'বাড়ির রান্নাই খেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কিন্তু মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়নি' মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পাল্টা হাঁসদা
রান্না করেছিলেন বাড়ির মহিলারাই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘুরে গেলেও অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার আলাদা তেমন ব্যবস্থা হয়নি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মধ্যাহ্নভোজের সব রান্নাই হয়েছিল বাড়িতে। রান্না করেছিলেন বাড়ির মহিলারাই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘুরে গেলেও অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার আলাদা তেমন ব্যবস্থা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানালেন বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রামের বিভীষণ হাঁসদার পরিবার।
গত পাঁচ নভেম্বর বাঁকুড়ায় এসেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিনভর ঠাসা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাঝেই ঐ দিন দুপুরে তিনি পৌঁছে যান বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের চতুরডিহি গ্রামে। সেখানেই স্থানীয় বাসিন্দা বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে মাটির দাওয়ায় খেজুর পাতার চাটাইয়ের ওপর বসে মধ্যাহ্নভোজ সারেন অমিত শাহ।
কিন্তু সেই মধ্যাহ্নভোজে অমিত শাহ যা যা খেয়েছিলেন তা আনা হয়েছিল পাঁচতারা হোটেল থেকে! গতকাল বাঁকুড়ার খাতড়ায় সরকারি জনসভা থেকে এমন অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। চাঁচাছোলা ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ সবটাই 'নাটক, ভাঁওতাবাজি'।
আরও পড়ুন: এনামুল ও লালার কালো টাকা বৈধ করতেন গোবিন্দ আগরওয়াল, তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ মানতে নারাজ বিভীষণ হাঁসদা ও তাঁর পরিবার। তাঁদের দাবি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অতিথি হিসাবে আসছেন জেনে আলু ভাজা, পটল ভাজা, বেগুন ভাজা, করলা ভাজা-সহ বিভিন্ন সুস্বাদু পদ সহযোগে ডাল, ভাত খাওয়ার আয়োজন করা হলেও সেগুলি সবই রান্না হয়েছিল তাঁর নিজের বাড়িতেই। কাঠের উনুনে মাটির পাত্রে সেসব রান্না করেছিলেন বাড়ির মহিলারাই। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাড়ি ঘুরে গেলেও বিভীষণ হাঁসদার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার তেমন ব্যবস্থা হয়নি। এই ঘটনা আংশিক সত্য বলে মানছেন বিভীষণ হাঁসদা নিজেও।
তাঁর দাবি, দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরতা মেয়ে রচনা হাঁসদা খুব কম বয়স থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সুযোগ পেয়ে বিষয়টি তিনি জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। কিন্তু তারপর স্বাস্থ্য দফতর একবার পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করে নিয়ে গেলেও মেয়ের চিকিৎসার আরও ভাল কোনও ব্যবস্থা এখনও হয়নি। বিভীষণ হাঁসদা ও তাঁর পরিবার চান রাজনৈতিক তরজা নয় মেয়ে যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে তার ব্যবস্থার জন্য এগিয়ে আসুক সকলেই।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, "ফাইভ স্টার হোটেল থেকে বাসমতী চালের ভাত নিয়ে এসে দলিতদের ঘরে বসে খায় ওরা। যদিও তোমার ঘরে বসে খাব বলেছিলেন! রান্নার সময় দেখলাম ধনেপাতা কাটা হচ্ছে। অথচ উনি খেলেন পোস্তর বড়া! যে তরকারি রান্না হল, সেই খাবার খেলেন না! মানুষ এখন এসব দেখতে পায়। মানুষ ওদের ভাঁওতাবাজি ধরে ফেলেছে।"
একইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "অমিত শাহের আসার জন্য আদিবাসী পরিবারের দালান রং করা হয়েছিল। স্যানিটাইজ করা হয়েছিল। কিন্তু এদিন খাতড়ায় আসার পথে একটি তফশিলি গ্রামে যান। তার জন্য কোনও রং করতে হয়নি, স্যানিটাইজ করতে হয়নি। ওই গ্রামে গিয়ে সেখানকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের অভাব-অভিযোগ সম্বন্ধে খোঁজখবর নেন। সমস্ত সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা তাঁরা পাচ্ছেন কিনা, সে খোঁজ নেন। তাতে তাঁর কাছে সেখানকার বাসিন্দারা পাকা বাড়ির আর্জি জানান বলে সভায় উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে খাতড়া পঞ্চায়েতের অন্তর্গত তফশিলি অধ্যুষিত বেঁকিয়া গ্রামে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।