IND vs SL | World Cup 2023: যেন এশিয়া কাপ ফাইনালের হাইলাইটস! দুই মহম্মদের আগুনে ভস্মীভূত লঙ্কা
India Beats Sri Lanka By 302 Runs IND vs SL World Cup 2023: বিশ্বকাপ দেখল এশিয়া কাপ ফাইনালের হাইলাইটস! মহম্মদ শামি ও মহম্মদ সিরাজের আগুনে পুড়ে গেল লঙ্কা। ভারত ৩০২ রানে জিতে বুক ফুলিয়ে চলে গেল সেমিফাইনালে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ক্যালেন্ডার বলছে তারিখ ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩। সেদিন কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে (R Premadasa Stadium, Colombo) এশিয়া কাপের ফাইনাল (Asia Cup Final 2023) খেলেছিল ভারত-শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা টস জিতে প্রথমে ব্য়াট করে তুলেছিল ৫০ রান। সৌজন্যে মহম্মদ সিরাজের (Mohammed Siraj) আগুনে স্পেল। সাত ওভার বল করে একাই তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। ভারত ২৬৩ বল হাতে রেখে, ১০ উইকেটে ম্য়াচ ও ট্রফি জিতে হয়েছিল এশিয়া সেরা। কাট টু ২ নভেম্বর ২০২৩। এবার বিশ্বকাপের (World Cup 2023) মঞ্চ। দেড় মাসের ব্য়বধানে খুব একটা ফারাক ঘটল না। এবারও সেই সিরাজের আগুনেই পুড়ল শ্রীলঙ্কা। তবে সিরাজের দোসর হয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকলেন মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। শামি-সিরাজের আগুনে একেবারে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল লঙ্কা। ৩০২ রানে শ্রীলঙ্কা হারিয়েই ভারত বুক ফুলিয়ে চলে গেল শেষ চারে।
আরও পড়ুন: Shreyas Iyer | IND vs SL: ওয়াংখেড়েতে ঐতিহাসিক মাইলস্টোন শ্রেয়সের, ক্রিকেট ইতিহাসে তুললেন নাম
টানা হাফ ডজন ম্য়াচ জিতেই আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছিল রোহিত শর্মা অ্যান্ড কোং। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, কুশল মেন্ডিস এদিন টস জিতে রোহিতদের ব্য়াট করতে পাঠিয়ে ছিলেন। ভারত প্রথমে ব্য়াট করে নির্ধারিত ওভারে তোলে ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান। এদিন রোহিত ও শুভমন গিল ওপেন করতে নেমেছিলেন। 'হিটম্য়ান' মাত্র দু'বল খেলে মাত্র চার রান করে ফিরে যান। ভারত চার রানের মধ্যে প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে। চলতি বিশ্বকাপে রোহিত রয়েছেন দারুণ ফর্মে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই তাঁর ব্যাট চুপ করে গেল। তবে ঘরের মাঠ কিন্তু রোহিতকে ব্রাত্য করেই রাখল। দেশের জার্সিতে পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে রোহিত কখনই ব্যাট হাতে সাফল্য পাননি এই মাঠে। অতীতের পরিসংখ্যান বলছে ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে রোহিত করেছিলেন ১৬, দু'বছর পর নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে করেন ২০, ২০২০ সালে রোহিত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১০ রান করেছিলেন। আর এদিন রোহিতের করলেন মাত্র চার রান। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মাত্র ৫০ রানই করলেন রোহিত।
রোহিত আউট হওয়ার পর ভারতের ইনিংস সামলান বিরাট কোহলি ও শুভমন। ১৭৯ বলে ১৮৯ রান যোগ করেন তাঁরা। কিন্তু এদিন দুই সেট হয়ে যাওয়া ব্য়াটারই তাঁদের বাঁধা সেঞ্চুরি মাঠে রেখে আসলেন। শুভমন ৯২ বলে ৯২ (১১টি চার ও দু'টি ছয়) রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে আউট হন এদিন। আটটি রানের জন্য তাঁর শতরান করা হল না। অন্যদিকে বিরাট ৯৪ বলে ৮৮ (১১টি চার) করে আউট হলেন। ১২টি রানের জন্য তাঁর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৪৯ নম্বর সেঞ্চুরিটি এল না। শুভমন ও বিরাট দু'জনেই দিলশান মধুশঙ্কাকে তাঁদের উইকেটটি দিলেন। দুই ব্য়াটারই হলেন ক্যাচ আউট। এদিন ওয়াংখেড়ের জোড়া সেঞ্চুরি দেখা হল না। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে গতকালই বসেছে সচিন তেন্ডুলকরের মূতি। এদিন সচিনও মাঠে বসে খেলা দেখছেন। বিরাট সেঞ্চুরি না পেলেও, সচিনের সামনেই সচিনের রেকর্ড ভাঙলেন।
বিরাট এদিন শুভমন ও রোহিতের পর তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে চলতি বছর দেশের জার্সিতে ওয়ানডে ফরম্য়াটে ১০০০ রান করলেন। রোহিত, শুভমন ও পাথুম নিশঙ্কার পর চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে চলতি ক্যালেন্ডার বর্ষে এক হাজারি হলেন। সচিন তাঁর কেরিয়ারে, একদিনের আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে সাত বছর (১৯৯৪, ১৯৯৬, ১৯৯৭, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০৩ ও ২০০৭) এক হাজারের বেশি রান করেছেন। কোহলি আট বছর সেই কীর্তি করে দেখালেন। ২০১১-২০১৪, টানা চার বছর কোহলি দেশের জার্সিতে পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে হাজারের বেশি রান করেছেন। তারপর তিনি ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২৩ সালেও একই কাজ করেন। বিরাট-শুভমনরা ফেরার পর শ্রেয়স আইয়ার ও কেএল রাহুল ব্য়াটন ধরেছিলেন। তবে ১৯ বলে ২১ রান করে আউট হয়ে যান। দুষ্মন্ত চামিরার বলে। ক্রিজে থাকার দায়িত্ব নিয়েছিলেন শ্রেয়স। তিনি এদিন কার্যত সেঞ্চুরি রেখে আসেন মাঠে। ৫৬ বলে ৮২ রান করে ফিরে যান শ্রেয়স। তিনটি চার ও তিনটি ছয়ে নিজের ইনিংস সাজিয়ে ছিলেন শ্রেয়স। সাতে নেমে রবীন্দ্র জাদেজাও (২৪ বলে ৩৫) নিজের ছাপ রেখেছিলেন।
ইনিংস ব্রেকে শ্রেয়সের সঙ্গে কথা বলেছিল সম্প্রচারকারী চ্যানেল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক বলেন, 'দেখুন আমার মনে হয় ব্য়াট করার জন্য় বেশ ভালো উইকেট। স্ট্রাইক রোটেট করা সহজ ছিল। বিরাট ভাই ও বাকিরা মঞ্চটা খুব ভালো ভাবেই গড়ে দিয়েছিল। এরপর কেএল ও আমি আমার খেলাটা খেলতে পেরেছি। আমাদের কাছে মেসেজ ছিল বল একটু সময়ে নিয়ে আসছিল। সে জন্য আমরা ধরে আমাদের স্ট্রোক খেলেছি।' এদিন শ্রীলঙ্কার হয়ে দিলশান মধুশঙ্কা নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। রোহিত, শুভমন, বিরাট, শ্রেয়স ও সূর্যকুমার যাদব তাঁর শিকার হন। ১০ ওভার বল করে তিনি দিয়েছেন ৮০ রান। মধুশঙ্কা শ্রীলঙ্কার চতুর্থ বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে পাঁচ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন। তিনি নাম লেখালেন অশান্ত ডে মেল, চামিণ্ডা ভাস, লাসিথ মালিঙ্গার ক্লাবে।
ভারতের রান তাড়া করতে নেমে, একেবারে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে শ্রীলঙ্কা। তিন রানে চলে যায় দলের প্রথম চার উইকেট। এরপর আর এই দলটার ফেরার কোনও রাস্তা ছিল না। শুরুটা করেছিলেন জসপ্রীত বুমরা। ওপেনার পাথুম নিশঙ্কাকে তিনি এলবিডব্লিউ করে দেন। ডিআরএস নিয়েও শ্রীলঙ্কা রেহাই পায়নি। এরপর শুরু হয়ে এশিয়া কাপ ফাইনালের নায়ক সিরাজের দাপট। সিরাজকে দেখেই কেঁপে গেল দ্বীপরাষ্ট্র। সুনামির মতো আছড়ে পড়লেন তিনি। দিমুথ করুণারত্নে, সাদিরা সামারাউইক্রমা, কুশল মেন্ডিসকে সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন ওয়াংখেড়ের সাজঘরে। এরপর বাকি কাজটা করে দিলেন শামি। ফের তুলে নিলেন পাঁচ উইকেট। সিরাজ সাত ওভার বল করেন, পান দু'টি মেডেন। ১৬ রানে নেন তিন উইকেট। শামি পাঁচ ওভার বল করে ১৮ রানে তুলে নেন পাঁচ উইকেট। একটি করে উইকেট বুমরা ও রবীন্দ্র জাদেজার। শ্রীলঙ্কা ১৯.৪ ওভারে ৫৫ রানের মধ্যে গুটিয়ে গেল। সাত ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ভারত কাপযুদ্ধের প্রথম দল হিসেবে চলে গেল বিশ্বকাপের শেষ চারে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)