Wrestlers Protest: দিল্লি পুলিসের রিপোর্টে সাক্ষী-ভিনেশরা স্বস্তি পেলেও, চাপে ব্রিজভূষণ! কিন্তু কীভাবে?
বুধবার অর্থাৎ ৭ জুন সকালে অনুরাগ ঠাকুরের বাড়িতে পৌঁছে যান কুস্তিগীররা। সঙ্গে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতও। রোদ-ঝড়-জল উপেক্ষা করে, পুলিশের হাতে মারধর খাওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কখনও বিজেপির মহিলা সাংসদদের চিঠি লিখে পাশে দাঁড়ানোর আরজি জানিয়েছেন তো কখনও কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: যৌন হেনস্থায় (Wrestlers Protest) অভিযুক্ত সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের (Wrestling Federation Of India) সভাপতি তথা বিজেপি (BJP) সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং-য়ের (Brij Bhushan Sharan Singh) গ্রেফতার চেয়েছিলেন দেশের প্রথমসারির কুস্তিগীররা। তবে হিংসা ছড়াতে পারে, এমন কোনও মন্তব্যে তাঁরা করেননি। শুক্রবার আদালতকে এমনটাই জানাল দিল্লি পুলিস (Delhi Police)। অর্থাৎ গত ২৮ মে যন্তর মন্তরে কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিযোগ উঠেছিল, তাকে অনেকটা হালকা ভাবেই ব্যাখ্যা করল দিল্লি পুলিস। আর কুস্তিগীরদের সাময়িক এই স্বস্তির মধ্যেই এক আন্তর্জাতিক রেফারির মন্তব্যে আরও চাপ বাড়ল ব্রিজভূষণের।
ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে। কুমন্তব্যও করা হয়েছে। এই অভিযোগেই সাক্ষী মালিক (Sakshi Malik), ভিনেশ ফোগাট (Vinesh Phogat), বজরং পুনিয়ার (Bajrang Punia) বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের দাবি তুলেছিলেন বম বম মহারাজ নৌহাটিয়া নামের এক ব্যক্তি। এমনকী তিনি অভিযোগ করেছিলেন, যন্তর মন্তরে সেদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) বিরুদ্ধেও স্লোগান তুলেছিলেন তাঁরা। সেই প্রেক্ষিতেই আলাদতকে দিল্লি পুলিস জানায়, সাক্ষীরা কোনও হিংসাত্মক মন্তব্য করেননি।
এদিকে, আন্তর্জাতিক রেফারি জগবীর সিংয়ের বিস্ফোরক দাবিতে নতুন করে চাপ বাড়ল ব্রিজভূষণের। তিনি জানিয়েছেন, গত বছর লখনউয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন ঘটে একটি ঘটনা। এক মহিলা কুস্তিগীর জানান, ছবি তোলার সময় তাঁকে ওই মহিলা অ্যাথলিটকে আপত্তিকর ভাবে স্পর্শ করেছিলেন ব্রিজভূষণ। এরপরই তাঁকে কিছু বলা হয়, যার পর মহিলা সেখান থেকে চলে যান। তাঁর এই দাবিতে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আরও জোড়ালো হল বলেই মনে করা হচ্ছে।
দেশের প্রথমসারির কুস্তিগীরদের সমস্যা মেটাতে আগেই আসরে নেমেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। আর এবার সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগ নিলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী। প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের সঙ্গে আলোচনার জন্য টুইট করেছিলেন অনুরাগ। আর এরপরেই তাঁর সঙ্গে দেখা করে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের গ্রেফতার-সহ আরও চার দাবি নিয়ে সরব সাক্ষী মালিক-ভিনেশ ফোগাট-বজরং পুনিয়ারা।
আরও পড়ুন: Wrestlers Protest: এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে পারবেন প্রতিবাদী সাক্ষী-ভিনেশরা, জানিয়ে দিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী
অনুরাগ ঠাকুরের কাছে কোন পাঁচ দাবি জানালেন কুস্তিগীররা? দেখে নিন:
১) অভিযুক্ত ব্রিজভূষণকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।জাতীয় কুস্তি সংস্থায় অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।
২) ভবিষ্যতে ব্রিজভূষণ এবং তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য জাতীয় কুস্তি সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না।
৩) নতুন সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় কুস্তিগীরদের বিরুদ্ধে থানায় যে অভিযোগ জানানো হয়েছে সেগুলো খারিজ করতে হবে।
৪) জাতীয় কুস্তি সংস্থায় অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।
৫) জাতীয় কুস্তি সংস্থার প্রধানের পদে অভিজ্ঞ মহিলাকে নিয়োগ করতে হবে।
বুধবার অর্থাৎ ৭ জুন সকালে অনুরাগ ঠাকুরের বাড়িতে পৌঁছে যান কুস্তিগীররা। সঙ্গে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতও। রোদ-ঝড়-জল উপেক্ষা করে, পুলিশের হাতে মারধর খাওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। কখনও বিজেপির মহিলা সাংসদদের চিঠি লিখে পাশে দাঁড়ানোর আরজি জানিয়েছেন তো কখনও কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ব্রিজভূষণের গ্রেপ্তারির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তাঁরা। আবার গত শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গেও দেখা করেন আন্তর্জাতিক স্তরে পদকজয়ী কুস্তিগিররা। কিন্তু সেখানেও অধরা থেকে যায় রফাসূত্র। এবার তাঁদের আমন্ত্রণ জানালেন অনুরাগ ঠাকুর।
এদিকে দিল্লি পুলিসের এসআইটি-র তদন্তকারী দল রবিবার রাতেই ব্রিজভূষণের পৈতৃক বাসভবন বিষ্ণোহরপুরে পৌঁছে গিয়েছিল। সেখানে ১২ জনের বক্তব্য রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন এমপির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন, সহযোগী ও নিরাপত্তাকর্মীরা। SIT এর আগে ১২৫ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করে। ফলে এখন কুস্তিগীরদের যৌন হেনস্তা করার ঘটনায় বয়ান নেওয়া ১৩৭-এ পৌঁছল। গোন্ডা থেকে কয়েকজনের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে তদন্ত দল। যদিও দিল্লি পুলিস প্রথমে জানিয়েছিল যে, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পায়নি তারা।
এসআইটি ইতমধ্যেই গোন্ডার মানুষের বয়ান রেকর্ড করেছে। দেশের পাশাপাশি বিদেশে কুস্তি প্রতিযোগিতা চলাকালীন এমপির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত চলেছে। মহিলা কুস্তিগীরদের দাবি সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করা হয়নি। মঙ্গলবার, যখন সাক্ষী মালিক আবার রেলের চাকরিতে ফিরেছেন, তখন তিনি আন্দোলন থেকে সরে এসে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন এমন খবরে বাজার সরগরম হয়ে ওঠে। বজরং পুনিয়ার ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে। তবে সে খবরও অস্বীকার করেছেন। সাক্ষী মালিক এবং বজরং পুনিয়া বলেছিলেন যে তাঁরা অবশ্যই চাকরিতে যোগ দিতে এসেছেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তাদের আন্দোলন শেষ। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই চলছে। সেটা কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর উদ্যোগের পর বেশ বোঝা গেল।