Nepal Chandra Sutradhar: মরণোত্তর পদ্ম পুরস্কার বাবার, তবু ছেলের গলায় আক্ষেপের সুর! কেন?
Padma Shri Awardee Nepal Chandra Sutradhars family wants museum: বাবা পেয়েছেন মরণোত্তর পদ্ম পুরস্কার। পরিবারের এখন আক্ষেপ একটাই।ছেলের দাবি একটা মিউজিয়ামের।
শুভপম সাহা: দেশের আদিবাসী যুদ্ধনৃত্যের কথা বললেই সবার আগে মাথায় আসে ছৌ নাচ। আর ছৌয়ের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জডিয়ে পুরুলিয়া। ছৌ এখানকার ঐতিহ্যবাহী এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় বিশ্ববন্দিত লোকনৃত্য। সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ মানভূম জেলার ইতিহাসে দু'জন মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের জন্য়ই ছৌ শিল্প আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করেছে। তাঁরা হলেন ছৌ নৃত্যশিল্পী গম্ভীর সিং মুড়া ও ছৌ মুখোশ শিল্পী নেপালচন্দ্র সূত্রধর। ছৌ নাচকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন গম্ভীর সিং মুড়া। আর ছৌ মুখোশকে বিশ্ববিখ্যাত করেছেন প্রয়াত নেপালচন্দ্র সূত্রধর।
পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডির চড়িদা গ্রামে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুখোশ বানিয়েছেন নেপালচন্দ্র। একের পর এক অসাধারণ মুখোশ বানিয়ে চমকে দেওয়া মানুষটিকেই, চলতি বছর সাধারণতন্ত্র দিবসে পদ্ম পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। কিন্তু নেপালচন্দ্র সেই পুরস্কার নিতে পারেননি। কারণ গতবছর পয়লা নভেম্বর তিনি প্রয়াত হন। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মরণোত্তর পদ্ম পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁর পরিবারকে। পুরুলিয়া থেকে নেপালের সুযোগ্য় পুত্র গৌতম সূত্রধর এসেছিলেন কলকাতায়। বুধবার দুপুরে প্রেস ক্লাবে দাঁড়িয়ে তিনি জি ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে কথা বললেন। জানালেন তাঁর আক্ষেপ ও চাওয়া-পাওয়া।
গৌতম আক্ষেপের সুরে বলেন, 'দেখুন বাবা সম্মান তো পেলেন, তবে পুরস্কার পাওয়ার আগেই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। উনি নিজে হাতে সম্মান নিতে পারলে আরও খুশি হতাম আমরা। এই আক্ষেপটা রয়ে গিয়েছে। জানেন, বাবা জীবিত থাকাকালীনই আমাদের বলতেন, দেখিস আমি কিছু একটা বড় সম্মান পাব। আমি তো বাবার সঙ্গে দিল্লিতে গিয়েছিলাম। ওখানে তিনদিনের ওয়ার্কশপ ছিল। আমাদের কাজ নির্বাচিতও হল।'
বাবাকে আঁকড়েই বাঁচেন গৌতম। তিনি নিজেও মুখোশ শিল্পী। বিলুপ্ত প্রায় ছৌ শিল্প আগামীর জন্য় সংরক্ষিত হোক। গৌতমের সংযোজন, 'আমার রাজ্য় সরকারের কাছে একটাই অনুরোধ, বাবার জন্য় যেন একটা অ্য়াকাডেমি করে দেওয়া হয়। এখনও আমাদের বাড়িতে বাবার বানানো প্রচুর মুখোশ আছে। বাড়ির অবস্থা এবং আর্থিক অবস্থাও তেমন নয়। অ্যাকাডেমিটা হলে ওখানে বাবার বানানো মুখোশগুলো রাখা যাবে। মানে ধরুন যদি একটা মিউজিয়ামের মতো হয় ওখানে, তাহলে মুখোশের গল্পগুলোও আমরা পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পারব। আর যারা মুখোশ বানানো শিখতে আগ্রহী, তারা অ্যাকাডেমিতে এসে শিখবে, সেখানে ছৌ নাচের প্রশিক্ষণও হবে, মুখোশও বানানো হবে। এভাবে ছৌ শিল্প আগামী প্রজন্মের কাছে এগিয়ে যাবে। বাবার জন্য় অ্যাকাডেমি বানানোর ব্য়াপারে, সরকারের কারোর সঙ্গে এই নিয়ে কোনও কথা হয়নি এখনও। আমাদের ডিএম ও স্থানীয় থানার ওসিকে বলেছি ব্য়াপারটা। বাবা যেহেতু নভেম্বরে মারা গিয়েছেন, সেহেতু প্রতিবছর ওই মাসেই বাবার স্মরণে একটা স্মৃতিমেলা করতে চাই।'
গৌতম কলকাতায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবেই এসেছেন। এক মহৎ কর্মকাণ্ডের উদ্য়োগ নিয়েছে জিনিয়াস ফাউন্ডেশন এবং অ্যাসেনসিভ এডু স্কিল ফাউন্ডেশন। এই দুই সংগঠনের মৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার ফলস্বরূপ গতবছর থেকেই চড়িদার ২০০ জন ছৌ মুখোশ শিল্পী প্রশিক্ষিত হচ্ছেন। এই প্রশিক্ষণে শিল্পীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে বুনিয়াদ করেই, তাঁদের আধুনিকীকরণের পাঠ দেওয়া হচ্ছে। যাতে তাঁরা বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। প্রযুক্তির সাহায্য়ে নিজেদের তৈরি জিনিস সর্বত্র বিক্রি করতে পারেন।
'ছৌ শিল্পের বিশ্বজয়'ই হচ্ছে জিনিয়াস ফাউন্ডেশন এবং অ্যাসেনসিভ এডু স্কিল ফাউন্ডেশনের মোটো। এদিনের অনুষ্ঠানের পর অ্যাসেনসিভ এডু স্কিল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্য়ান অভিজিৎ চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গের শিল্প সংস্কৃতির বহমান ধারা বয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের কাঁধের বর্তায়। ছৌ শিল্পীদের একটা মঞ্চ দিতে চাওয়া থেকেই আমাদের উদ্যোগ। যাতে মাঝখান থেকে কোনও সুবিধাভোগী মুনাফা লুটে না নিয়ে যেতে পারে। শিল্পীরাই তাদের প্রাপ্য় পারিশ্রমিক পায়। সেই চেষ্টাই থাকবে। শুধু ছৌ মুখোশই নয়, ছৌ নাচের যাবতীয় পোশাকও এবার দোকান থেকে কেনা যাবে। আগামী মাস থেকেই এগুলি বিক্রি শুরু হবে মেট্রোপলিস মলে। আমরা চেষ্টা করছি ই-কমার্স সাইটগুলিতেও এগুলি বিক্রি করার।' জিনিয়াস ফাউন্ডেশনের রশ্মি যাদব বলেন, 'দেখুন জিনিয়াস ফাউন্ডেশন সিএসআর ফাউন্ডেশন। সমাজের উন্নতির জন্য় কাজ করে থাকে। এরকম একটা প্রজেক্টকে বাস্তবায়িত করতে পেরেও ভালো লাগছে।' তাহলে এবার থেকে পুরুলিয়াতে গেলেই ছৌয়ের সামগ্রী পাওয়া যাবে না, খোদ কলকাতায় বসেই পাওয়া যাবে। আগামী দিনে অনলাইনেও পাওয়া যাবে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp)