইটে দেখেন সকলেই পাস দেখাচ্ছে। যদিও চাকরির অফার লেটার ইস্যুর নামে কুন্তলদের থেকে মাথা পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে নিলেও তাঁরা অফার লেটার পাননি বলে অভিযোগ।
কুন্তলের ইডিকে দেওয়া বয়ানে আরও দাবি করা হয়, গোপাল দলপতি তাঁকে এবং তাপস মন্ডলকে জানান তার সঙ্গে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বড় বড় আইনজীবীদের আলাপ রয়েছে। তাদের মাধ্যমে মামলা করে ফেল করা পরীক্ষার্থীদের ৬ নম্বর করে বাড়ানোর ব্যবস্থা করবে। তার জন্য গোপাল দলপতি তাপস মন্ডলের থেকে ২০১৪ টেটের ৯৯ জন অনুউত্তীর্ণ প্রার্থীতালিকা দেন এবং কুন্তল ঘোষ ৩৩ জনের তালিকা দেন। কিছু দিন পর এই ফেল করা প্রার্থীদের মোবাইলে মেসেজ আসে। সেখানে ফেল করা প্রার্থীদের ২০১৭ সালে ১১ জুন থেকে ১৪ জুনের মধ্যে সকাল ১০.৩০ টায় বিকাশ ভবনে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য যেতে বল হয়। বিকাশ ভবনে একটি রুমে যেতে বলা হয়। যে রুমটি পার্থ চট্টাপাধ্যায়ের ওসডি বসতেন। পুরো ব্যবস্থা করেন গোপাল।
কুন্তলের দাবি, ডকুমেন্ট যাচাই পর অফার লেটার ইস্যুর জন্য গোপালকে মোট ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা দেন। যার জন্য চাকরিপ্রার্থীদের থেকে তুলে তাপস মন্ডল ৩কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দেন। কুন্তল নিজে তুলে দেন ১ কোটি ৫০ লক্ষ দেন। টাকা দিলেও প্রথম ৬ মাস কেউ অফার লেটার পায়নি। পরে গোপাল দলপতি চাকরিপ্রার্থী পিছু আরও ৮ লক্ষ টাকা চায়। যেহেতু অফার লেটার পাওয়া যায়নি তাই প্রথমে চাকরি প্রার্থীরা আর টাকা দিতে রাজি ছিল না। পরে কয়েকজন অফার লেটার পান। কিন্তু অভিযোগ, আরও টাকা না পেলে অফার লেটার ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিলের আধিকারিকের দিয়ে ফোন করে গোপাল প্রার্থীদের হুমকি দেয়। এভাবে আরও ৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা নেওয়ায় হয়। মোট ১৩০ জন ১০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রাথমিক চাকরি পান। যার মধ্যে কুন্তল ৩০ জন্য চাকরী প্রার্থী থেকে ২৫০০০ টাকা করে কমিশন (মোট সাড়ে সাত লক্ষ টাকা) অবং তাপস মন্ডল ৯৯ চাকরী প্রার্থী জন্য মাথা পিছু ২৫০০০ টাকা করে নেয় (২৪ লক্ষ ৭৫ হাজার )। বাকি টাকা গোপালের পান বলে অভিযোগ।