করোনায় 'সাবধানী' জগন্নাথও, মাসির বাড়ি গেলেন কখনও মারুতি কখনও এসি গাড়িতে
করোনার কোপে পড়ে ম্লান হয়েছে উৎসবের জাঁকজমক। তবে নামমাত্র পুজো সেরেছেন সকলেই।
নিজস্ব প্রতিবেদন: রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম। করোনা আবহে এবার পুরী থেকে উধাও চির পরিচিত এই ছবি। সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে কার্ফুর মধ্যেই চলছে রথযাত্রা। একই ছবি রাজ্যজুড়েই। করোনার কোপে পড়ে ম্লান হয়েছে উৎসবের জাঁকজমক। তবে নামমাত্র পুজো সেরেছেন সকলেই।
মালদা ইসকনের রথ
মারুতিতে চড়ে মাসির বাড়ি গেলেন জগন্নাথদেব। করোনা আবহে মালদা ইসকন মন্দিরের জগন্নাথদেবের যাত্রা বাহন পরিবর্তণ করা হল। জেলার ইসকন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জানান প্রশাসনের নির্দেশ মেনে এই রথযাত্রা উৎসব পালন হয়। পুজোর আচার পালনে থাকল না কোনও আড়ম্বর। উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৫০জন।
মাহেশের রথ
একাকী পড়ে মাহেশের রথ। ৬২৪ বছরে এমনটা বোধহয় এই প্রথম হল। মাহেশে রথের রশিতে টান পড়ল না। ভক্ত সমাগমে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও প্রথা মেনে চলছে সব আচার অনুষ্ঠান। রথযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকে মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে পুজোপাঠ হয়। হাজির ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন ভক্ত। বেলার দিকে অবশ্য রথের মধ্যে নিজেদের আনা জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি রেখে পুজো করেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন বলরাম বসুর বাড়ির রথ নিজের হাতে টেনে ছিলেন রামকৃষ্ণ, জেনে নিন সেই ঘটনা
শ্যামপুকুরের দাশ বাড়ির রথ
পুরীর পাক শালার রীতি মেনে ভোগ তৈরি হয় শ্যামপুকুরের দাশ বাড়িতে। আশপাশের এলাকায় বিখ্যাত এই বাড়ির রথযাত্রা। তবে এবার রথের চাকা গড়াবে না। মন খারাপ পড়শিদের। ইতিহাস বলছে, ক্যান্সার আক্রান্ত রামকৃষ্ণদেব ছিলেন শ্যামপুকুরের দাশ বাড়িতে। এখন সেখানেই মন্দির।
চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জের রথ
২৬৫ বছরে এই প্রথম রথের চাকা থমকাল চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে। গেটের ভিতরেই বন্দি পড়ে রইল প্রায় ৬৫ টন ওজনের লোহার রথ। অন্যবার সকাল ১০টায় প্রথম রথের রশিতে টান পড়ে। রথ ছোটে তালডাঙা মোড়ে মাসির বাড়ির উদ্দেশে। ব্যতিক্রম ঘটল এই প্রথম। তবে রীতি মেনে যথারীতি মন্দিরে জগন্নাথদেবের পুজো হয়েছে। সেবায়েতরাই ভক্তদের পুজো পৌঁছে দিয়েছেন মায়ের পায়ে।
বাগবাজারের বলরাম মন্দিরের রথ
বলা হয়, শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে হাতে টেনেছিলেন এই রথের রশি। বাগবাজারের বলরাম মন্দিরে এখনও পুরনো সেই রথই রাখা। সেই ইতিহাসকে মনে রেখেই প্রতি বছর বেলুড় মঠের মহারাজরা আসেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন পরিচালিত বলরাম মন্দিরে। তবে করোনা আবহে এবার সাধারণের প্রবেশ বন্ধ।
আরও পড়ুন করোনায় ঘরবন্দি মানুষ, লকডাউনে মাসির বাড়ি যাওয়া হল না জগন্নাথেরও!
গুপ্তিপাড়ার রথ
গুপ্তিপাড়ার সর্বপ্রাচীন মহেশের রথ এর পরেই 280 বছরের কাঠের রথ এর চাকা আজ আর গড়ালো না। রথের রশি রইল পড়ে, শেডের তলায় রথ থেকে গেল পুলিশ পাহারায়। প্রতীকী অনুষ্ঠান হল মন্দিরে। নিজের মন্দির ছেড়ে পাশে কৃষ্ণের মন্দিরে হলো মাসির বাড়ি। সেখানেই পালন হবে মাসির বাড়ির অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান হচ্ছে সরকারি নিয়ম মেনে।
বেলঘড়িয়ার রথ
শতাব্দী প্রাচীন এই রথ উত্সবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রথের দড়িতে টান না পড়লেও জগন্নাথদেবের পুজো হলো পৌরাণিক রীতি মেনেই। পৌরানিক রীতি মেনে পুজো হলেও ভক্তদের মধ্যে দেখা গেলো না সামাজিক দুরত্ব। কারোর মুখে ছিলো না মাস্ক।
সামাজিক দুরত্ব না থাকা এবং মুখে মাক্স না দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে পরিস্কার উত্তর জগন্নাথদেবের ভরসাতেই মাক্স ছাড়া এসেছেন।
সল্টলেকের রথ
এসি গাড়িতে সল্টলেকের রাস্তা ঘুরল জগন্নাথ শুভদ্রা এবং বলরাম। প্রতি বছর সল্টলেকে যেখানে জাঁকজমক করে রথ বের হত। প্রচুর মানুষের সমাগম হত সেখানে করোনার জেরে এবার রথের বদলে এসি গাড়িতে করে জগন্নাথ শুভদ্রা এবং বলরাম মাসির বাড়িতে গেলো। ৯ দিন পর আবার এসি গাড়িতে করে মাসির বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরবে।