গলায় বরমাল্য, সিঁথি রাঙা সিঁদুরে, 'দেবদূত' বিষ্ণুর চোখে চোখ রেখে বিভোর মাম
পণসামগ্রী না পেয়ে ১৬ অগাস্ট বিয়ে করতে এসেও ফিরে যায় পাঁড়ুইয়ের পাত্র। তারপরই স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের উদ্যোগে অন্য পাত্রের সঙ্গে বিয়ে হয় মামের।
নিজস্ব প্রতিবেদন : নায়িকার বিয়ে ভেঙে গেছে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নায়িকা। এমন সময়ই অকুস্থলে আবির্ভাব নায়কের। নায়িকার পাশে দাঁড়ালেন নায়ক। তাঁকে সমস্ত সমালোচনা, বিপদ থেকে উদ্ধার করলেন নায়ক। নায়কের হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে অতীত ভুলে আবার নতুন জীবনের স্বপ্নে সওয়ারি হলেন নায়িকা। সিনেমার দৃশ্যে এই গল্প আমরা বহুবার দেখেছি। নায়িকার দুঃখে তাঁর সঙ্গেই কেঁদেছে দর্শক। আবার শেষমেশ হ্যাপি এন্ডিং-এ হাততালিতে ফেটে পড়েছে হল। কিন্তু এবার আর সিনেমা নয়। শান্তিনিকেতনের মামের বিয়েকে ঘিরে পাড়াপড়শি, আত্মীয়-স্বজন সবাই সাক্ষী থাকল 'ঠিক যেন সিনেমা'র মত বাস্তবের।
আরও পড়ুন, "ওরাও ফেলনা নয়", 'লক্ষ্মী'কে বিয়ে করে গর্বিত রাজীব
বীরভূমের বোলপুরের শান্তিনিকেতনের রতনপল্লি এলাকার বাসিন্দা দিলীপ ঘোষ। পেশায় সাইকেল মিস্ত্রি। যত্সামান্য আয়। দিন আনি দিন খাই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্ট করে দিন গুজরান করেন। এদিকে মেয়ে মামের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। তাকে পাত্রস্থ করতে হবে। সুপাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে। মাথায় অনেক বড় চিন্তা। ছোট্ট গরিবের সংসারে কীভাবে মেয়ের বিয়ে দেবেন, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলেন দিলীপ দাস।
অবশেষে পাঁড়ুইয়ের বাসিন্দা এক পাত্রের সঙ্গে মেয়ে মামের বিয়ে স্থির করেন দিলীপবাবু। স্থির হয় ১৬ অগাস্ট বিয়ে হবে। এদিকে ছেলের বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য হার, আঙটি, খাট পণ চাওয়া হয়। কিন্তু আর্থিক সামর্থের অভাবে পাত্রের বাড়ি দাবিদাওয়া কোনওভাবেই জোগাড় করে উঠতে পারেননি দিলীপবাবু। ফলে বৃহস্পতিবার বিয়ে করতে এসেও, ফিরে যায় পাত্র। বিয়ে ভেঙে যায় মামের।
আরও পড়ুন, প্রেম করে বিয়ের ৬ মাসের দাম্পত্যেই চুরমার স্বপ্ন, পরিণতি মর্মান্তিক
এরপরই বোলপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুকান্ত হাজরার কাছে ছুটে যান দিলীপবাবু। গোটা বিষয়টি খুলে বলেন তাঁকে। দিলীপবাবুর মুখে সব কথা শুনে আর দেরি করেননি সুকান্ত হাজরা। সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে কাজ করে বিষ্ণু দাস বলে একটি ছেলেকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কাউন্সিলরের প্রস্তাবে বিয়েতে রাজি হয়ে যান বিষ্ণুও।
এরপর বৃহস্পতিবার রাতেই ধুমধাম করে বিষ্ণুর সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় মামের। চার হাত এক হয়। চলে ভূরিভোজ। কোনও পণ ছাড়াই মেয়েকে বিয়ে দেন দিলীপবাবু। এমনকি বিয়ের সব খরচ বহন করেন কাউন্সিলর সুকান্ত হাজরা-ই। বিয়ে ভাঙতে ভাঙতেও বিষ্ণুর হাত ধরে সংসারে জীবনে প্রবেশ করে মাম। মেয়েকে সুপাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিতে পেরে খুশি বাবা দিলীপ দাস। আর বিষ্ণুর মতো একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে খুশি বাঁধ মানছে না মামেরও।