মন চলো মুসৌরি
খেলছে সচিন খেলছে সচিন মারছে সচিন ছয়... গানটা শুনেও নির্লিপ্তমনে বসে অঙ্ক কষতাম। ট্রিগনোমেট্রি প্র্যাকটিশ করতাম দিব্যি। সচিন ছয় মারছে ব্যাপারটা কোনও উচ্ছ্বাসের খবর নয়। সচিন তো ছক্কা মারবেই। টিভির দিকে তাকালেই দেখতে পাই। দিব্যি মূর্ছনার মতো ব্যাপার। সুরে সুরে কনসেন্ট্রেশন। সচিন গ্রেট। সচিন লেজেন্ড। তার চেয়েও বড় সত্যি, সচিন আমার একটা ছোটবেলাকার অভ্যেস।
শর্মিলা মাইতি
খেলছে সচিন খেলছে সচিন মারছে সচিন ছয়... গানটা শুনেও নির্লিপ্তমনে বসে অঙ্ক কষতাম। ট্রিগনোমেট্রি প্র্যাকটিশ করতাম দিব্যি। সচিন ছয় মারছে ব্যাপারটা কোনও উচ্ছ্বাসের খবর নয়। সচিন তো ছক্কা মারবেই। টিভির দিকে তাকালেই দেখতে পাই। দিব্যি মূর্ছনার মতো ব্যাপার। সুরে সুরে কনসেন্ট্রেশন। সচিন গ্রেট। সচিন লেজেন্ড। তার চেয়েও বড় সত্যি, সচিন আমার একটা ছোটবেলাকার অভ্যেস। সচিন মানে আমার বাইশ গজ চেনা। আমরা মেয়েরা, যারা ক্রিকেট মানে বুঝি ঝিঁঝিঁ। সাত-আট ঘণ্টা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের তীব্র আলোচনা মন দিয়ে শুনি কতবার সচিনের নাম বলে গুনবার জন্য।
স্কোয়ার কাট-গুগলি-লেগ বাই-নোবল কখন কীভাবে হয় বারবার জেনেও কেমন গুলিয়ে ফেলি। মনে রাখতে পারি শুধু বাউন্ডারি, ওভার-বাউন্ডারি, হাফ-সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি। শতরান। শততম শতরান। ক্রিকেট বড় জটিল খেলা। সচিন মেড-ইজি। গোল গোল সংখ্যা দিয়ে কেমন জলের মতো সহজ করে দিলেন...
সুতরাং, চোদ্দ বছর বয়সে সচিন রিটায়ার করলেন। ভুল বলিনি, চোদ্দ বছর। চল্লিশ নয়। সচিনের এর চেয়ে বেশি বয়স বাড়ে না।
সিনেমার নায়কেরা যেমন ব্যাপক মারপিটের পরেও শক্তসমর্থ থাকে, তাদের পেশিতে একটুও আঁচড় অবধি লাগে না, ঠিক তেমনি সচিন আমার পেছন-দরজায় একই রকম থেকে গেছেন। বাচ্চা-বাচ্চা হাসি, এক বাটি ম্যাগি-ম্যাগি চুল। ব্যাটখানি যেন ব্রহ্মাস্ত্র। হাতের থেকে আলাদা করা যাবে না। রেডিওতে খেলার কমেন্ট্রি শুনে দাদু বলেছিলেন, "একটা চোদ্দ বছরের নতুন ছেলে কী খেলছে জানিস? ব্যাটটাও ওর থেকে ভারী। কীভাবে যে ব্যাট ঘোরাচ্ছে আর বাউন্ডারি পার করে দিচ্ছে ভাবা যায় না! এ ছেলে দলে টিকে যাবে। চাইল্ড প্রডিজি!"
কত বছর হল আমার দাদু চলে গেছেন। সচিন রয়ে গিয়েছেন ধ্রুবপদ হয়ে। যার ব্যাট বয়স বাড়তে দেয় না। ঠাকুরের ছবির মতো শাশ্বত। তফাত একটাই, জিতলে ফুলের মালা, হারলে ইঁটের...
শুনেছি শেষ দিকে নাকি ব্যাটের চিড় সারানোর জন্য নিজেকেই মিস্ত্রি ডাকতে হত। ফেটে যাওয়া প্যাড সারানোর জন্য ফোন করে ডেকে নিতেন সেলাই-জানা লোক।
তেইশ বছরের অভ্যেস কি সহজে বদলানো সম্ভব? চোখের জলেও ওয়াইপ আউট করা যাচ্ছে না। বাইশ গজ থেকে মহাপ্রস্থানের পথে গড অফ ক্রিকেট। রশ্মি হারিয়ে টিম ইন্ডিয়া এখন টিমটিমে। দিশাহারা। সচিন এখন পার্থিব মানুষ। বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে মুসৌরি বেড়াতে গিয়েছেন। প্রথমবার ভগবানের বেদি থেকে নেমে মানুষের মতো নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে।