লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট আবাসিকদের, রাজ্যে নজির তৈরি করল বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল
এঘটনা রাজ্যে প্রথম। এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন পাভলভের আবাসিকরাও।
মৌপিয়া নন্দী
অধীর-শুভেন্দু দ্বৈরথে যখন তোলপাড় বহরমপুর, তখন সেই বহরমপুরেই ঘটে গেল এক নিঃশব্দ বিপ্লব। কৃষ্ণনাথ স্কুলের বুথে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেন বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের ৬৪ জন আবাসিক। রীতিমতো ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন তাঁরা। রাজ্যে এঘটনা এই প্রথম। মানসিক রোগীদের ভোটাধিকার অর্জনের লড়াইয়ে আজ পথ দেখাল নবাবের শহর।
যদিও পথটা মসৃণ ছিল না একেবারেই। প্রথম যখন এবিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা ওঠে, তখন ঠাট্টা মশকরা জুটেছিল, জানাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অঞ্জলির সদস্য রত্নাবলী রায় । এমনকি নির্বাচন কমিশনও গুরুত্ব দেয়নি তাঁদের কথায়। তবে হাল ছাড়েননি তাঁরা। হাল ছাড়েননি সমাজে প্রায় একঘরে হয়ে থাকা মানসিক হাসপাতালের আবাসিকরা । তাঁদের দাবি ছিল, মানসিক হাসপাতাল এখন শুধুই আর চিকিতসা কেন্দ্র নয়। এমন অনেকের ঠিকানা যাঁরা সুস্থ হওয়ার পরও পরিবারে, সমাজে ব্রাত্য।
এরপর শুরু হয় অধিকার অর্জনের দীর্ঘ সংগ্রাম । একদিকে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে দরবার করতে থাকেন সমাজকর্মীরা, অন্যদিকে মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের সচেতন করার কাজ চলতে থাকে একইসঙ্গে। অবশেষে আসে বহু কাঙ্ক্ষিত জয়। মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের ভোটাধিকারকে স্বীকৃতি দেয় কমিশন। সমাজকর্মীরা যোগাযোগ করেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি.উলগানাথনের উদ্যোগে শুরু হয় বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের আবাসিকদের ভোটদানের তোড়জোড়।
আরও পড়ুন, বিয়ের পর প্রথম আবদার, অক্ষরে অক্ষরে মেনে স্ত্রীর মুখে হাসি ফোটালেন স্বামী
সোমবার সকাল থেকেই সাজো সাজো রব। কৃষ্ণনাথ স্কুলের বুথে ভোট দিতে যান ৬৪ জন আবাসিক। কোনও আলাদা লাইন নয়। সাধারণ ভোটারের লাইনে দাঁড়িয়েই ভোট দেন তাঁরা। পোলিং বুথে ঢোকার জন্য শুধু একজন সমাজকর্মীকে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ভোটে কোন দল জিতবে, তা জানা যাবে ২৩ মে। কিন্তু আজকের পর্বে জয় হাসিল করে নিলেন সমাজে ব্রাত্য হয়ে থাকা একঝাঁক পুরুষ মহিলা। প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন পাভলভের আবাসিকরাও।