কেষ্ট ঘনিষ্ঠ আবদুল লতিফ কেন হাত মেলায় রাজু ঝা-র সঙ্গে? মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য...
রাজু ঝা-কে খুনের লক্ষ্যে আততায়ীরা নীল রঙের গাড়িতে করে দুর্গাপুরের দিক থেকে আসছিল। গাড়িটিতে পাওয়া গিয়েছে ৫টি নাম্বার প্লেট। প্রত্যেক টোলে সিসিটিভি ইনস্টলেশনের আগে গাড়ির নাম্বার প্লেট বদল করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিস মনে করছে, গাড়িতে ৩ জন ছিল।
বিক্রম দাস: শনিবার ভরসন্ধ্যায় বর্ধমান জাতীয় সড়কের উপর আততায়ীর গুলিতে খুন কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝা। তদন্তে উঠে এসেছে নিহত রাজু ঝা-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল অনুব্রত ঘনিষ্ঠ আবদুল লতিফের। কে আবদুল লতিফ? কয়লা পাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত অনুপ ঝা বা লালার একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল আবদুল লতিফ। কয়লা পাচার দুর্নীতির তদন্তে যখন সিবিআই ও ইডি তত্পর হয়ে ওঠে, তখন ২০২১ সালের পর থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় লালা ও লালার সহযোগী সিন্ডিকেট। সেই সময় আবদুল লতিফ লালার সিন্ডিকেটের সঙ্গে গাঁটছড়া ছিন্ন করে, রাজু ঝা-এর সঙ্গে যোগ দেয়। কারণ, ২০২১-এর পর থেকেই রাজু ঝা লিগ্যাল টেন্ডারগুলি পেতে শুরু করেছিল। আর সেখান থেকেই রাজু ঝা ও আবদুল লতিফের নয়া 'জোট' শুরু হয়। রাজুর বিরুদ্ধে অবৈধ কয়লা তুলে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে শনিবার সন্ধ্যায় রাজু ঝা-কে খুনের লক্ষ্যে আততায়ীরা নীল রঙের গাড়িতে করে দুর্গাপুরের দিক থেকে আসছিল। গাড়িটিতে পাওয়া গিয়েছে ৫টি নাম্বার প্লেট। প্রত্যেক টোলে সিসিটিভি ইনস্টলেশনের আগে গাড়ির নাম্বার প্লেট বদল করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিস মনে করছে, গাড়িতে ৩ জন ছিল। একটি সাদা রঙের ফরচুনা গাড়িতে ছিলেন রাজু ঝা। সন্ধে পৌনে ৮টা নাগাদ জাতীয় সড়কের উপর আমড়া মোড়ের কাছে ফরচুনা গাড়িটি গতি কিছুটা কম করেছিল। সেই সময় পিছন থেকে নীল রঙের গাড়িটি এসে, সাদা রঙের ফরচুনা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপরই একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে চালকের ডান দিক লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা।
ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারার রাজু ঝা। স্থানীয়দের দাবি, কমপক্ষে ৬ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। সেই গুলিতেই রাজু ঝা-এর মৃত্যু হয়। গুলিতে গুরুতর জখম হন রাজুর পেছনে বসে থাকা এক ব্যক্তি। ঘটনার খবর পয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বর্ধমান থানার পুলিস। রাজু ঝা ও তার সঙ্গীকে উদ্ধার করে বর্ধমান অনাময় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিত্সকেরা রাজু ঝা-কে মৃত বলে ঘোষণা করে। ওদিকে তাঁর সঙ্গীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুরের প্রভাশালী ব্যবসায়ী বলে পরিচিত রাজু বাম আমল থেকেই কয়লা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১১ সালের পর তাঁর ব্যবসায় ভাঁটা আসে। ২০১৯ সালের পর তাঁর কয়লা ব্যবসা প্রায় বন্ধ-ই হয়ে যায়। সেইসময় তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর নামে একাধিক মামলা হয়। পশ্চিম বর্ধমানের বেশ কয়েকটি থানায় তাঁর নামে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে দুর্গাপুরে থাকতেন তিনি। সেখানে তাঁর একটি হোটেলও রয়েছে। যদিও বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না। উল্লেখ্য, মাসখানেক আগেও দুর্গাপুরের একটি জায়গায় গুলি চলে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজু ঝা। তখনও রাজু ঝা-ই টার্গেট ছিলেন বলে মনে করছে পুলিস। যদিও সেই যাত্রায় রাজু ঝা বেঁচে যান।
আরও পড়ুন, Birbhum: অনুব্রত-হীন বোলপুরে ১২ বছর পর সভা সিপিএমের, দল ছাড়লেন একাধিক তৃণমূল নেতা-কর্মী