অনিচ্ছা সত্ত্বেও দলছুট হস্তিশাবক উদ্ধার বনকর্মীদের

শনিবার রাতে বন্ধ মানাবাড়ি চা-বাগানে হাতির একটি দল আসে। আজ ভোরে দলটি ভুট্টাবাড়ি জঙ্গলে ফিরে গেলেও দলছুট হয়ে পড়ে একটি আড়াই মাসের হস্তিশাবক

Updated By: Sep 27, 2020, 01:38 PM IST
অনিচ্ছা সত্ত্বেও দলছুট হস্তিশাবক উদ্ধার বনকর্মীদের

নিজস্ব প্রতিবেদন: আর তাকে ফিরিয়ে নেবে না তার দল। সারাজীবন স্বজাতিদের থেকে বিচ্যুত একাকী বিচ্ছিন্ন এক জীবনই হয়তো কাটাতে হবে তাকে। তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তার নিরাপত্তার কথা ভেবেই একটি দলছুট হস্তিশাবককে ধরতে বাধ্য হল বনকর্মীরা। 

শনিবার রাতে মালবাজার মহকুমার বন্ধ মানাবাড়ি চা-বাগানে ১১টি হাতির একটি দল আসে। জানা গিয়েছে, রাতে বাগানের বিভিন্ন সেকশনে ঘুরে বেড়ায় দলটি। দলে দু-একটি হস্তিশাবকও ছিল। ভোরবেলায় হাতির দলটি ভুট্টাবাড়ি জঙ্গলে ফিরে গেলেও দলছুট হয়ে পড়ে একটি আড়াই মাসের  হস্তিশাবক। রবিবার সকাল থেকেই বাচ্চা হাতিটি চা-বাগানের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। আর তা দেখতে ক্রমশ উপচে পড়ে ভিড়। ভিড়ে ভয় পেয়ে শাবকটি চা-বাগানেরই একটি ঝোপে ঢুকে পড়ে। 

এরপর ঘটনাস্থলে মালবাজার, তারাঘেরা এবং নোয়াম রেঞ্জের বনকর্মীরা যান। ভিড় সামলাতে মালবাজার পুলিশও যায় ঘটনাস্থলে। কিন্তু কোনও ভাবেই ভিড় সরানো যাচ্ছিল না। এ দিকে ভিড়ে ভয় পেয়েই শাবকটি ঝোপের মধ্যে ছোটাছুটি করতে থাকে। এবং ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এরকম চলতে থাকলে শাবকটি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে দেখে শেষমেষ সেটিকে উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। তবে এ ধরনের ঘটনায় বনকর্মীরা শাবককে সাধারণত ধরেন না। কেননা, কোনও হাতি মানুষের সংস্পর্শে এসে গেলে তাকে আর ফিরিয়ে নেয় না তার দল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনও উপায় ছিল না।

শাবকটিকে কোলে তুলে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে আসা হয়। তবে পরবর্তী কর্মপ্রক্রিয়া বিষয়ে বন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনও নির্দেশ না থাকায় প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে রাখতে হয় শাবকটিকে। শেষে বন দপ্তরের আধিকারিকের অনুমতি মেলায় গরুমারা এনআইসি-তে নিয়ে যাওয়া হয় হাতির বাচ্চাটিকে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার লালন-পালন শুরু হবে।

এ ঘটনায় বন দপ্তরের  কুইক রেসপন্স টিমের সদস্য, ওমনারায়ন খেস বলেন, 'হস্তিশাবকটি দল থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। লোকজন সেটিকে নিয়ে মেতে উঠল। ওর পিছনে দৌড়তে লাগল। মোবাইল নিয়ে ছবি তুলবে বলে তাড়া করতে লাগল। এসবের ফলে শাবকটি হাঁপিয়ে গিয়েছিল। শাবকটির নিরাপত্তার জন্যই ওকে শেষমেষ আমরা ধরলাম। না হলে হয়তো ধরতাম না, অপেক্ষা করতাম।' 

পরিবেশপ্রেমী নফসর আলি বলেন, 'করোনার আবহে স্থানীয় মানুষ যে আচরণ করল তা খুবই দুঃখজনক। তারা দল বেঁধে হাতির ছানাটিকে উত্ত্যক্ত করল। কারও মুখে মাস্ক নেই, শারীরিক দূরত্ব রক্ষার কোনও বালাই নেই। বন ও বন্যপ্রাণ বিষয়ে সাধারণ মানুষের আরও সচেতন হওয়া দরকার। আরও শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। এ দিন তাঁরা যা করলেন, তাতে তাঁদেরও ক্ষতি হল, হস্তিশাবকটিরও ক্ষতি হল।'

.