IND vs SL: রোহিত-কোহলির 'বিরাট' ব্যর্থতার পরেও ভারতকে ম্যাচ ও সিরিজ জেতালেন ট্রোল হওয়া রাহুল

আভিস্কা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে বিপক্ষকে প্রথম ধাক্কা দেন সিরাজ। তিনি নিলেন ৩০ রানে ৩ উইকেট। এরপর ইডেনের বাইশ গজে শুধুই রাজত্ব করে গেলেন কুলদীপ। হাইকোর্ট প্রান্ত থেকে হাত ঘুড়িয়ে বিপক্ষকে শেষ করলেন।

Reported By: সব্যসাচী বাগচী | Updated By: Jan 12, 2023, 08:48 PM IST
IND vs SL: রোহিত-কোহলির 'বিরাট' ব্যর্থতার পরেও ভারতকে ম্যাচ ও সিরিজ জেতালেন ট্রোল হওয়া রাহুল
কে এল রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়ার জুটি ম্যাচে তফাৎ গড়ে দিল। ছবি: টুইটার

সব্যসাচী বাগচী 

'মর্নিং শোজ দ্য ডে'। বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায় 'সকাল দেখে মনে হয় যে বাকি দিনটা কেমন যাবে।' কুলদীপ যাদবের (Kuldeep Yadav) স্পিন ম্যাজিক, মহম্মদ সিরাজ (Mohammed Siraj) এবং উমরান মালিকের (Umran Malik) আগুনে পেস বোলিং দেখে মনে হচ্ছিল নতুন বছরে ইডেন গার্ডেন্স (Eden Gardens) টিম ইন্ডিয়ার (Team India) আরও একটি সিরিজ জয়ের সাক্ষী থাকছে। শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর ৫০ ওভারের ফরম্যাটে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের উড়িয়ে দেওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু কোথায় কি! তারকাখচিত ভারতীয় দলের ব্যাটিং এমন হুড়মুড়িয়ে পড়ল যে মনে হবে ওরাইডেন নয়, যেন ওয়াকা কিংবা জোহানেসবার্গে ব্যাট করছে! তবে দাসুন শনাকার (Dasun Shanaka) দল এবারও শেষ হাসি হাসতে পারল না। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের চার মহারথী ফিরে গেলেও, ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের ভিত গড়ে দিলেন কে এল রাহুল (KL Rahul) ও হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। আর শেষ বেলায় মারকুটে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে ৫০ হাজারি ইডেনের সামনে রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) মুখে হাজার ওয়াটের হাসি ফোটালেন অক্ষর প্যাটেল (Axar Patel)। কারণ চার উইকেটে জিতে ম্যাচ ও সিরিজ পকেটে পুরে নিল টিম ইন্ডিয়া। ৪০ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে ২১৯ রান তুলে নিল টিম ইন্ডিয়া। ১০৩ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন কে এল রাহুল। 

ক্রিকেটের সঙ্গে পরিসংখ্যানের সম্পর্ক অনেক যুগের। পরিসংখ্যান যেমন আনন্দ দেয়, তেমনই গাণিতিক বিশ্লেষণ বাড়ায় উৎকণ্ঠা। শ্রীলঙ্কাকে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে গুটিয়ে দেওয়ার পর রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) যখন ক্রিজে গেলেন, তখন ঘড়ির কাঁটায় ৫:২০ মিনিট। দুটি চার ও একটি ছক্কা মেরে ইডেনের 'বরপুত্র' শুরুটা দারুণ করেছিলেন। 'হিটম্যান'-এর মেজাজ দেখে মনে হচ্ছিল সন্ধের দিকেই খেল খতম করে টিম হোটেলে ফিরে যাবে দল। কিন্তু ক্রিকেট যে এক বলের খেলা। চামিকা করুনারত্নের (Chamika Karunaratne) একটা ছোট্ট আউট সুইংকে সামলাতে পারলেন না। ব্যাটের খোঁচা লেগে বলে চলে কিপার কুশল মেন্ডিসের (Kushal Mendis) হাতে। মাত্র ২২ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ৫:৪২ মিনিটে মাথানিচু করে সাজঘরে ফিরলেন অধিনায়ক। রোহিতের আউট হওয়াতে 'অনুপ্রাণিত' হয়ে কিছুক্ষণ পরে উইকেট ছুঁড়ে এলেন শুভমন গিল (Subhman Gill)। ঈশান কিশানকে (Ishan Kishan) বসিয়ে পঞ্জাব তনয়কে সুযোগ দিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে তিনি শুরুটা ভালো করেও নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। ফলে ৪১ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত।  

পরপর দুটি শতরান করে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) তাঁর পুরনো ছন্দ ফিরে পেয়েছেন। রোহিত পর্ব মিটে যাওয়ার সময় এক অদ্ভুত মুহূর্ত দেখা গেল সন্ধের ইডেনে। এই মাঠে রোহিতের অনেক কীর্তি। বিরাট নন্দন কাননের বাইশ গজে তিন ফরম্যাটেই সফল। তবে সেটা রোহিতের ধারেকাছে নয়। কিন্তু ৫:৪৩ মিনিটে বিরাট মাঠে ঢোকার সময় গ্যালারি থেকে যে শব্দব্রম্ভ ভেসে এল, সেটা দেখে বুঝে অসুবিধা হয় না যে, জনপ্রিয়তার নিরিখে বিরাট বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। 

তবে এবার পারলেন না। মাত্র ২৫ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন তিনি। লেখা ভালো লাহিরু কুমারার (Lahiru Kumara) চকিত পেসে বিট হয়ে যান। লঙ্কান পেসারের আগুনে গতিতে আসা ডেলিভারি গোত্তা খেয়ে প্রায় একহাত ভিতরের দিকে ঢুকে আসে। বল পিচ হওয়ার আগেই ফ্রন্টফুটে কমিট হয়ে গিয়েছিলেন বিরাট। সেই ভুল আর শুধরে নিতে পারেননি তিনি। ঝুলিতে মাত্র ৪ রান নিয়ে বিরাট যখন ফিরছেন, তখন ঘড়ির কাঁটায় ৬:০৮ মিনিট। 'বিরাট পতন' হলেও কেকেআর (KKR) অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer) খেলা ধরে ফেলেছিলেন। তবে এবারও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না। ফিরলেন ৩৩ বলে ২৮ রান করে। কাসুন রাজিথা (Kasun Rajitha) তাঁকে ফেরাতেই ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারাল ভারত।   

হেলায় জেতা ম্যাচ তখন মানরক্ষার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক এমন সময় বাইশ গজে রুখে দাঁড়ালেন কে এল রাহুল ও হার্দিক। সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক কটাক্ষ হজম করা রাহুল একটা দিক আগলে রাখলেন। অন্যদিকে হার্দিক নিজের খুনে মেজাজে ব্যাট না চালালেও খারাপ বল পেলেই রান করে যাচ্ছিলেন। দু'জনের লড়াকু ব্যাটিংয়ের সুবাদে পঞ্চম উইকেটে মহামূল্যবান ৭৫ রান যোগ করে দিলেন ওঁরা। হার্দিক ও রাহুলকে দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচ জেতা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ঠিক সেই সময় আবার একরাশ নাটক। ৩৬ রানে ব্যাট করার সময় হার্দিককে ফেরালেন রোহিতকে আউট করা চামিকা করুনারত্নে। ভারত তখন ১৬১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বেকায়দায়। কারণ তখনও জেতার জন্য দরকার ৫৫ রান। 

গত কয়েকটি ম্যাচেই ব্যাট চালিয়ে বিপক্ষকে উড়িয়ে দিচ্ছেন অক্ষর। ইডেনেও সেটা দেখা গেল। দল চাপের মুখে থাকলেও, তিনি ছিলেন নিজের খেয়ালে। ক্রিজে এসেই চার-ছক্কা মেরে রাহুলের উপর চাপ কমানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু তিনিও ম্যাচটা জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেন না। ২১ বলে ২১ রানে আউট অক্ষর যখন ফিরছেন, তখনও জেতার জন্য দরকার ২৫ রান। এরমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে ট্রোল হওয়া রাহুল হাফ সেঞ্চুরিও সেরে নিলেন। তবুও ইডেনের গ্যালারি ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। 

টিম ইন্ডিয়ার মতো আক্ষরিক অর্থে প্রত্যাবর্তন করলেন কুলদীপ। প্রতিবেদনের এই বাক্য পড়ে কোনও ক্রিকেট পন্ডিত তেড়ে আসতেই পারেন। কিসের কামব্যাক! কুলদীপ তো গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের (Bangladesh) বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচ খেলেছেন। এরপর ছিল সেই একই বিপক্ষের বিরুদ্ধে টেস্টে চোখে তাক লাগিয়ে দেওয়া পারফরম্যান্স। প্রথম ইনিংসে ৪০ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছিলেন ৭৩ রানে ৩ উইকেট। এমন পারফরম্যান্সের পরেও তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। তাই ক্রমশ 'ব্রাত্য' হয়ে যাওয়া কুলদীপের প্রতিবার মাঠে নামা যেন কামব্যাক ম্যাচ! আর ভেন্যু ইডেন হলে তো সেটায় সোনায় সোহাগা। 

২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। শেষবার ক্রিকেটের নন্দনকাননে অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচ খেলেছিল টিম ইন্ডিয়া। মহেন্দ্র সিং ধোনির (Mahendra Singh Dhoni) দলে তখন উজ্জ্বল তারা ছিলেন কুলদীপ। অজিদের বিরুদ্ধে করেছিলেন হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ৫০ রানে জিতেছিল ভারত। ছয় বছর পর ফের ইডেনে আয়োজিত হল একদিনের ম্যাচ। এবার প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। যজুবেন্দ্র চাহাল (Yuzvenndra Chahal) চোট পেয়েছিলেন বলে এবার সুযোগ পেয়েছিলেন কুলদীপ। হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। তবে তাই বলে তাঁর পারফরম্যান্স ভুলে গেলে চলবে না। টানা আট ওভার হাত ঘুরিয়ে ফের নজর কাড়লেন। তাঁর বোলিং ফিগার (১০-০-৫১-৩)। তাঁর স্পিন ম্যাজিকেই শ্রীলঙ্কা খেই হারিয়ে ২১৫ অলআউট হয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। 

আভিস্কা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে বিপক্ষকে প্রথম ধাক্কা দেন সিরাজ। তিনি নিলেন ৩০ রানে ৩ উইকেট। এরপর ইডেনের বাইশ গজে শুধুই রাজত্ব করে গেলেন কুলদীপ। হাইকোর্ট প্রান্ত থেকে হাত ঘুড়িয়ে বিপক্ষকে শেষ করলেন। তবে শুধু কুলদীপ নন, নজর কাড়লেন আরও এক তরুণ উমরান। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিয়েছিলেন মোট ৭ উইকেট। প্রথম একদিনের ম্যাচে নিয়েছিলেন ৫৭ রানে ৩ উইকেট। বৃহস্পতিবার তাঁর বোলিং ফিগার (৭-০-৪৮-২)। ফলে সিরিজ জয়ের জন্য ভারতের টার্গেট দাঁড়িয়েছিল ২১৬ রানের। চার উইকেটে জিতে ম্যাচ ও সিরিজ পকেটে পুরে নিল টিম ইন্ডিয়া। ৪০ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে ২১৯ রান তুলে নিল টিম ইন্ডিয়া। ১০৩ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন কে এল রাহুল। 

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.