একে একে বাতিল দুর্গাপুজোর অর্ডার, অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে আলোর শহর চন্দননগর

কুলুপুকুর ধার থেকে বিদ্যালঙ্কা এলাকাটি দু'পাশে সারিবদ্ধ দোকান ছিল শুধুই আলোর। যেখানে  এক বছর আগেও  দেখা যেত চরম ব্যস্ততা। দিনরাত এক করে কর্মীরা কাজ করতেন

Reported By: অধীর রায় | Updated By: Jul 7, 2020, 12:57 PM IST
একে একে বাতিল দুর্গাপুজোর অর্ডার, অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে আলোর শহর চন্দননগর
বড় ব্যবসায়ী এখন মুদিখানা দোকান দিয়েছেন। নিজস্ব চিত্র

অধীর রায় ও বিশ্বজিত্ সিংহ রায়

করোনা আর লকডাউনের জাঁতাকলে আলোর শহর চন্দননগর এখন অন্ধকার। দিল্লি, চেন্নাই এবং মুম্বইয়ের দুর্গাপুজোর আলোকসজ্জার চুক্তি অনেক আগে বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তবুও আশায় বুক বেঁধে বসেছিলেন চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা। কলকাতা তো আছে! এ বছর রোজগার কম হলেও কলকাতার কাজ করে সংসার চালিয়ে নিতে পারবেন তাঁরা। কিন্তু এই আশাতেও ছাই পড়ল।

গত ৩ দিনে এক এক করে কলকাতা-সহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে এবারের দুর্গাপুজোর সমস্ত চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে পুজো কমিটিগুলো। মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে  জড়িত প্রায় ৫০ হাজার আলোকশিল্পীর। তারমধ্যে অনেকের কার্যত উনুন জ্বলার পরিস্থিতি। সংসার চালাতে রোজগারের জন্য রাস্তায় নামলেন কোটিপতি ব্যবসায়ীদের বাড়ি মহিলারা। যাঁরা চার চাকার গাড়ি করে ঘুরে বেড়াতেন সেইসব বাড়ির মহিলারা এখন মুদিখানার দোকান সামলাচ্ছেন। ছোটো ব্যবসায়ী বা দিন আনা দিন খাওয়া কর্মীরা সবজি কিংবা মাছ নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। 


আলো ব্যবসায়ী এখন মাছ বিক্রেতা হয়ে গিয়েছেন। নিজস্ব চিত্র

কুলুপুকুর ধার থেকে বিদ্যালঙ্কা এলাকাটি দু'পাশে সারিবদ্ধ দোকান ছিল শুধুই আলোর। যেখানে  এক বছর আগেও  দেখা যেত চরম ব্যস্ততা। দিনরাত এক করে কর্মীরা কাজ করতেন। একের  পর এক দোকান আলো ঝলমল করতো। চলতো নানা রকম কারুকার্যের কাজ। শুধু বাংলা নয় এই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের ভিড় থাকতো। সেই এলাকায় এখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। একাধিক দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর কিছু দোকান আলোর সরঞ্জাম গুটিয়ে সবজি, মনোহারী ও মুদিখানার দোকানে পরিণত হয়েছে। আবার কেউ পুঁজির অভাবে দোকান বন্ধ করে দিয়ে দোকানের সামনে বসেই মাছ কি মুরগির মাংস বিক্রি করতে শুরু করে দিয়েছেন। এক চরম অন্ধকার নেমে এসেছে আলোর শহর চন্দননগরে।


আলোর দোকান সবজি দোকানে পরিণত হয়েছে। নিজস্ব চিত্র

এক বছর আগে যে দোকানটি ছিল আলোর জন্য বিখ্যাত আজ সেই দোকানে ঢুঁ মেরে দেখা গেল মনোহারী সামগ্রীতে ভর্তি। দোকান সামলাচ্ছেন এক মহিলা। কেন এই অবস্থা হলো প্রশ্ন করতেই ওই মহিলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, শুধু নিজের সংসার নয় আরও দশ পনেরোটি সংসার চলতো এই আলোর ব্যবসাতে। কিন্তু লকডাউন এর জন্য এবং চিন থেকে মাল আসা বন্ধ হওয়াতেই দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ধার দেনা করে সেই দোকানে মনোহারী তুলে নিজেই দোকানদার সেজে দাঁড়িয়েছেন সংসার বাঁচাতে।


রাস্তার দু'ধারে এমনই আলোর দোকানে কোথাও ঝাঁপ পড়েছে, কোথাও ভোল পাল্টেছে । নিজস্ব চিত্র

একাধিক দোকান যেমন বন্ধ হয়েছে তেমনই কয়েকটি দোকানের সামনে একদিন যাঁদের আলোকশিল্পী বলেই জানা যেত তাঁরা আজ কেউ মাছ বিক্রি করছে আবার কেউ সবজি বিক্রি করতে বসে পড়েছেন। প্রত্যেকের মুখেই একটি কথাই শোনা গিয়েছে “আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।” এখন সংসার বাঁচাতে মরিয়া হয়ে এই ব্যবসাতেই নামতে হয়েছে। লকডাউন চিন থেকে মাল আসা বন্ধ, ট্রেন বন্ধের জন্য বাইরের লোক আসা বন্ধ। তেমনি সমস্ত পুজোর অর্ডার বাতিল হওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন তাঁরা।

.