আতঙ্কে রসদ কিনতে হুড়োহুড়ি, ২ ঘণ্টার মধ্যেই বাজার ফাঁকা, কালোবাজারির অভিযোগ ক্রেতাদের
দরকার দৈনিক ৫০০ গ্রাম আলু। গৃহবধূকে কিনতে দেখা গেস ২০ কিলোগ্রাম আলু! কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পেটি পেটি ডিম।
নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭-এ। ২৩ মার্চ বিকেল ৪টে থেকে ২৭ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লক্ষ্য একটাই 'ব্রেক দ্য চেন'। তা সফল করতে কেন্দ্রের পরামর্শে সম্মতি জানিয়ে রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, বন্ধ থাকবে বেশিরভাগ দোকানপাঠ। বিকেল থেকে রাজ্যে কোনও গণপরিবহণ চলবে না। বন্ধ থাকবে সব দোকান, অফিস, কলকারখানা, গোডাউন। ৭ জনের বেশি মানুষের জমায়েতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হাসপাতাল, বিমানবন্দর, রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পরিবহণ লকডাউনের আওতায় পড়বে না। খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বহনকারী গাড়িগুলিকেও ছাড় দেওয়া হবে। আদালত, সংশোধনাগার, স্বাস্থ্য পরিষেবা, পুলিস, আধাসেনা, বিদ্যুত্, জল, দমকল, জরুরি পরিষেবা, ব্যাঙ্ক, ATM, সবজি, ফল, মাথ-মাংস, দুধ, পাউরুটি আওতার বাইরে থাকবে। পেট্রোল পাম্প, রান্নার গ্যাস, ওষুধের দোকান ও সংবাদমাধ্যমকেও শাটডাউনের আওতায় থাকবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউন আওয়ার্স শুরু হওয়ার আগে, এদিন সকাল থেকে কলকাতা সহ জেলার বাজারগুলিতে দেখা গেল মিশ্র ছবি।
হাওড়া-
হাওড়ার র রামরাজাতলা বাজারে রসদ সংগ্রহ করতে বাজারে উপছে পড়া ভিড়। পরিস্থিতি এমনই যে বাজারের ভিতর ঢুকতেই পারা যাচ্ছে না। বাজারের বাইরে রাস্তার উপর পসরা নিয়ে বসা দোকানির কাছেও সবজি কিনতে মানুষের ভিড়। মানুষজনকে দেখা গেল ব্যাগভর্তি সবজি বাজার করে নিয়ে যাচ্ছেন। পেটি পেটি ডিম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
নদিয়া-
ট্রেন বন্ধ। পাশাপাশি করোনা আতঙ্ক। সকাল হতেই কল্যাণী থেকে শান্তিপুর পর্যন্ত স্থানীয় বাজারগুলিতে লক্ষ্য করা গেল উপচে পড়া ভিড়।
দুর্গাপুর-
আজ সকালে বাজার খোলার সাথে সাথে মানুষের ভিড়। দুর্গাপুরের সেন মার্কেট এলাকায় সবজি বাজারে ব্যাপক ভিড়। গতকাল জনতা কার্ফু থাকার পর, আজ বাজার খুললে ক্রেতাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। অভিযোগ, সবজির দাম কিছুটা বেশি।
ক্যানিং-
ক্যানিং বাজারে ক্রেতাদের চাপে হিমশিম খাচ্ছে দোকানদার। ভিড়ে ঠাসা ক্যানিং বাজার। সরকারের তরফে ৭ জনের বেশি মানুষের ভিড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর উল্টো চিত্র দেখা গেল ক্যানিং বাজারে। ভিড়ের চাপে পড়ে দোকানদাররা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাইছে।
হুগলি-
চাঁপদানি বাজারে পুলিসি হানা। বিক্রেতারা ন্যায্য দামে জিনিস বিক্রি করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে চাঁপদানির সবজি ও মাছ বাজারে হানা দেয় ভদ্রেশ্বর থানার পুলিস।
মালদা-
মালদা জেলার বাজারগুলিতে উপচে পড়া ভিড়। ইংরেজবাজার পুর শহরের চিত্তরঞ্জন পুরবাজার, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র পুরবাজার, নেতাজি পুরবাজারে ছবিটা প্রায় একই। আমদানি কম থাকায় সবজি থেকে মাছ, সবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম দ্বিগুণ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
বর্ধমান-
সকাল থেকেই বাজারে মানুষের ঢল। সকলেই চাইছেন বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী মজুত করতে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সবজির দামও। সুযোগে বুঝে কিছু অসাধু ব্যবসাদার বাজারে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করতে চাইছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজার থেকে স্টেশন বাজার, নীলপুর, কালনাগেট বা পুলিস লাইন বাজার সর্বত্রই ছবিটা প্রায় এক।
সোনারপুর-
সোমবার সকালে পুলিস ও প্রশাসনের উদ্যোগে সোনারপুর বাজারে নজরদারি চালানো হয় ৷ সবজি, আলু, মাছ ও চাল বিক্রেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়, তাঁরা যেন নির্ধারিত দামের বেশি দামে জিনিস বিক্রি না করেন ৷ পাশাপাশি, কোনও ক্রেতাও যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত রসদ মজুত করার চেষ্টা না করেন, সেই বিষয়েও বিক্রেতাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বাঁকুড়া-
লক ডাউনের আগেই বাড়িতে যথেষ্ট নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করতে ভিড় উপচে পড়ল বাঁকুড়ার বাজারগুলিতে। আজ সকাল থেকে বাঁকুড়া শহরের সবজি বাজার থেকে মুদির দোকান সর্বত্রই থিকথিকে ভিড়। সরকারের তরফে বাজার, মুদি দোকান, অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর দোকান খোলা থাকবে বলে আশ্বস্ত করা হলেও, আশঙ্কায় এক গৃহবধূকে দেখা গেল ২০ কেজি আলু কিনে নিয়ে যেতে। সবজি থেকে মশলা , পাঁউরুটি থেকে চাল-আটা, ডিম থেকে শুরু করে মাছ-মাংসের দোকান, সর্বত্রই ছবিটা প্রায় একই। সুযোগ বুঝে চলছে কালোবাজারিও। দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে জিনিস।
বহরমপুর-
বহরমপুরের ছবিটাও এক। দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত চলা বাজার সকাল ১১টা বাজতেই ফাঁকা। পড়ে আছে সামান্য কিছু আলু আর পেঁয়াজ। কোনও সবজি আর নেই। লঙ্কা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়ানোর দাবি করেছেন ক্রেতারা।
কোচবিহার-
বহরমপুরের মতো কোচবিহার টাউনের ছবিটাও একই। রাস্তাঘাট ফাঁকা। বাজারে আলু, পেঁয়াজ, মাছ-মাংসের দোকানে লোক দেখা গেলেও অযথা ভিড় নেই।
আরও পড়ুন, ছবি : লকডাউন শুরু হতে আর কয়েক ঘণ্টা, কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে রসদ মজুতের ভিড়
বালুরঘাট-
লকডাউন হলেও বাজার খোলা থাকবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসবাণীর পরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা গেল বাজার বন্ধ হওয়ার আতঙ্ক। সোমবার সকাল হতেই বালুরঘাটের বাজারগুলিতে উপছে পড়ল ভিড়। বেলা ১০টা বাজার আগেই বাজারের সমস্ত জিনিসপত্র উধাও।