Durga puja 2022: সুদিন নেই তবু পুজোর সাত দিন শিটেদের দালানে উপচে পড়ে সাতটি গ্রাম
প্রায় বারো হাজার বিঘা জমিতে থাকা বনাঞ্চলে তাঁদের কর্তৃত্ব ছিল। এই জমিদারি থেকে পুজো, সবই স্বপ্নাদেশের ফলাফল। এই নিয়ে কথিত আছে বহু গল্পও। দূর দূরান্তের প্রজারা পুজা দেখতে পুজার ৪ দিন ধরে ভিড় জমাত কষ্ঠিয়া গ্রামের দুর্গা মণ্ডপে। এমন কি, চারদিন ধরে মণ্ডপে এলাকার ৭ টি গ্রামের মানুষের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা থাকত। সন্ধ্যা নামলেই দুর্গা মণ্ডপে সেজের ঝাড়বাতি লাগিয়ে বসত যাত্রাপালা ,রামলীলা ও গানের জলসা। দশমীতে শিট পরিবারের দুর্গাদালানে দিনে যাত্রাপালা ছিল অন্যতম আকর্ষণ।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বারোয়ারির বাড়াবাড়িতে বাংলা মাত। তা বলে বাড়ির পুজো ফেলনা নাকি! বনেদি বাড়িগুলোর ঠাটবাট এখনও অটুট। আঁচড় লাগেনি কৌলীন্যে। ঝাড়বাতির রোশনাই হোক বা একচালা প্রতিমার মায়াবি আকর্ষণ, বাড়ির পুজো প্রাণের আরাম! আত্মার উদযাপন। আর বনেদি বাড়িগুলিতে তো প্রস্তুতি তুঙ্গে। এরকমই একটি বনেদি পুজো হল, বাঁকুড়ার কষ্ঠিয়ার সম্ভ্রান্ত শিট পরিবারের পুজো। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগের জমিদারের প্রাচীন অট্টালিকায় আজও খুব ভক্তিভরে পূজিত হন দেবী দুর্গা। সেই সময় বাঁকুড়ার কষ্ঠিয়ার সম্ভ্রান্ত শিট পরিবারের জমিদারি ছিল আশেপাশের প্রায় ১৬ টি তালুকে। প্রায় বারো হাজার বিঘা জমিতে থাকা বনাঞ্চলে তাঁদের কর্তৃত্ব ছিল। এই জমিদারি থেকে পুজো, সবই স্বপ্নাদেশের ফলাফল। এই নিয়ে কথিত আছে বহু গল্পও।
কথিত আছে সার্থক শিটের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে অত্যন্ত সাধারণ একটি কৃষিজীবী পরিবারে। সেখানেই পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে মহিষ চরাতে যেতেন তিনি। একদিন ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন। তখনই স্বপ্নাদেশ পান, বেশ কিছুটা দূরে থাকা কষ্টিয়া গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু করার। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে কুটির তৈরি করে পুজোর সূচনা করেন। এরপর দৈবিক আশির্বাদে দ্রুত অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিও হয় তাঁর। প্রায় সাত হাজার বিঘে উর্বর জমি কিনে জমিদারির পত্তন করেন সার্থক শিট। দুর্গার জন্য স্থাপিত হয় সুদৃশ্য বিশাল দরদালান। শুরু হয় বিশাল জাঁক জমকে জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজা।
জমিদারির বিপুল আয়ে সে সময় শিট পরিবারের রাজকোষ উপচে পড়ছে । তার ছাপ পড়তে থাকে দুর্গা পুজোতেও। আভিজাত্য আর জাঁক জমকে অল্প দিনেই ওই এলাকায় বিখ্যাত হয়ে ওঠে শিট পরিবারের দুর্গাপুজো। সে সময় দূর দূরান্তের প্রজারা পুজা দেখতে পুজার ৪ দিন ধরে ভিড় জমাত কষ্ঠিয়া গ্রামের দুর্গা মণ্ডপে। এমন কি, চারদিন ধরে মণ্ডপে এলাকার ৭ টি গ্রামের মানুষের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা থাকত। সন্ধ্যা নামলেই দুর্গা মণ্ডপে সেজের ঝাড়বাতি লাগিয়ে বসত যাত্রাপালা ,রামলীলা ও গানের জলসা। দশমীতে শিট পরিবারের দুর্গাদালানে দিনে যাত্রাপালা ছিল অন্যতম আকর্ষণ। শ্বাপদ সঙ্কুল জঙ্গল পেরিয়ে আসা দূর দূরান্তের প্রজারা যাতে যাত্রাপালা দেখে দিনের আলোতেই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন সেজন্যই দিনের আলোয় এই যাত্রাপালার আয়োজন করতেন শিট পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন : Durga Puja 2022: ঋষি বিশ্বামিত্র একবার কার্তিক-গণেশকে প্রশ্ন করেন, তাঁদের মায়ের নাম দুর্গা কেন?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমিদারি খুইয়েছে শিট পরিবার। পাল্লা দিয়ে কমেছে পরিবারের আয়ও। রুজি রুটির টানে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন অন্যত্র। কিন্তু আজও পুরান বিধি ও নিয়ম নীতি মেনে শিট পরিবারের প্রাচীন দুর্গা মন্দিরে পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা। আয়োজনের কলেবর বহুগুন কমলেও গ্রামবাসীদের ভক্তি শ্রদ্ধা ও এই পুজাকে ঘিরে উন্মাদনায় বিন্দু মাত্র ভাটা পড়েনি। আজও দশমীতে দিনের যাত্রা পালা চলে আসছে প্রাচীন রীতি মেনে। জমিদারি না থাকলেও একসময় জমিদারির অংশ হিসাবে থাকা দূর দূরান্তের গ্রাম থেকে গ্রামবাসীরা পুজোর বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে পুজোর সময় হাজির হন শিট পরিবারের দুর্গা দালানে। দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসেন শিট পরিবারের সদস্যরাও। বছরের পুজোর কটা দিন ফের গমগম করে ওঠে শিট পরিবারের দুর্গা মন্দির।