Durga Puja 2021: অষ্টমীতে ৮ মণ, নবমীতে ৯ মণ চালের ভোগ তৈরি হত, সন্ধিপুজোয় দাগা হত কামান
হিজলি ক্যানাল দিয়ে প্রতিমা নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হত রূপনারায়ণে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজত্ব নেই, রাজগরিমাও নেই। কিন্তু রাজ-ঐতিহ্য মেনে আজও যথারীতি দুর্গাপুজো হয়ে আসছে মহিষাদল রাজবাড়িতে।
পুজো হলেও রাজ আমলের জৌলুস কমেছে। দুর্গা পুজোর কয়েকটা দিন যাত্রা থেকে শুরু করে নানা ধরনের অনুষ্ঠান, ভোগ বিতরণ, বিসর্জনের শোভাযাত্রা-- সব কিছুতেই অসাধারণ জৌলুস ছিল আগে। আগের তুলনায় সব ক্ষেত্রেই জৌলুস অনেকটাই কমেছে। মহিষাদলে একাধিক বিগ বাজেটের দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও মহিষাদলের দুর্গাপুজো মণ্ডপে এখনও ইতিহাস ও ঐতিহ্যের টানে একটিবারের জন্য হলেও ভিড় জমান এলাকার বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021:দেবীর পুজো এখানে আজ জমিদারবাড়ির চৌকাঠে হয়
আগের চেয়ে পুজোর জৌলুস যে কমেছে, সে কথা স্বীকার করেন রাজবাড়ির সদস্যরাও। রাজ-আমলে ধুমধাম করে পুজো হত। নানা অনুষ্ঠান হত। রাজত্ব চলে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে পুজোর জৌলুস কমেছে। রাজবাড়ির সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় আড়াইশো বছর আগে মহিষাদলের রানি জানকীর আমলে এই পুজো শুরু হয়। সেই সময় থেকেই মহিষাদল রাজবাড়িতে ধুমধামের সঙ্গে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। এ পুজোর সব চেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়-- ষষ্ঠীতে ছ'মণ, সপ্তমীতে ৭ মণ, অষ্টমীতে ৮ মণ, নবমীতে ৯ মণ চালের ভোগপ্রসাদ তৈরি করে তা এলাকার বাসিন্দাদের দেওয়া হত। কিন্তু রাজত্ব চলে যাওয়ার পর এই আড়ম্বর ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এখনও পুজোর দিন প্রসাদ হয়। কিন্তু তা খুবই কম।
আগে রাজবাড়ি থেকে কামান দেগে সন্ধিপুজো শুরু হত। মহিষাদল রাজবাড়ির কামানের তোপের শব্দে আশপাশের এলাকার পুজোমণ্ডপেও সন্ধিপুজো শুরু হত। বহু বছর ধরে কামান দাগার পরিবর্তে পটকা ফাটিয়ে সন্ধিপুজো শুরু করা হয়। দুর্গাপুজোয় ১০৮টি নীল পদ্ম লাগে। এখানে নবরাত্রিও হয়। মহালয়ার পর থেকে রাজবাড়ির দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া অশ্বত্থ গাছের তলায় ন'টি ঘট ওঠে। দেবীপ্রতিমার একপাশে ঘট থাকে, অন্য পাশে বেদির উপরে ধান রাখা হয়। এলাকায় ভাল ফসল লাভের আশায় দেবীর পাশে থাকা বেদিতে ধান রাখা হয় বলে রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ আমলে এ বাড়ির দুর্গামণ্ডপ লাগোয় অনুষ্ঠানের জন্য এক স্থায়ী মঞ্চ ছিল। সেখানে যাত্রা থেকে শুরু করে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হত। তবে বর্তমানে সেই মঞ্চ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠানের বহরও কমেছে।
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আমফান ও যশের তাণ্ডবে রাজবাড়ির ঠাকুরদালানের ছাদ উড়ে যায়। স্থানীয় বিধায়ক তিলককুমার চক্রবর্তী উদ্যোগে বিধায়ক কোটার টাকায় ঠাকুরদালান নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আগত দর্শনার্থীদের যাতে কোনো অসুবিধে না হয় তার জন্য রাজবাড়ির প্রতিনিধিদের পাশাপাশি মহিষাদল বিধানসভার বিধায়ক, মহিষাদলের প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে পুজোটি সুন্দরভাবে পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। করোনার কারণে সরকারি নিয়ম মেনেই এবারের পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। এই পরিবারের সদস্য বিধায়ক তথা অভিনেত্রী জুন মালিয়া। তিনিও এ পুজোয় উপস্থিত থেকে পুজো উপভোগ করে থাকেন।
মহিষাদল রাজবাড়ির সিঁদুর খেলার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। সিঁদুর খেলায় অংশ নেন রাজপরিবারের মহিলারাও। আগে রাজবাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজলি টাইডাল ক্যানেল হয়ে বড় নৌকা করে শোভাযাত্রা সহকারে গেঁওখালিতে রূপনারায়ণ নদীতে ঠাকুর বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হত। প্রায় ৬০ বছর আগে তা-ও বন্ধ হয়েছে। এখন রাজবাড়ি লাগোয়া রাজদিঘিতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: বিসর্জনের সময় আজও মাকে লণ্ঠন-হাতে পথ দেখানো হয়