শুভেন্দু-কল্যাণ দ্বৈরথে সরগরম বঙ্গরাজনীতি

যাঁরাই অহঙ্কার করবেন, তাঁদেরই দর্পচূর্ণ হবে: কল্যাণ

Updated By: Nov 20, 2020, 03:08 PM IST
শুভেন্দু-কল্যাণ দ্বৈরথে সরগরম বঙ্গরাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদন: আজ হুগলির বলাগড়ে একটি জনসভা ছিল শুভেন্দুর। সেখানে তিনি বলেন, 'অনিল বসুও কটু কথা বলতেন, আপনারা সমর্থন করেননি। আরেক জনপ্রতিনিধিও ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন আমাকে। আপনারা কি তাঁকেও সমর্থন করবেন? স্পষ্টতই তির কল্যাণের দিকে।

তবে সেই তিরের অভিমুখ সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরিয়ে দিতে সচেষ্ট হন কল্যাণ। জি ২৪ ঘণ্টা নিউজ চ্যানেলে একটি ফোন-ইনে কল্যাণ জানান, 'কটুকথা তো কিছু বলিনি। দলে থেকে, মন্ত্রিসভায় থেকে, অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে, দলের নেত্রীকে মানব না বলে, তাঁর ছবি ব্যবহার না করে জনসভা করে নিজেকে জাহির যাঁরা করেন তাঁদের বিরুদ্ধে বলব। সেদিন ওঁর (শুভেন্দুর) বডি ল্যাঙ্গুয়েজ খেয়াল করেছেন? ওটা বিদ্যাসাগরের মাটির বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল না। একটা সময় ছিল যখন ওখানে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। তাঁরও অহঙ্কার ছিল। তাঁর অহঙ্কার চূর্ণও হয়েছে। যাঁরাই অহঙ্কার করবে, তাঁদেরই দর্পচূর্ণ হবে। তা ছাড়া, আমি আমার বাবার পরিচয়ে রাজনীতিতে আসিনি।' 

কেন এতটা তীব্র হয়ে উঠল দুই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতার দ্বন্দ্ব, তরজা, দ্বৈরথ? লম্বা প্রেক্ষিত আছে। শুভেন্দু-তৃণমূল সম্পর্কের পারস্পরিক অস্বস্তির খবরটা বহুদিনই এ রাজ্যের রাজনীতির বাজার গরম রেখেছে। ইদানীং কালে শুভেন্দু কিছু জনসভা করছিলেন যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও ছবি বা তৃণমূলের কোনও সংস্পর্শ দেখা যেত না। তা নিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। এমনও শোনা যাচ্ছিল, তৃণমূলের প্রতি নাকি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন শুভেন্দু এবং অচিরেই তিনি দলবদল করবেন। 

শুভেন্দু কিন্তু সচেতন ভাবে কখনও স্পষ্ট করে এই বিতর্কে জল ঢেলে বিষয়টি মিটিয়েও দেননি। বরং ধন্দটা জিইয়েই থেকেছে। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু-প্রসঙ্গেই আগে বলেছিলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বলেই নন্দীগ্রামে আন্দোলন হয়েছিল। আজকে অনেক বড় হতে পারেন। কিন্তু বড় হলেন কার ছায়ায়, সেটাই বড় ব্যাপার।' 

এই কথার পরই কল্যাণ বিষয়টি নিয়ে অনেক খুল্লমখুল্লা হয়ে পড়েন। একটি অনুষ্ঠানে নাম না করে শুভেন্দুকে তাঁর খোঁচা, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে পুরসভার কাছে আলু বিক্রি করতিস।'

ঠিক কী বলেছিলেন সেদিন কল্য়াণ? বলেছিলেন, 'হিসাবটা আমরা বুঝে নেব। চলে যা বিজেপিতে। কোনও অসুবিধা নেই। যাবি কংগ্রেসে, চলে যা। তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। সিপিএমে যাবি, চলে যা। তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। দাদার অনুগামী হলে দাদার সঙ্গে চলে যা। তৃণমূল কংগ্রেস করে বেইমানি করলে বাড়ি ঢুকতে দেব না।' কল্যাণের হুঁশিয়ারি, দেখি কত বড়! দেখতে চাই কত হিম্মত রয়েছে! বাংলার মাটিতে দেখতে চাই, কোন দাদার কত অনুগামী? লড়াই করতে এসেছি। লড়ে যাব। লড়াইয়ের ময়দানে এক ইঞ্চিও ছাড়ব না। বেইমানদের আগামী দিনে বুঝিয়ে দেব। 

এরপর আর কোনও রাখঢাক রাখেননি কল্যাণ। বলে যান, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামের গাছের তলায় বড় হয়েছিস। ৪টে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিস, ৪ খানা চেয়ারে আছিস। কত পেট্রোল পাম্প করেছিস! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে মিউনিসিপ্যালিটিতে আলু বিক্রি করতিস রে, আলু বিক্রি করতিস।' এর পরে পরেই একদিন ঘাটালের সভা থেকে শুভেন্দুর কটাক্ষ,'দেখবি, জ্বলবি, লুচির মতো ফুলবি।'

রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল স্বাভাবিক ভাবেই মনে করছিল, বোধ হয় তৃণমূল-শুভেন্দু বিচ্ছেদ শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু অবস্থার পটবদল হয়। তৃণমূলের তরফ থেকে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টাও হয়। বরফ কতটা গলেছে তা অবশ্য বোঝা যাচ্ছিল না। সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক পরিসর অধীর আগ্রহে বিষয়টির দিকে তাকিয়ে ছিল।

তৃণমূলের তরফের ওই চেষ্টার ঠিক পরেই শুভেন্দুর একটি অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু সে দিন সকলকে হতাশ করে শুভেন্দু সমবায় নিয়ে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি বক্তব্য রাখেন। বলেন,'দেশে সমবায়কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার। আরও বেশি ফার্মার্স ক্লাব খুলতে হবে। কিসান কার্ড দিতে হবে কৃষকদের। রাজ্যের মতোই কেন্দ্রও সমবায় মন্ত্রক গড়ুক।' সকলের আগ্রহের ওপর যেন একরাশ জল পড়ল।

কিন্তু এর পরদিনই একটি জনসভায় শুভেন্দু তাঁর বক্তব্যের গিয়ার-মোড অনেকটাই বদলান। সেদিন তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আমায় তাড়াননি আমিও কোথাও যাননি। আর তাঁর বক্তব্য়ের পরে-পরেই সৌগত রায় ও কল্যাণও প্রতিক্রিয়া দেন। কল্যাণ বলেন, 'আমি কেন, শুভেন্দুকে সবাই ভালবাসে।'

এ পর্যন্ত তো ঠিকই ছিল। মনে হচ্ছিল, বিবাদ বোধ হয় মিটল। কিন্তু এর পরই আজ বলাগড়ে গিয়ে ঘুরিয়ে কল্যাণের প্রতি আবার তোপ দাগলেন শুভেন্দু অধিকারী। এখন এটাই দেখার কোথাকার জল কোথায় গড়ায়!

আরও পড়ুন: বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের ইঙ্গিত বাবুলের! কল্যাণের পাল্টা, ক্ষমতা থাকলে করে দেখাক

.