বাবার হাতে খুন হওয়া সেই জাহানার প্রেমিকের গোপন জবানবন্দি নিল আদালত
অনার কিলিং’এর শিকার জাহানার প্রেমিক করণকে বুধবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। সেখানে তাঁর গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রেমিকা খুন হয়ে গিয়েছেন। ‘খুনী’ কে জানতেন প্রেমিক। কারণ এই পরিণতি যে কোনও একদিন ঘটবে, তা হয়তো আঁচ করতে পেরেছিলেন প্রেমিক। প্রেমিকাও নিজের মর্মান্তিক পরিণতির কথা আগাম ভেবেই হয়তো প্রেমিকের নম্বরটা লিখে রেখেছিলেন শরীরে। আর সেই নম্বর থেকেই এক ভয়ানক ‘অনার কিলিং’ এর রহস্য উন্মোচন হয়েছে মঙ্গলবার। ভিন ধর্মের ভালোবাসাকে যে রক্তাক্ত করেই ছাড়বেন প্রেমিকার বাবা-দাদা, তা বুঝতে পেরেছিলেন মুম্বইয়ের বাসিন্দা করন। তরুণী জাহানার শরীরে লিখে থাকা ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই মুম্বইয়ে তার বাড়িতে পৌঁছেছিল পুলিস। আর তাতেই বেরিয়ে পড়ে আসল সত্য। ‘অনার কিলিং’এর শিকার জাহানার প্রেমিক করণকে বুধবার বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। সেখানে তাঁর গোপন জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
আরও পড়ুন: বুধবারের ভূমিকম্পে রাজ্যে মৃত্যু, কোথায় কী ক্ষতি হল জেনে নিন
অনার কিলিং' এর এই রোমহর্ষক ঘটনায় নতুন সংযোজন সোমবার। বর্ধমানের জামালপুরে রাস্তার ধার থেকে এক তরুণীর দেহ উদ্ধার করে পুলিস। ময়নাতদন্তের সময় ডোমেরা তরুণীর পায়ে দুটি নম্বর লেখা দেখতে পান। তা নিয়েই শুরু হয় তদন্ত। উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, বিহারের মুজফফরপুরের ইলাদাদ গ্রামের বাসিন্দা জাহানা খাতুন। প্রেমে পড়ে ভিন ধর্মের একটি ছেলের। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তরুণীর পরিবার। তাই সঙ্গীর সঙ্গেই পালিয়ে যায় সে। কিন্তু বাড়ির লোক তাদের ফিরিয়ে আনে। তবুও বাঁধা মানেনি প্রেম। আবার পালায় দুজনে। এবারেও বুঝিয়েসুঝিয়ে ফিরিয়ে আনে বাড়ির লোক। কিন্তু এবার মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে অন্য প্ল্যান ছিল তরুণীর বাবা ও দাদার।
বাবা মহঃ মুস্তাক ওরফে মুস্তাফা আর দাদা মহঃ জাহিদ, দুজনেই কলকাতায় পার্ক সার্কাস এলাকায় থাকেন। তাঁরা পেশায় গাড়ি চালক। তাঁরা বুঝিয়ে জাহানাকে কলকাতা নিয়ে আসেন। কলকাতা থেকে গাড়ি করে ৩১ অগাস্ট বর্ধমানের উদ্দেশে রওনা দেন। পথের মাঝে জামালপুরে শ্বাসরোধ করে বাবাই খুন করেন জাহানাকে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মেয়ের মাথায় ভারী পাথর দিয়ে আঘাত করেন তিনি।
আরও পড়ুন: জামাই শ্বশুরকে ফোন করে শুধু 'বাবা' বলেছিলেন, তাতেই বিপদ জানান দিয়েছিল!
এরপর তরুণীর দেহ নবগ্রামে ফেলে পালান বাবা ও দাদা। পরের দিন অর্থাত্ এই মাসের প্রথম দিন জাতীয় সড়কের ধারে ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলে। পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। এরপরই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। ডোমেরা যুবতীর শরীরের দুটি অংশে দুটি ফোন নাম্বার দেখতে পায়। এর একটি সেই প্রেমিকের, যিনি বর্তমানে মুম্বাইতে কর্মরত। জামালপুর থেকে পুলিশের দল মুম্বই যায়। খোঁজ পায় জাহানার প্রেমিক করণের। পুলিস মৃত জাহানার ছবি দেখায় ওই যুবককে। একেবারে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। জানান, জাহানার বাবা ও দাদা তাকে কলকাতায় নিয়ে যান। তাঁরাই জাহানাকে খুন করেছে বলে অভিযোগ করেন ওই যুবক।
আরও পড়ুন: পাত্রী দেখতে গিয়ে তাঁর বাড়িতে বারাকপুরের পাত্র যা ঘটালেন, তা এই রাজ্যে কেন দেশে কোথাও আগে ঘটেনি!
ওই যুবকের কাছ থেকেই বাবা ও দাদার ফোন ও ঠিকানা পায় পুলিস। শুরু হল তল্লাশি। পুলিসি জেরায় ভেঙে পড়েন জাহানার বাবা ও দাদা। তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।