FIFA World Cup Final 2022, Gabriel Batistuta: কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা এবং মেসির নাম লেখা থাকবে, দাবি করলেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা
Gabriel Batistuta: সবার মনে একটাই প্রশ্ন, আর্জেন্টিনা কি ৩৬ বছরের খরা কাটাতে পারবে? মেসি কি তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে রাজার মতো মাঠ ছাড়তে পারবেন? ১৮ ডিসেম্বর লুসেল স্টেডিয়ামে চলতি বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে উড়িয়ে হাতে তুলে নিতে পারবেন সোনার সেই মহার্ঘ্য ট্রফি?
সব্যসাচী বাগচী
প্রয়াত দিয়েগো মারাদোনা (Diego Maradona) একবার জনসমক্ষে বলেছিলেন, 'ও আমার দেখা সেরা স্ট্রাইকার!' রাজকীয় ভঙ্গির সঙ্গে যেন তীক্ষ্ম শিকারির দৃষ্টি। সোনালী চুল নিয়ে রাজার ভঙ্গিতে যখন দৌড়তেন প্রতিপক্ষের সাধ্য ছিল না তাঁকে ঠেকানোর। নৃশংস, ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে লক্ষ্যে পৌঁছে গোল সেলিব্রেশনের গর্জন ছিল একেবারে সিংহের মতোই। নয়-এর দশকে ফুটবলের মাঠের সিংহের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। গোল করার ক্ষমতার কারণে নামের সঙ্গে মিলিয়ে তাঁর উপাধী দেওয়া হয় 'বাতিগোল'। অনেকেই 'দ্য লায়ন কিং' অথবা 'অ্যাঞ্জেল' হিসেবেও ডেকেছেন তাঁকে। হ্যাঁ গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার (Gabriel Batistuta) কথা লিখছি।
নেদারল্যান্ডসের (Netherlands) বিরুদ্ধে গোল করে এই বাতিস্তুতাকেই ছুঁয়েছিলেন লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। আর্জেন্টিনার (Argentina) প্রাক্তন তারকা জানতেন, ফর্মে থাকা নীল-সাদা বাহিনীর অধিনায়ক তাঁর রেকর্ড নিজের নামে অনায়সে করে নেবেন। আর তাই হল। ক্রোয়েশিয়ার (Croatia) বিরুদ্ধে সেমি ফাইনালে গোল করে আলবেসেলেস্তেদের ত্রাতা চলে গেলেন শীর্ষে। এমন প্রেক্ষাপটে সবার মনে একটাই প্রশ্ন, আর্জেন্টিনা কি ৩৬ বছরের খরা কাটাতে পারবে? মেসি কি তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে রাজার মতো মাঠ ছাড়তে পারবেন? ১৮ ডিসেম্বর লুসেল স্টেডিয়ামে চলতি বিশ্বকাপের ফাইনালে (FIFA World Cup Final 2022) ফ্রান্সকে (France) উড়িয়ে হাতে তুলে নিতে পারবেন সোনার সেই মহার্ঘ্য ট্রফি? ইমেল-এর মারফতে জি ২৪ ঘন্টাকে সাক্ষাতকার দিলেন ইতিহাসে চতুর্থ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে জোড়া হ্যাট্রট্রিক করা বাতিস্তুতা।
প্রশ্ন: মেগা ফাইনালের আগেই অনেকে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বজয়ী ঘোষণা করে দিয়েছে! আপনার মনে হয় না, এটা মেসি ও তাঁর দলের উপর বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াবে?
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: একেবারেই মনে হয় না। বরং লিও এবং দলের বাকিরা এই অপরিসীম চাপ এনজয় করছে। স্বীকার করুন বা না করুন, এই বিশ্বকাপটা কিন্তু লিও-র নামেই লেখা থাকবে। ও একেবারে ২০ বছরের তরুণের মতো খেলছে। ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ বলতেই যেমন সবার চোখে দিয়েগো মারাদোনার মুখটা ভেসে ওঠে, এই বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা হলে, সবার চোখের সামনে লিও-র হাসি মুখ, ওঁর লড়াকু পারফরম্যান্স ভেসে উঠবে। লিও এখন শুধু আর্জেন্টিনার নয়, গোটা ফুটবলবিশ্বের প্রতিনিধি। ড্রেসিংরুমে, মাঠে যেমন দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তেমনই মাঠের বাইরেও। গোল করছে। করাচ্ছে। নিচে নেমে এসে ডিফেন্সকে সাহায্য করছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করছে। কাতারে লিও-র যে রূপ দেখছি, সেটা আগে কখনও দেখিনি। মেক্সিকো বিশ্বকাপে মারাদোনার মধ্যে যে ক্ষিদে, তাগিদ, উৎসাহ, প্যাশন ছিল। এই লিও-র মধ্যেও সেগুলো খুঁজে পাচ্ছে গোটা আর্জেন্টিনা। আমাদের দেশ বিশ্বাস করছে এবার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান হবে। মাঝে শুধু আর একটা ম্যাচ।
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে মেসি নাকি হ্যামস্ট্রিং-এর চোটে জর্জরিত। গত দু'দিন অনুশীলন পর্যন্ত করেননি। মেগা ফাইনাল খেলতে পারবেন তো?
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: এটা ঠিক যে লিও-র হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট লেগেছে। নেদারল্যান্ডসের পর ক্রোয়েশিয়া, দুটি চাপের ম্যাচ খেলার সময় ওর চোট আরও বেড়েছে। আর তাই লিওনেল স্কালোনি ওর দলের সবচেয়ে বড় ম্যাচ উইনারকে বিশ্রাম দিয়েছিল। এতে তো ভুলের কিছু নেই। লিও-র সামনে এখন একটাই লক্ষ্য। বিশ্বকাপ জয়। সেই লক্ষ্য নিয়েই এখনও পর্যন্ত খেলে গিয়েছে। তাই আমার বিশ্বাস ও পুরো ফিট না হলেও, ফাইনাল খেলবে। আসলে লিও-কে নিয়ে তো খবর বিক্রি হয়। সেটা ইউরোপিয়ান মিডিয়া থেকে ভালো আর কে জানে! তাই তো ওরা ফাইনালের আগে ওর চোটের খবর নিয়ে বাজার গরম করছে।
প্রশ্ন: আচ্ছা এই দলটার সাফল্যের নেপথ্যে লিওনেল স্কালোনির কৃতিত্ব কতটা?
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: লিও যেমন মাঠে নিজের ১০০ শতাংশ উজাড় করে দিচ্ছে, স্কালোনি ঠিক সেই একই কাজ করছে মাঠের বাইরে থেকে। এরসঙ্গে আমি পাবলোর (পড়ুন পাবলো আইমার, সহকারী কোচ) কথাও বলতে চাই। দুজনেই কিন্তু লিও-র এক সময়ের সতীর্থ। স্কালোনি ও লিও, দুজনেই ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ দলে ছিল। তাই ওদের বন্ডিং দেখার মতো। ওদের এই একাত্মবোধ দেখে অনেক কিছু শেখা যায়। মনে রাখবেন লিও শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ না পেলেও, কিন্তু ওর প্রতিপত্তি এতটুকু কমবে না। কিন্তু কোপা আমেরিকা জেতার স্কালোনি এবার খালি হাতে ফিরলে ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে হয়তো আমাদের কিছু কর্তারা প্রশ্ন তুলতে পারে। লিও সেটা খুব ভালোভাবে জানে। তাই দেশের মান, নিজের সম্মানরক্ষা ও প্রিয় বন্ধুর জন্য মাঠে নেমে লড়াই করছে।
প্রশ্ন: মেসির মধ্যে এই বাড়তি তাগিদ কিন্তু গত কয়েকটি বিশ্বকাপে দেখা যায়নি। শেষ বিশ্বকাপ বলেই কি মেসি এতটা খুনে মেজাজে পারফর্ম করছে?
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: শেষ বিশ্বকাপের জন্য লিও বাড়তি চার্জ হয়ে আছে। সেটা আমি আগেও অনেক জায়গায় বলেছি। তবে ওর আগুনে পারমরম্যান্সের আরও বড় কারণ হল স্কালোনি। গত কয়েকটি বিশ্বকাপে লিও-র পারফরম্যান্সটা ঠিক 'মেসিসুলভ' ছিল না। স্কালোনি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ওর সঙ্গে আলোচনা করেছে। দলের সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল ফুটবলার কীভাবে সাহায্য করতে পারে, সেটা জেনেছে লিও-র কাছ থেকেই। তাই বলে আর্জেন্টিনায় লিও-নির্ভরতা কি একেবারে কমে এসেছে? এমনটা নয়। কিন্তু স্কালোনি ওর পূর্বসূরিদের মতো স্রেফ ওকে ঘিরে আর্জেন্টিনার একাদশ সাজায়নি। বরং এই দলের প্রথম একাদশে লিও শুধুই দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ফলে ওকে আলাদা চাপ নিতে হয়নি। স্কালোনি যখন যেভাবে লিও-কে চেয়েছে, লিও নিজেও মাঠে সেভাবেই খেলছে। সাফল্য পাচ্ছে আর্জেন্টিনা।
প্রশ্ন: ভাবতে পেরেছিলেন আপনার রেকর্ড কেউ ভেঙে দেবে?
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: আমার রেকর্ড যদি কেউ ভাঙতে পারে, তাহলে সেটা একমাত্র লিও। তাই ও এই রেকর্ড নিজের নামে করে নেওয়ার পর এতটুকু মন খারাপ হয়নি। লিও এই রেকর্ড ডিসার্ভ করে। আর একটা কথা এখানে জানিয়ে রাখা দরকার। লিও কিন্তু অন্য গ্রহ থেকে আসা কোনও এলিয়েন নয়। ও কিন্তু আমাদেরই মতো রক্ত-মাংসের মানুষ। লিও এবং বাকিদের মধ্যে ফারাক হল ও সবার থেকে ভালো ফুটবল খেলে এবং এই খেলাকে বোঝে।
প্রশ্ন: মেগা ফাইনালে এমবাপে ও মেসির লড়াই কেমন জমবে বলে মনে হয়?
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: সবার মতো আমিও এই ডুয়েল দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। আমার সৌভাগ্য যে লুসেল স্টেডিয়ামে বসে একজন জীবন্ত কিংবদন্তি ও এমবাপের মতো একবার বিশ্বকাপ জেতা তারকার লড়াই দেখতে পাব। তবে ফাইনালে কিন্তু এই দুই ফুটবলার ছাড়া আরও অনেক টুকরো টুকরো মুহূর্ত তৈরি হবে। সেটা আগাম জানিয়ে রাখলাম।
প্রশ্ন: সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর দল কামব্যাক করতে পারবে! সেটা আপনি ভেবেছিলেন?
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: আমরা যারা এই দলের সবাইকে চিনি। তাদের স্কিল জানি, তারা সবাই কামব্যাকের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত ছিলাম।
প্রশ্ন: ফাইনালের স্কোরলাইন কত হবে?
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: আমি জ্যোতিষী নই। তাই স্কোরলাইন বলা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি ফ্রান্স দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না।
প্রশ্ন: মেসির সঙ্গে না খেলতে পারার জন্য আক্ষেপ আছে?
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা: লিও-র সঙ্গে খেলতে না পারার জন্য কোনও আক্ষেপ নেই। আমি তো দিয়েগোর সঙ্গে খেলেছি। দিয়েগোর অধিনায়কত্বে খেলেছি। ওর ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই তো বড় প্রাপ্তি। সবাই যে কেরিয়ারে বিশ্বকাপ জিতবে এমন তো কোথাও লেখা নেই।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)