৭ জেলার সভাপতি বদল, 'দলের ঊর্ধ্বে কেউ নয়,' কড়া বার্তা তৃণমূল নেত্রীর
কোন কোন জেলায় সভাপতির বদল হল? কাকে সরিয়ে কে এলেন?
নিজস্ব প্রতিবেদন : দলের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল এবং দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে বহু আগেই এই বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছিলেন । বৃহস্পতিবার দলের সাংগঠনিক রদবদল করতে গিয়ে সেই বার্তাকেই প্রাধান্য দিলেন দলনেত্রী । ২৪টি জেলার মধ্যে ৭টি জেলার সভপতিকে সরিয়ে দিয়ে আগামী নির্বাচনে জেলার ভিত শক্ত করার পাশাপাশি সবাইকেই এই বার্তা দিয়ে রাখলেন দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন।
কোচবিহারের সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর জায়গায় নতুন সভাপতি হলেন পার্থপ্রতিম রায়। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কাজকর্ম নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না দলনেত্রী । সেই জায়গায় পার্থপ্রতিম রায়ের দলের প্রতি আনুগত্য অনেক বেশি। এমপি টিকিট পাওয়ার দাবিদার হয়েও তাঁকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল। বিজেপির প্রলোভনে পা দেননি । পুরস্কার হিসেবে এবার মমতা তাঁকে এই পদ দিয়ে সংগঠনকে মজবুত করতে চাইছেন।
নদীয়াতে এতদিন যৌথভাবে জেলার দায়িত্ব সামলাতেন মহুয়া মৈত্র এবং শঙ্কর সিং। এবার আর যৌথ নয়, শুধু মহুয়াতেই আস্থা রাখলেন দলনেত্রী । মহুয়ার লড়াকু মানসিকতা এবং স্বচ্ছ ইমেজকে কাজে লাগাতে চান মমতা।
বাঁকুড়ার জেলা সভাপতি শুভাশিস বটব্যালকে পদ হারাতে হল মমতার ফোন না ধরার জন্য। মূলত জনসংযোগ একদম ছিল না প্রাক্তন জেলা সভাপতির । শুভাশিসের ব্যক্তিগত ইমেজ নিয়ে দলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। তাই তরুণ শ্যামল সাঁতরার স্বচ্ছ ইমেজ এবং সবস্তরে গ্রহণযোগ্যতায় এবার আস্থা রাখলেন মমতা।
বীরবাহা সোরেনকে সরিয়ে ঝাড়গ্রামের জেলা সভাপতি হলেন দুলাল মুর্মু । বীরবাহাকে নিয়ে দলের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল ক্রমশ মাথা চারা দিয়ে উঠছিল। ভাঙন প্রতিরোধেই আদিবাসী নেতা দুলাল মুর্মুকে দায়িত্ব দিল দল।
শান্তিরাম মাহাতোকে সরিয়ে পুরুলিয়া জেলা সভাপতি করা হল গুরুপদ টুডুকে। মূলত বয়েসের কারণেই সরিয়ে দেওয়া হল পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোকে। এছাড়া সাংগঠনিক কাজে পুরোপুরি ব্যর্থ শান্তিরাম মাহাতো। জেলার নেতাদের উপর তাঁর কন্ট্রোল ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিল। বিজেপির সংগঠনকে ভাঙতেই এবার তাই আনা হল গুরুপদ টুডুকে।
হাওড়াতে জেলা সভাপতি রদবদলের অন্যতম কারণ হল গোষ্ঠীকোন্দল। জেলার কো-অর্ডিনেটর রাজীব ব্যানার্জির সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধ এবং দুর্নীতি নিয়ে বিস্তর অভিযোগের জন্য সরতে হল অরূপ রায়কে। সেই জায়গায় দায়িত্বে এলেন স্বচ্ছ ইমেজের লক্ষ্মীরতন শুক্লা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রাক্তন জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষকে নিয়ে দলের ভিতরেই অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছিল । ভাঙন ধরছিল দলের নিচু স্তরে। সেই জায়গায় দলিত সমাজের এক তরুণ তুর্কি গৌতম দাসকে এবার দায়িত্ব দিয়ে বাজিমাত করতে চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে বাড়তি পাওনা লড়াকু নেতা । আর সবস্তরে গ্রহণযোগ্যতা ।
লক্ষ্য ২০২১। একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই ব্যাপক রদবদল ঘটালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে ভাবনাচিন্তা নিয়ে দলনেত্রী রাজ্যজুড়ে সাংগঠনিক রদবদল করলেন, তার রেজাল্ট পেতে এখন অপেক্ষা করতে হবে প্রায় ১০ মাস। তখনই বোঝা যাবে, আজকের এই সিদ্ধান্ত কতটা ফলদায়ী হবে।
আরও পড়ুন, তৃণমূলে ব্যাপক রদবদল, পর্যবেক্ষকদের বিলোপ, ২১ জনের রাজ্য সমন্বয় ও ৭ জনের স্টিয়ারিং কমিটি
তৃণমূল যুবতে ব্য়াপক 'ছাঁটাই', সরলেন অরূপের ভাই স্বরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদের জামাই