Surya Kumar Yadav, IND vs SA : রাতের আকাশে ফের 'সূর্য' উদয়! ঢাকা পড়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা
IND vs SA : বাইশ গজে যথেষ্ট ঘাস ছিল। এরমধ্যে শিশির ফ্যাক্টর। সেটা মাথায় রেখেছিলেন রোহিত শর্মা। তাই টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন 'হিটম্যান'। তাঁর সিদ্ধান্তের মর্যাদা রাখলেন পঞ্জাব তনয়।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সূর্যের উত্তাপে গোটা দুনিয়া ছারখার হয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa) কোন ছাড়! হায়দরাবাদের পর এ বার তিরুবনন্তপুরম। বদলে গিয়েছে তারিখ। বদলে গিয়েছে ভেন্যু। প্রতিপক্ষেরও বদল ঘটেছে। তবে সূর্য কুমার যাদব (Surya Kumar Yadav) নিজের মারকুটে ব্যাটিং-এ বদল ঘটাননি। আর তাই বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) দ্রুত ফিরে গিয়ে টিম ইন্ডিয়ার (Team India) ড্রেসিংরুমে চাপ বাড়ালেও, সূর্য তাঁর ব্যাটিংয়ের উত্তাপ ছড়িয়ে দিলেন। তাঁকে সঙ্গত দিলেন কেএল রাহুল (Kl Rahul)। ফলে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আট উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল 'মেন ইন ব্লু' ব্রিগেড।
কেউ বলছেন তিনি নাকি ভারতীয় ক্রিকেটের 'মিস্টার 360 ডিগ্রি'। কেউ আবার ওঁর মধ্যে কয়েক মাস আগে প্রয়াত অ্যান্ড্র সাইমন্ডসকে (Andrew Symonds) দেখতে পান। এবি ডিভিলিয়ার্স (AB de Villiers) ও সাইমন্ডসের ছায়ায় তিনি বসবাস করেন কিনা সেটা একমাত্র 'ম্যাচের সেরা' সূর্য কুমার যাদবই বলতে পারবেন। তবে এতটা লেখাই যায় যে সাদা বলের ক্রিকেটে টিম ইন্ডিয়া চার নম্বর ব্যাটারকে পেয়ে গিয়েছে। আসন্ন টি-টিয়েন্টি বিশ্বকাপে (ICC T20 World Cup 2022) রোহিতের টিম ইন্ডিয়ার ঝুলিতে ট্রফি ভরাতে হলে, বাইশ গজে সূর্যের উত্তাপ ছড়ানো খুবই জরুরী। সেটা ক্লাসে সিক্সে পড়া ছেলেও জানে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এই ফর্মটাই তো দেখতে চেয়েছে আসমুদ্র হিমাচল। অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে সেটা করে দেখানোর পর এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফের 'উত্তাপ' ছড়ালেন 'স্কাই'। শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নয়, সব সিরিজে দাপট দেখানোর জন্য সূর্যের ব্যাটের শাসন কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা সবাই জানে। এই মুম্বইকর অভিষেকের পর থেকে এই ফরম্যাটে যে ভাবে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন, তাতে এতটুকু লিখে দেওয়া যায় যে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আসন্ন কাপ যুদ্ধে তিনিই হতে চলেছেন রোহিতের মূল কারিগর।
— BCCI (@BCCI) September 28, 2022
তবে কম রান চেজ করতে নামলেও ভারতের শুরু ভাল হল না। ময়দানি ভাষায় বল নড়লে ওঁদের সমস্যা হয়। ওয়েলিংটন, লর্ডস থেকে তিরুবনন্তপুরমের গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামে বাইশ গজ সর্বত্র ভারতীয় ব্যাটাররা নাজেহাল হয়ে যান। মাত্র ১০৭ রান চেজ করতে নেমে রোহিত ও বিরাট কোহলি যে ভাবে ল্যাজেগোবরে হলেন, সেটা মোটেও ভাল বিজ্ঞাপন। কাগিসো রাবাদা ও আনরিখ নোকিয়া ঘাসে ভরা বাইশ গজে আগুনে পেসের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন বিষাক্ত সুইং। আর এতেই কুপোকাত ভারতের দুই তারকা। খাতা খোলার আগেই রাবাদার বাইরে যাওয়া বলে খোঁচা দিলেন রোহিত। বলে চলে গেল কুইন্টন ডি ককের হাতে। ৯ রানে ১ উইকেট হারাল ভারত। এ বার মাঠে নামলেন 'চেজ মাস্টার'। কিন্তু তিনিও এ দিন ব্যর্থ। রাবাদা পিচে আগুন ঝরাতে দেখে, প্রোটিয়াস অধিনায়ক তাঁর সঙ্গে নোকিয়াকে জুড়ে দিলেন। সেই সিদ্ধান্ত মুহূর্তের মধ্যে কাজে দিল। নোকিয়ার প্রথম ডেলিভারি পিচে হয়ে বাড়তি বাউন্স হতেই বিরাট ফের একই ভুল করে বসলেন। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে গেল পিছনে। ডি কক ক্যাচ লুফতেই মাত্র ৩ রানে ফিরলেন বিরাট।
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
দলের স্কোর তখন ১৭। দুই মহাতারকা ডাগ আউটে। পরিসংখ্যান বলছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে এই প্রথমবার 'পাওয়ার প্লে'-তে এত কম রান তুলল টিম ইন্ডিয়া। কেএল রাহুল ক্রিজে থাকলেও তিনি আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছেন সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে সূর্য থাকতে চিন্তা কিসের! যে নোকিয়ার পেসে বিরাট পরাস্ত হয়েছিলেন, ক্রিজে এসে সেই পেসারকে পরপর দুটি বিশাল ছক্কা মেরে দিলেন সূর্য। একেবারে হেলায় মারলেন। এরপর মারতে শুরু করে দিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গত ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, এ দিন ঠিক সেখান থেকেই শুরু করলেন সূর্য। রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাকফুটে না গিয়ে পালটা মার দিতে শুরু করলেন। মাঠ জুড়ে চার-ছক্কার বন্যা বয়ে গেল। এই ফরম্যাটে তো চার-ছক্কা দেখতেই আম জনতা গ্যালারি ভরায়। দুই তারকার ব্যাটিং দাপটে তাঁদের আশা পূর্ণ হল। চোখের পলকে তৃতীয় উইকেটে ৯৩রান যোগ করলেন দুজন। খেলা তখন ঘুরে গিয়েছে। ঠিক সেই সময় মাত্র ৩০ বলে ৫০ রানে অপরাজিত রইলেন 'স্কাই'। প্রোটিয়াসদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার ইনিংসে মারলেন পাঁচটি চার ও তিনটি বিশাল ছক্কা। সূর্যের দাপতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন রাহুল। রইলেন ৫১ রানে অপরাজিত। খেললেন ৫৬ বল।
আরও পড়ুন : Suryakumar Yadav, IND vs SA: এতদিন ধাওয়ানের ছিল এই অনন্য রেকর্ড! নিজের নামে করে নিলেন 'মিস্টার ৩৬০'!
আরও পড়ুন : South Africa, IND vs SA: ২.৪ ওভারেই প্রথম পাঁচ ডাগআউটে! চূড়ান্ত লজ্জা বাভুমাদের
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে ভারতীয় দলের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনিই। বিপক্ষের বোলারদের থান্ডা মাথায় 'খুন' করা সূর্যের পরিসংখ্যান দেখলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। ৩ ম্যাচে রান ১১৫। সর্বাধিক রান ছিল ৩৬ বলে ৬৯ রান। যেটা হায়দরাবাদে করে গিয়েছিলেন। গড় ৩৮.৩৩। স্ট্রাইক রেট ১৮৫.৪৮। সামগ্রিক ভাবে এই মারকুটে মুম্বইকর জাতীয় দলের হয়ে টি-টিয়েন্টি ফরম্যাটেও সফল। মাত্র ৩২টি ম্যাচে করে ফেলেছেন ৯৭৬ রান। গড় ৩৯.০৪। স্ট্রাইক রেট ১৭৩.৩৫। সঙ্গে জ্বলজ্বল করছে ১টি শতরান ও ৮ টি অর্ধ শতরান।
— BCCI (@BCCI) September 28, 2022
এ ভাবেই ফিরে আসতে হয়। সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন অর্শদীপ সিং (Arshdeep Singh)। বোলিং ফিগার (৪-০-৩২-৩)। গত ৪ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের (Pakistan) বিরুদ্ধে এশিয়া কাপের (Asia Cup 2022) 'ডু অর ডাই' ম্যাচে আসিফ আলির (Asif Ali) লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন। সেই 'অপরাধ'-এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার একশ্রেণির নেটিজেনদের কাছে তিনি হয়ে গিয়েছিলেন 'ভিলেন'। খালিস্তানদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে, এমন তকমা সেঁটে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। যদিও এত নেতিবাচক মন্তব্যের পরেও দমে যাননি পঞ্জাব তনয়। সেটা এ বার তিরুবনন্তপুরমে আয়োজিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নেমে বুঝিয়ে দিলেন অর্শদীপ। তাঁর পেস ও সুইং-এর দাপটে ছারখার প্রোটিয়াসরা।
জসপ্রীত বুমরার (Jasprit Bumrah) ফিরে আসা চোট নিয়ে টিম ইন্ডিয়া চিন্তিত থাকলেও, দক্ষিণ আফ্রিকাকে একাই শেষ করে দিলেন অর্শদীপ । তাঁদের আগুনে পেস ও সুইং-এর দাপটে ৮ উইকেটে মাত্র ১০৬ রানে আটকে গেল প্রোটিয়াসদের ইনিংস। বাঁহাতি পঞ্জাব তনয় নিলেন ৩২ রানে ৩ উইকেট। ২৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করলেন দীপক চাহার (Deepak Chahar)। অক্ষর প্যাটেল একটি উইকেট নিয়েছেন। হর্ষল প্যাটেল নিলেন ২৬ রানে ২ উইকেট। দুই জোরে বোলারের দাপটে টিম ইন্ডিয়ার সামনে টার্গেট দাঁড়াল ১০৭ রানের।
বাইশ গজে যথেষ্ট ঘাস ছিল। এরমধ্যে শিশির ফ্যাক্টর। সেটা মাথায় রেখেছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। তাই টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন 'হিটম্যান'। তাঁর সিদ্ধান্তের মর্যাদা রাখলেন পঞ্জাব তনয়। তবে বিপক্ষকে প্রথম ধাক্কা দেন চোট সারিয়ে ফিরে আসা আর এক পেসার দীপক। প্রথম ওভারের শেষ বলে তেম্বা বাভুমার উইকেট উড়ে যায়। প্রোটিয়াসরা তখন ১ রানে ১ উইকেট।
— BCCI (@BCCI) September 28, 2022
এরপর আরও বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছিল বিপক্ষের জন্য। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারেই ফের জাত চেনালেন অর্শদীপ। তুলে নিলেন বিপক্ষের তিনটি উইকেট। সেখানেই খেলা থেকে হারিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম বলেই বোল্ড হলেন কুইন্টন ডি কক। সেই ওভারের পঞ্চম বলটি বাইরে যাচ্ছিল। রিলে রসোউয়ের মতো ব্যাটার খোঁচা দিতেই বল গিয়ে জমা হয় ঋষভ পন্থের গ্লাভসে। ওভারের শেষ বলটি ছিল ক্রিকেটের পরিভাষায় 'আনপ্লেয়েবেল'। অর্শদীপের ভিতরে আসা 'বানানা সুইং' ভয়ঙ্কর ডেভিড মিলারের স্টাম্প উড়িয়ে দিল। মাত্র ৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন একেবারে ব্যাকফুটে প্রোটিয়াসরা।
সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ৪২ রানে ৬ উইকেট হারায় বিপক্ষ। ফলে একটা সময় মনে হচ্ছিল ১০০ রানের মধ্যেই ইনিংস না শেষ হয়ে যায়। তবে কেশব মহারাজ এবং ওয়েন পার্নেল পালটা লড়াই চালিয়ে দলের রানকে একশ-র বেশিতে পৌঁছে দেন। নিজের শেষ ওভারে ১৭ রান দেন অর্শদীপ। ৩৫ বলে ৪১ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে বোল্ড হন কেশব মহারাজ। পার্নেল করেন ২৪ রান।